বিশ্বকাপের আগে ‘বোমা’ ফাটালেন রোনালদো
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সুখে নেই, বিভিন্ন ঘটনায় তা আগেই স্পষ্ট ছিল। তবে ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগ, সাবেক সতীর্থ ওয়েইন রুনি আর ক্লাবের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যে কী পরিমাণ ক্ষোভ জমা রেখেছিলেন ভেতরে-ভেতরে, তার বেশ কিছুটা উগরে দিলেন এবার।
পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টেন হাগ ও ক্লাব–সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী পর্তুগিজ তারকা। কোনো রাখঢাক না রেখেই বলেছেন, কোচের প্রতি তাঁর কোনো সম্মান নেই। স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন বিদায় নেওয়ার পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোনো উন্নতি হয়নি বলেও মন্তব্য তাঁর।
চলতি মৌসুমে টেন হাগ ইউনাইটেডে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রোনালদোর সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। প্রাক্-মৌসুম পর্বে রোনালদোর অনুপস্থিতি দিয়ে যার শুরু, সেটি এখন তিক্ততায় পরিণত।
ম্যাচের পর ম্যাচ বেঞ্চে বসে থাকতে থাকতে রোনালদোও এতটাই বিরক্ত যে গত মাসে টটেনহামের বিপক্ষে বদলি হিসেবে নামতে বললে খেলা চলাবস্থায় মাঠ ছেড়েই বেরিয়ে যান তিনি। শাস্তি হিসেবে চেলসির বিপক্ষে পরের ম্যাচে রোনালদোকে স্কোয়াডে থেকে বাদ দেন টেন হাগ। গত ৬ নভেম্বর অ্যাস্টন ভিলা বিপক্ষে ম্যাচের পর শেষ দুটি ম্যাচেও দলে ছিলেন না রোনালদো।
বিশ্বকাপের কারণে ক্লাব ফুটবলে আপাতত দেড় মাসের ছুটি। পর্তুগালের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে রোনালদো চলে যাবেন কাতারে। এমন সময়ে টকটিভির মরগানকে দেড় ঘণ্টার একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রোনালদো। ‘পিয়ার্স মরগান আনসেন্সরড’ নামের অনুষ্ঠানটি বুধ ও বৃহস্পতিবার দুটি পর্বে প্রচার হবে। তার আগে ব্রিটেনের ডেইলি সানে রোনালদোর সঙ্গে আলাপচারিতা নিয়ে লিখেছেন মরগান।
ইউনাইটেড কোচ টেন হাগকে নিয়ে বেশ চাঁছাছোলা মন্তব্য করেছেন রোনালদো, ‘তাঁর জন্য আমার কোনো সম্মান নেই। কারণ, আমাকেও তিনি সম্মান দেখান না। কেউ আমাকে সম্মান না দিলে আমি তাঁকে সম্মান দিই না।’
চলতি মৌসুমের শুরুতে রোনালদো ইউনাইটেড ছাড়ার জন্য চেষ্টা করেছিলেন। তবে যতটা না নিজে চেয়েছেন, তার চেয়ে বেশি কোচই তাঁকে তাড়াতে চেয়েছেন বলে দাবি পর্তুগিজ তারকার, ‘উনি চেয়েছেন আমি চলে যাই। শুধু কোচই নন, ক্লাবের আরও দুই–তিনজন ব্যক্তি আমাকে বের করে দিতে চেয়েছেন। আমি বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছি।’
আরও দুই-তিনজন বলতে ক্লাবের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বোঝাচ্ছেন কি না জিজ্ঞাসা করা হলে রোনালদো বলেন, ‘আমি এসবকে পাত্তা দিই না। মানুষের সত্যিটা শোনা দরকার। হ্যাঁ, আমার মনে হয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা হচ্ছে। মনে হয়েছে, কিছু মানুষ চায় না, আমি এখানে থাকি। শুধু এ বছর না, গত বছরও তারা এ রকমই চেয়েছিল।’
২০০৯ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ড ছেড়ে যাওয়া রোনালদো রিয়াল মাদ্রিদ ও জুভেন্টাস হয়ে ২০২১ সালে আবার ইউনাইটেডে ফেরেন। মূলত জুভেন্টাস ছেড়ে ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। তবে শেষ মুহূর্তে ইউনাইটেডের কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের ফোন পেয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডে ফেরেন তিনি, ‘তিনি আমাকে বললেন, ম্যানচেস্টার সিটিতে যাওয়াটা অসম্ভব। আমি বললাম, ঠিক আছে, বস। আমি তখন হৃদয়ের ডাক শুনেছি।’
তবে এক যুগ পর ক্লাবে ফিরে নতুন কিছুই পাননি জানিয়ে পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী বলেন, ‘স্যার অ্যালেক্স চলে যাওয়ার পর কোনো উন্নতিই হয়নি। কিছুই বদলায়নি। ক্লাবটি যে এমন থাকার কথা না, এটা তিনি ভালো করেই জানেন।’
রোনালদো ইউনাইটেডে ফেরার প্রথম এক সপ্তাহ পর্যন্ত কোচ ছিলেন তাঁরই সাবেক সতীর্থ ওলে গুনার শোলসার। এরপর দায়িত্ব নেন জার্মান কোচ রাল্ফ রাঙ্গনিক। যিনি ক্লাব কোচিং ক্যারিয়ারে একাধিকবার বিরতিতে ছিলেন। এক মৌসুম অন্তর্বর্তী দায়িত্বে থাকা রাঙ্গনিককে নিয়েও রোনালদোর মন্তব্য চাঁছাছোলা, ‘আপনি যদি কোচই না হন, তাহলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বস হন কীভাবে? আমি তো তাঁর কথা আগে শুনিনি।’
মরগানকে দেওয়া দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সাবেক সতীর্থ ওয়েইন রুনিকেও এক হাত নেন রোনালদো। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক রোনালদোর সমালোচকদের একজন। তাঁকে নিয়ে রোনালদো বলেন, ‘আমি জানি না, উনি কেন আমাকে এত তীব্রভাবে সমালোচনা করেন। সম্ভবত উনি খেলা ছেড়ে দিয়েছেন আর আমি এখনো শীর্ষ পর্যায়ে খেলে চলেছি এ জন্য।’
এরপর মুচকি হেসে রোনালদো বলেন, ‘আমি এটা বলতে চাই না যে তাঁর চেয়ে আমি ভালো খেলোয়াড়, যেটা আসলে সত্যি...।’