সিমোন ইনজাগির কি খুব রাগ হচ্ছে? হওয়ারই কথা। ফাইনালের আগেই যে তাঁর দল ইন্টার মিলানকে ‘রানার্সআপ’ বানিয়ে দিয়েছেন অনেকে!
ইতিহাদ থেকে ইস্তাম্বুল—কান পাতলে ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে শুধু ম্যানচেস্টার সিটির নামটাই শোনা যাচ্ছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে স্মরণকালের মধ্যে আর কোনো দল ফাইনালে এ রকম একতরফা ফেবারিট ছিল বলে মনে হয় না।
চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলতে পারাটাই উদ্যাপনের উপলক্ষ। কিন্তু সত্যি বলতে, ইতালিয়ান কোনো ক্লাবের বিপক্ষে ফাইনাল খেলাটা স্বস্তিদায়ক কোনো ব্যাপার নয়। তবে আমরা জানি আমাদের কী করতে হবে এবং সেটাই করার চেষ্টা করব।
বিশ্বের অন্যতম বড় বেটিং প্রতিষ্ঠান আমেরিকার ‘সিজার স্পোর্টসবুক’ ম্যান সিটির পক্ষে বাজির দর রেখেছে -৫০০, ইন্টার মিলানের পক্ষে +৩৫০। তার মানে, আপনি সিটির পক্ষে ৫০০ ডলার বাজি ধরলে ১০০ ডলার পাবেন, ইন্টারের পক্ষে ১০০ ডলার বাজি ধরলে পাবেন ৩৫০ ডলার। ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘অপ্টা’র সুপার কম্পিউটার বলছে, সিটির জয়ের সম্ভাবনা ৭৪.১ ভাগ, ইন্টারের ২৫.৯ ভাগ।
ইস্তাম্বুলে আজ ম্যানচেস্টার সিটিই ট্রফি জিতবে—এমন মনে করেন গ্যারি লিনেকার, ওয়েইন রুনি, থিয়েরি অঁরির মতো সাবেক ফুটবলার ও বোদ্ধারাও। ইন্টারের সমর্থক ও ইতালিয়ান ফুটবলপ্রেমীরা ছাড়া আর কেউ ইন্টারের নাম খুব একটা বলেছেন না।
তবে চরম ‘আন্ডারডগ’ হিসেবে খেলতে নামাটাই হতে পারে ইন্টারের বড় শক্তি। যে শক্তির প্রমাণ এরই মধ্যে তারা দিয়েছেও। নইলে কে ভেবেছিল, বায়ার্ন মিউনিখ ও বার্সেলোনাকে নিয়ে গড়া মৃত্যুকূপ থেকে বেরিয়ে ইন্টার মিলান ফাইনাল পর্যন্ত চলে আসবে! নকআউট পর্বে ইন্টার মিলান একে একে হারিয়েছে পোর্তো, বেনফিকা ও এসি মিলানকে। ফাইনাল পর্যন্ত ১২ ম্যাচের ৮টিতে ইন্টার মিলান কোনো গোল খায়নি।
জানি, আমরা ফেবারিট নই, অনেক কিছুই আমাদের পক্ষে নেই। তবে এ কারণেই ফুটবল আরও বেশি রোমাঞ্চকর। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী একটা দলের বিপক্ষে খেলব, যাদের কোচ কী করতে পারেন, সবাই জানে। কিন্তু আমরা তৈরি।
চ্যাম্পিয়ন লিগে এই মৌসুমের পথচলায় ইন্টার এখন পর্যন্ত কত ফুটবল-পণ্ডিতকেই তো ভুল প্রমাণ করেছে। আরও একবার যে করবে না, এটা কে বলতে পারে! ইতিহাসও তো ইন্টারেরই পক্ষে। সিটি এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন লিগ জিততে পারেনি, অন্যদিকে ইন্টার এরই মধ্যে ইউরোপ–সেরা হয়েছে তিনবার। নিজেদের এই ঐতিহ্য কিছুটা হলেও আজ ইন্টারের প্রেরণা হয়ে থাকবে।
সিটির অবশ্য নিজেদের নতুন করে প্রমাণের কিছু নেই। পেপ গার্দিওলার এই দলটা এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা, এ কথার সঙ্গে দ্বিমত করার মতো লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকরই হবে। সর্বশেষ ছয় মৌসুমে পাঁচবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জেতা সিটির সামনে এখন ইতিহাস গড়ার হাতছানি। লিগের পর এরই মধ্যে এফএ কাপ জিতে ‘ডাবল’ পূর্ণ করেছে সিটি। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ইংল্যান্ডের ইতিহাসে দ্বিতীয় এবং সব মিলিয়ে ইউরোপের মাত্র দশম দল হিসেবে ‘ট্রেবল’ জিতবে তারা।
ম্যানচেস্টার সিটির ট্রফিকেসেও ওই একটা ট্রফিরই অভাব এখন পর্যন্ত। মাঠের পারফরম্যান্সে ওদের সেরা বলে মেনে নিতে খুব বেশি মানুষের আপত্তি না থাকলেও সেই সেরার প্রমাণ হিসেবে আসলে চ্যাম্পিয়নস লিগ ট্রফিটা ওদের লাগবেই। এমনকি পেপ গার্দিওলাও স্বীকার করেছেন, ম্যানচেস্টার সিটির কোচ হিসেবে তিনি শেষ পর্যন্ত সফল না ব্যর্থ, সেটা বিচার করা হবে আসলে তিনি চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতেছেন কি না, তা দেখে।
আজ ফাইনাল জিতলে অবশ্য আরও একটা কীর্তিতে ভাগ বসাবে সিটি। অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার সেই কীর্তিটা সর্বশেষ গড়েছিল ২০১৯-২০ মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখ। ওই মৌসুমে অবশ্য করোনার কারণে কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল হয়ে গিয়েছিল এক লেগের। দুই লেগের মৌসুমে সর্বশেষ অপরাজিত থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ২০০৭-০৮ মৌসুমে।
চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে, সিটি ও ইন্টার—দুই দল কোনো প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে। চ্যাম্পিয়নস লিগের একেবারে ফাইনালে গিয়ে দুই দলের প্রথম দেখা হচ্ছে, এমন সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০০৫ সালে। কাকতালীয়ভাবে সেই ফাইনালটাও ছিল ইস্তাম্বুলে এবং সেই ফাইনালেও মুখোমুখি হয়েছিল একটা ইংলিশ ক্লাব ও একটা ইতালিয়ান ক্লাব।
লিভারপুল ও মিলানের মধ্যে সেই ফাইনাল তো এখন ফুটবল ইতিহাসেরই একটা আলাদা অধ্যায় এবং ‘মিরাকল অব ইস্তাম্বুল’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া সেই ফাইনালে শেষ পর্যন্ত জিতেছিল ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল।
আজ ইস্তাম্বুল কি নতুন কোনো বিস্ময় উপহার দেবে?