পিএসজির সঙ্গে আপসে রাজি নন এমবাপ্পে
কিলিয়ান এমবাপ্পে পিএসজি ছেড়েছেন, কিন্তু প্যারিসের ক্লাবটির সঙ্গে এখনো হিসাব–নিকাশ চুকেনি ফরাসি তারকার। দুই মাস আগে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়া এমবাপ্পে দাবি করেছেন সাবেক ক্লাবের কাছে এখনো সাড়ে ৫ কোটি ইউরো পাওনা তাঁর।
এমবাপ্পে সেই টাকা চেয়েছেনও, তবে পিএসজি এমবাপ্পের দাবি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে সব হিসাব চুকিয়ে ফেলেছে তারা। এ নিয়ে ফ্রেঞ্চ লিগ আঁর আইনি কমিশন মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিলে সেটি প্রত্যাখ্যান করেছেন এমবাপ্পে।
এমবাপ্পের দাবি অনুযায়ী পিএসজিতে শেষ তিন মাসের বেতন দেওয়া হয়নি তাঁকে। পাশাপাশি আনুগত্য বোনাসের শেষ কিস্তিও পরিশোধ করা হয়নি। তবে পিএসজির দাবি, এমবাপ্পে বেতন-বোনাসের অর্থ সমঝোতার মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছেন।
এমবাপ্পের প্রতিনিধিদল বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েট প্রেসের কাছে দেওয়া বিবৃতিতে জানায়, বেতন বোনাস না পাওয়ার বিষয়টি কমিশনকে অবহিত করা হয়েছিল। এর জেরে কী ঘটেছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আজ সকালে মধ্যস্থতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু খেলোয়াড়ের প্রতিনিধি বৈঠকের সময় (মধ্যস্থতার) সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। মধ্যস্থতার অর্থ হচ্ছে টাকা পরিশোধ না করার ঘটনাটি নথিভুক্ত হওয়ার দরকার হবে না, এবং সেটা পে স্লিপের (বেতন হিসাব) বিশ্লেষণে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে।’
আইনি কমিশন এমবাপ্পে-পিএসজির বিবাদ নিরসনে বুধবার শুনানির আয়োজন করে। আড়াই ঘণ্টা স্থায়ী কমিশন শুনানিতে সন্তুষ্টি জানিয়ে পিএসজির পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, এমবাপ্পে আগেই প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে বারবার স্পষ্টভাবে যে কথা দিয়েছিলেন, সেটির প্রতি অবশ্যই সম্মান দেখাতে হবে। পিএসজির দাবি, এমবাপ্পের কোনো অর্থ পাওনা নেই। ক্লাবের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়াবেন না জানানোর পর তাঁকে যখন খেলার বাইরে রাখা হয়, এমবাপ্পে তখন আবার দলে যুক্ত করার বিনিময়ে অর্থ ছাড় দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
সাত বছর পিএসজিতে কাটানো এমবাপ্পে ক্লাবের সঙ্গে সর্বশেষ চুক্তি করেন ২০২২ সালে। চুক্তিটি ছিল দুই বছরের, যেখানে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো যাবে, এই শর্তও ছিল। তবে ২০২৩ সালের জুলাই-আগস্টে এমবাপ্পে জানান, তিনি নতুন কোনো চুক্তি করবেন না। এ নিয়ে বিপদেই পড়ে যায় পিএসজি। কারণ, নতুন চুক্তি না করলে পরের বছরই ফ্রি ট্রান্সফারে চলে যাবেন এমবাপ্পে, তাঁর দলবদল বাবদ ক্লাব কিছুই পাবে না।
অপর দিকে বিক্রি করলে তখনই করতে হবে। ওই সময় এমবাপ্পেকে সৌদি প্রো লিগের দল আল হিলালে ৩০ কোটি ইউরোয় বিক্রির উদ্যোগ নেয় পিএসজি। তবে ফরাসি ফরোয়ার্ড এতে রাজি হননি। ক্লাব-খেলোয়াড়ের ওই দ্বৈরথের মধ্যে এমবাপ্পেকে প্রাক্-মৌসুম সফর থেকে বাদ দেওয়া হয়। খেলানো হয়নি ২০২৩-২৪ মৌসুমের প্রথম ম্যাচেও। পরে ‘গঠনমূলক ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে’ জানিয়ে পিএসজি তাঁকে আবার দলে ফেরায়।
তবে সেই ইতিবাচক আলোচনা যে কার্যকর হয়নি, সেটি এমবাপ্পের ফ্রি এজেন্ট হিসেবে রিয়ালে চলে যাওয়াতেই স্পষ্ট। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে পিএসজি কর্তৃপক্ষের কাছে ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানোর পর এমবাপ্পেকে আবারও কয়েক ম্যাচের জন্য বসিয়ে রাখে ক্লাবটি। বেতন–বোনাসও আটকে দেওয়া হয় ওই সময়ই।
এখন এমবাপ্পে আইনি কমিশনের মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পর সহসাই বিবাদ মেটার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এপির খবরে বলা হয়, মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পর এমবাপ্পে কী করবেন, এখনই বোঝা যাচ্ছে না। ঘটনাক্রম বলছে, এমবাপ্পে-পিএসজি বিবাদ শেষ পর্যন্ত কর্মসংস্থান আদালতে গড়াতে পারে।
পিএসজির দিক থেকে এমবাপ্পেকে নিয়ে হতাশার দিক হচ্ছে, ২০২২ সালে ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় চুক্তির প্রস্তাব দেওয়ার পরও সেটিকে যথাযথ সম্মান না দেখানো। আর এমবাপ্পের হতাশা কর্তৃপক্ষের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় দলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করা।