৪৭ বছর অপেক্ষার পর খেলোয়াড়দের আনন্দ মাটি স্বজনদের ওপর হামলায়
তাণ্ডব শুরু হয় শেষ বাঁশি বাজার পরই।
৪৭ বছর পর ইউরোপিয়ান কোনো প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছে ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেড। নেদারল্যান্ডসের ক্লাব এজেড আলকামারের মাঠে ১-০ গোলের জয় উদ্যাপন করছিলেন ইংলিশ ক্লাবটির খেলোয়াড়েরা। তাদের পরিবার এবং স্বজনেরাও এই জয় উদ্যাপন করছিলেন গ্যালারিতে।
এমন সময় ডাচ ক্লাবটির উগ্রপন্থী সমর্থকেরা গ্যালারিতে ওয়েস্ট হাম খেলোয়াড়দের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের গ্যালারিতে গিয়ে আক্রমণ করে বসেন! তাতে ইউরোপা কনফারেন্স লিগের ফাইনালে ওঠার আনন্দ আর থাকেনি ওয়েস্ট হামের খেলোয়াড়দের। মুহূর্তেই তা ভয় এবং শঙ্কায় পরিণত হয়।
আলকামারের মাঠ এএফএএস স্তাদিওনে কাল রাতে ইউরোপা কনফারেন্স লিগের সেমিফাইনাল ফিরতি লেগে যোগ করা সময়ে পাবলো ফোরনালসের গোলে জেতে ওয়েস্ট হাম। লন্ডনে ঘরের মাঠে প্রথম লেগ ২-১ গোলে জেতায় দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ ব্যবধানের জয়ে ফাইনালে ওঠে ওয়েস্ট হাম।
ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় এর আগে সর্বশেষ ১৯৭৬ সালে উয়েফা কাপ উইনার্স কাপের ফাইনাল খেলেছিল পূর্ব লন্ডনের ক্লাবটি। সেবার হারতে হয় বেলজিয়ান ক্লাব অ্যান্ডারলেখটের কাছে। তারপর এই প্রথম ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার ফাইনালে ওঠার আনন্দটা অন্য রকম হওয়াই স্বাভাবিক।
কিন্তু শেষ বাঁশি বাজার পর সেই আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস জানিয়েছে, মাথায় হুড ও কালো পোশাক পরা কিছু আলকামার সমর্থক গ্যালারির যে অংশে ওয়েস্ট হাম খেলোয়াড়দের আত্মীয়স্বজন বসেছেন, সেখানে গিয়ে হামলা চালান। প্রতিপক্ষ দলের ডাগআউটের ঠিক পেছনেই ওয়েস্ট হাম খেলোয়াড়দের স্বজন ও সমর্থক মিলিয়ে প্রায় ২০০ জন বসেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই স্বজনদের বাঁচাতে সেখানে ছুটে যান ওয়েস্ট হামের কয়েকজন খেলোয়াড়।
অ্যারন ক্রেসওয়েল, ফ্লিন ডাউনেস ও মিকাইল আন্তনিওরা অ্যাডভারটাইজিং বোর্ড টপকে গ্যালারিতে গিয়ে আলকামারের প্রায় ৩০ জন ‘আল্ট্রাস’ সমর্থকের হাত থেকে স্বজনদের রক্ষার চেষ্টা করেন। ওয়েস্ট হামের কোচিং স্টাফ ও ক্রীড়া পরিচালক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
স্টেডিয়ামে থাকা বিবিসির ধারাভাষ্যকার অ্যালিস্টার ব্রুস-বল দাবি করেন, আলকামার সমর্থকদের তিনি ঘুষি মারতে দেখেছেন। ওয়েস্ট হামের কোচ ডেভিড ময়েস বলেছেন, ‘বলতে পারব না কী ঘটেছে এবং কেন ঘটেছে। শুধু এটুকু বলতে পারি, খেলোয়াড়েরা জড়িয়ে পড়েছিল। কারণ, গ্যালারিতে তাদের পরিবার ও বন্ধুরা ছিল। এটাই সম্ভবত তাদের প্রতিক্রিয়া দেখানোর কারণ। তবে ওয়েস্ট হামের সমর্থকেরা কিন্তু সমস্যাটা বাধায়নি।’
গত সপ্তাহে সেমিফাইনাল প্রথম লেগে ওয়েস্ট হামের মাঠে দলটির সমর্থকদের সঙ্গে আলকামারের খেলোয়াড়দের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের ঝামেলা বেধেছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। দ্য টাইমস জানিয়েছে, লন্ডন স্টেডিয়ামের নিরাপত্তাকর্মীরা আলকামার খেলোয়াড়দের কয়েকজন পারিবারিক সদস্য এবং বন্ধুদের আসন থেকে তুলে দিয়েছিলেন। ঘরের মাঠে ফিরতি লেগে সম্ভবত তারই শোধ তোলার চেষ্টা করেছেন আলকামারের কিছু উগ্র সমর্থক। আলকামারের কোচ প্যাসকেল ইয়ানসেন বলেছেন, ‘গত সপ্তাহে যা ঘটেছে, তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। গত সপ্তাহে কী ঘটেছে, তা দেখিনি, কিন্তু আজ (কাল) রাতে যা ঘটল এবং গত সপ্তাহে যা ঘটেছে, তা একই ব্যাপার। লজ্জা লাগছে যে এটা আমাদের স্টেডিয়ামে ঘটল!’
আলকামারের উগ্র সমর্থকেরা গ্যালারির যে অংশে হামলা চালিয়েছেন, সেখানে ডেভিড ময়েসের বাবা ডেভিড সিনিয়রও ছিলেন। ডেভিড ময়েস এ নিয়ে বলেছেন, ‘আমরা পরিবার ও বন্ধুরাও সেখানে ছিল। ঘটনাটা প্রথমে বুঝতে পারিনি কারণ আনন্দে দিশেহারা ছিলাম। নিরাপত্তাকর্মীরা আমাকে মাঠ থেকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু খেলোয়াড়েরা যেন সুরক্ষিত থাকে, আমি সেই চেষ্টায় ছিলাম।’ তবে পুলিশ ও অন্য নিরাপত্তাকর্মীদের হস্তক্ষেপে ১০ মিনিটের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়।