আমিনুলকে নিয়ে কী লিখেছিলেন আসিফ নজরুল
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে—এই খবর পুরোনো। আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য ছিলেন বলেই এই মামলা। যেটির পক্ষে–বিপক্ষে অনেক কথাই হচ্ছে। সর্বশেষ যাতে যোগ দিয়েছেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের আইন ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
আজ সচিবালয়ে সাকিবকে নিয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেছেন, ‘আমিনুল তো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্য পুরস্কার বয়ে এনেছিল। এনেছিল না? জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন ছিল। আমিনুলকে যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তখন কি আপনারা প্রশ্ন করেছিলেন?’
আসিফ নজরুল নিজে এ নিয়ে প্রতিবাদ করে প্রথম আলোতে কলাম লিখেছিলেন জানিয়ে তিনি আরও বলেছেন, ‘আমিনুলকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, দিনের পর দিন জামিন দিচ্ছিল না। দিনের পর দিন। আমি নিজে শুধু প্রথম আলোতে কলাম লিখেছি। আপনাদের কাউকে লিখতে দেখি নাই, আপনাদের পত্রিকায়।’
আসিফ নজরুলের দাবি সত্য। পত্রিকায় ২০০৩ সাফ ফুটবলে শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক আমিনুল হকের হাতকড়া পরা ছবি দেখে তিনি গত বছরের ১০ ডিসেম্বর প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতায় একটা কলাম লিখেছিলেন। যেটির শিরোনাম ছিল—ফুটবলার আমিনুল কি ভয়ংকর অপরাধী?
আসিফ নজরুলের লেখাটা শুরু হয়েছিল এভাবে, ‘আমি ফুটবল-ভক্ত মানুষ। ফুটবলের সোনালি দিনে মাঠে গিয়ে খেলা দেখতাম। এখনো ফুটবলের জগতের বড় কোনো খবর থাকলে পড়ে দেখি। তবে কিছুদিন আগে হঠাৎ যা দেখলাম, তা কোনো দিন না জানলে ভালো হতো। ফেসবুকে দেখি, হ্যান্ডকাফ পরা ফুটবলার আমিনুলের ছবি। ২৮ অক্টোবর ঘটনায় নাশকতার দায়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, আদালত তাঁকে রিমান্ডে দিয়েছেন আট দিনের জন্য। এরপর তাঁকে আবারও তিন দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়।
‘কোন আমিনুল তিনি? বাংলাদেশের ফুটবলে সর্বোচ্চ সাফল্য পাওয়া দলের নায়ক তিনি। ২০০৩ সালে প্রথমবারের মতো (এবং এখন পর্যন্ত শেষবারের মতো) সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ফাইনাল খেলায় টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন আমিনুল। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়েছিলেন, এরপর এবং যত দূর মনে করতে পারি, তাঁর নৈপুণ্যের কারণে বিদেশের কিছু ক্লাবেও খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। এখন সেই আমিনুলকে আদালতে আনা হয় হ্যান্ডকাফ পরিয়ে, পুলিশের কাছে রিমান্ডে দেওয়া হয় বারবার।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ—২৮ অক্টোবর তিনি পুলিশকে আক্রমণ, ধ্বংসযজ্ঞ, নাশকতার মতো ভয়ংকর অপরাধ করেছেন বিএনপির একজন নেতা হিসেবে। আমিনুল কি এসব অপরাধ করতে পারেন? হয়তো পারেন। আবার তিনি কি অপরাধ না করেও রাজনৈতিক কারণে মামলার শিকার হতে পারেন? এটিও অবশ্যই হতে পারে। ২৮ অক্টোবর ঘটনার আগে-পরে মামলার নামে যা হচ্ছে, তা বিবেচনায় নিলে দ্বিতীয়টি হওয়ার আশঙ্কা কোনোভাবে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।’
ওই কলামে আমিনুল হকের হেনস্তা নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের নীরব থাকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন তিনি, ‘...আমিনুলের পরিণতি নিয়ে আমাদের অধিকাংশ মূলধারার পত্রিকার কোনো অনুসন্ধান, এমনকি কৌতূহল পর্যন্ত নেই। ফুটবলার হিসেবে দেশের জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনা মানুষটির গ্রেপ্তারে কিছু গণমাধ্যম বরং শিরোনাম করেছে “বিএনপি নেতা আমিনুল গ্রেপ্তার”। একটি পত্রিকা লিখেছে “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে অন্য অনেক নেতার মতো এই মুহূর্তে তাঁরও স্থান কারাগারে”।’
আমিনুলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পর্কে লিখেছিলেন, ‘আমিনুলের বিরুদ্ধে পুলিশ এসব অভিযোগ এনেছে সত্যি, কিন্তু তিনি নাশকতায় “জড়িয়েছেন” এটি কি আমরা কেউ বলতে পারি? কোনোভাবেই পারি না। একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টির ভ্রান্তিগুলো ব্যাখ্যা করি। কখনো বিএনপির শাসনামলে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের সময়ে মাশরাফির মতো কেউ গ্রেপ্তার হলে তিনি নাশকতায় জড়িত—কোনো পত্রিকা কি এটি বলবে? বা বিষয়টি কি অধিকাংশ গণমাধ্যম এড়িয়ে যাবে? আমার ধারণা, তারা এ রকম করবে না। আমিনুলের ক্ষেত্রেও তা-ই হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
সম্ভবত সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ারে অনেক বিতর্কের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘আমিনুলের খেলোয়াড়ি জীবন ছিল নিষ্কলুষ। অন্য কারও মতো জুয়া বা বাজি খেলার অভিযোগ, জোচ্চুরি, অপরাধী চক্রের সঙ্গে সম্পর্ক দূরের কথা, খেলোয়াড়ি জীবনে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ পর্যন্ত কখনো ছিল না তাঁর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশকে বিরল সম্মান এনে দেওয়া এই ক্রীড়াবিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সারবত্তা নিয়ে তাই অন্তত ক্রীড়াবিদ ও সাংবাদিকদের প্রশ্ন তোলা উচিত ছিল।’
আসিফ নজরুলের এই কলাম প্রকাশিত হয়েছিল বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে। এই দিবসের তাৎপর্যের সঙ্গে তিনি আমিনুলের জেল খাটাকে মিলিয়ে লেখাটা শেষ করেছিলেন।