ফরাসি ফুটবলে হালে যত বিতর্ক
যেকোনো দলের ক্ষেত্রেই বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠাটাকে বড় সাফল্য হিসেবে দেখা হয়। দলটি বিশ্বকাপ যদি না-ও জেতে, তারপরও বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলাটা ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। কিন্তু কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্বাসরুদ্ধকর এক লড়াইয়ের পর আর্জেন্টিনার কাছে টাইব্রেকারে ফ্রান্স হেরে যাওয়ার পর ফরাসি ফুটবলের অন্ধকার দিকটা যেন সামনে চলে আসছে বারবার। প্রকাশ হয়ে পড়েছে দুর্দান্ত খেলে বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠা দলটির নানা সমস্যা, নানা বিতর্ক।
ফ্রান্স ফুটবল সর্বশেষ যে বিতর্কে কাঁপছে, সেটি হচ্ছে কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানকে নিয়ে ফেডারেশন সভাপতি নোয়েল লা গ্রায়েতের বিরূপ মন্তব্য। ব্যাপারটি হজম হয়নি ফরাসি ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারোরই। জিদানের কাছে ক্ষমাই চাইতে হয়েছে গ্রায়েতের। জিদান-গ্রায়েত বিতর্কের মধ্যেই ফ্রান্স ফুটবলকে কাঁপিয়ে দেওয়া সাম্প্রতিক পাঁচটি বিতর্কের দিকে আসুন চোখ ফেরানো যাক...
এমবাপ্পেকে নিয়ে পগবার ‘ডাইনি পূজা’
বিশ্বকাপের কয়েক সপ্তাহ আগে অদ্ভুত এক স্বীকারোক্তি ফ্রান্স ফুটবলকে কাঁপিয়ে দেয়। পল পগবার ভাই মাথিয়াস পগবা দাবি করেন জুভেন্টাস তারকা নাকি ডাইনি পূজা শুরু করেন। তিনি এই অদ্ভুত কাজটি করছেন যেন তাঁর ফরাসি সতীর্থ কিলিয়ান এমবাপ্পে ভালো খেলতে না পারেন। ২০১৯ সালে পিএসজি-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচের আগে তিনি এমনটা করেছিলেন বলে স্বীকার করেন মাথিয়াস পগবা।
ব্যাপারটি নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে এমবাপ্পে অবশ্য পগবার ভাইয়ের এই কথায় কান দিতে চাননি। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আমার সতীর্থের বিরুদ্ধে কোনো কিছুতে অন্য কারও কথায় কান দিতে চাই না।’ তবে এটা ঠিক, মাথিয়াস পগবার সেই অভিযোগের পর এমবাপ্পে ও পল পগবার সম্পর্কটা মোটেও আগের মতো থাকেনি।
করিম বেনজেমার সঙ্গে কোচ দিদিয়ের দেশমের সম্পর্ক
দেশম কখনোই অলিভিয়ের জিরুর জায়গায় বেনজেমাকে অগ্রাধিকার দিতে চাননি। ২০১৮ সালে রাশিয়াতে বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল জিরুর। তবে এবার কাতার বিশ্বকাপের আগে বেনজেমাকে তিনি এড়াতে পারেননি ফ্রান্স দলে। গত মৌসুমে ব্যালন ডি’অর জিতেছেন বেনজেমা, লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগে একের পর এক গোল করেছেন। বেনজেমাকে না নিয়ে উপায় ছিল না দেশমের। কিন্তু বিশ্বকাপের আগে পেশির চোটে পড়ে ফ্রান্স দল থেকে ছিটকে যান বেনজেমা। যদিও তাঁর বদলি হিসেবে কাউকে নেওয়া হয়নি।
বিশ্বকাপের মাঝখানেই সুস্থ হয়ে ওঠেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশম বেনজেমাকে ফেরাননি। শোনা যাচ্ছিল, ফাইনালে বেনজেমা খেলতে পারেন, কিন্তু সেটি হয়নি। বিশ্বকাপের পরপরই শোনা গেল বেনজেমা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন, তিনি খেলতে পারতেন দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই। ফাইনালের পরদিনই রাগে-ক্ষোভে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেন বেনজেমা। তবে খবরে প্রকাশ, বেনজেমা নাকি ফ্রান্স দলের ড্রেসিংরুমে স্বাগত ছিলেন না। বিশ্বকাপের মাঝখানে খেলোয়াড় বিদ্রোহের ভয়েই বেনজেমাকে ফেরানোর ঝুঁকি নেননি দেশম।
বিশ্বকাপের মধ্যে দেশম-পাভার সম্পর্ক
কাতার বিশ্বকাপে দেশমের সঙ্গে বেঞ্জামিন পাভারের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে পাভার খেললেও, তাঁকে আর নামানো হয়নি। অথচ এই পাভারই ২০১৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্স দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় ছিলেন। অভিযোগ ছিল, এই পাভার নাকি দলের ভেতরের কিছু গোপন তথ্য মিডিয়াকে পাচার করেছেন।
ঘটনা এখানেই শেষ নয়, ড্রেসিংরুমে বসেই দলের কৌশলের বিরোধিতাও করেন পাভার। যেটি নিয়ে দেশম তাঁকে কড়া কথাবার্তাই শুনিয়েছেন। দেশম ২০২৬ সাল পর্যন্ত ফ্রান্স দলের কোচের দায়িত্বে থাকছেন। পাভারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তাই হুমকির মুখেই।