দুই বছর আগে বাংলাদেশের প্রথম সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন কৃষ্ণা রানী সরকার। ২০২২ সালে কাঠমান্ডুতেই ফাইনালে নেপালের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয়ে তাঁর ২ গোল। শামসুন্নাহার জুনিয়রের গোলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পর ৪২ ও ৭৭ মিনিটে গোল ২টি করেন কৃষ্ণা।
সেই কৃষ্ণা এবারের সাফে অনেকটাই আড়ালে। পিটার বাটলারের দলে প্রথম একাদশে সুযোগ পাচ্ছেন না। অবশ্য দেশে থাকতেই কোচ বাটলার বলেছিলেন, পুরো ম্যাচ খেলার মতো ফিটনেস নেই কৃষ্ণার, তাঁকে বদলি হিসেবে ব্যবহার করতে চান কোচ। সেটি তিনি করেছেনও।
পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৬৯ মিনিটে কৃষ্ণাকে বদলি নামানো হয় অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের জায়গায়। দ্বিতীয় ম্যাচে ৮১ মিনিটে নামানো হয় তহুরা খাতুনের বদলি হিসেবে।
আক্রমণে এখন অনেক মুখ বাংলাদেশ দলে। সাবিনা খাতুন আছেন, আছেন শামসুন্নাহার জুনিয়র। তহুরা খাতুনের কথা তো না বললেই নয়, ভারতের বিপক্ষে জোড়া গোল করেছেন। গ্রুপসেরা হয়ে বাংলাদেশ উঠেছে সাফের সেমিফাইনালে। বদলি হিসেবে কোচের হাতে আছেন সাগরিকা ও সানজিদা।
ফলে দলে জায়গা পাওয়ার লড়াইটা এখন কঠিন কৃষ্ণার জন্য। তবে ২৩ জনের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েই কৃষ্ণাকে খুশি মনে হলো। আজ টিম হোটেলে স্বদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে এসে কৃষ্ণা বলেছেন, ‘আমি প্রায় দেড় বছর ফুটবল থেকে দূরেই ছিলাম। তাই দলে ঢুকতে পারাও আমার জন্য দারুণ। কোচ যতটা খেলাচ্ছেন, শতভাগ চেষ্টা করছি।’
বাংলাদেশ দলে শুধু ফরোয়ার্ডরাই নয়, গোল করতে পারেন অন্যরাও। সেটা উল্লেখ করে কৃষ্ণা বলেন, ‘আমাদের দলে বলতে গেলে সবাই গোল করতে পারে। আপনি দেখবেন, কিছু টুর্নামেন্টে ডিফেন্ডাররাও গোল করেছে। আগে আঁখি ছিল। সাফ অনূর্ধ্ব ১৮-এর ফাইনালে মাসুরা গোল করেছে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। আসলে স্কোর করার সামর্থ্য সবার আছে। এবার সাফে ভারতের সঙ্গে আফঈদা গোল করেছে।’
ভারতের বিপক্ষে জয় আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে বাংলাদেশের। সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ যারাই হোক, কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করছেন না কৃষ্ণা। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত পেয়েছে ভুটানকে। তবে ভুটানের জন্য সমীহই বরাদ্দ কৃষ্ণার, ‘ভুটান অনেক উন্নতি করেছে।’ আজ মালদ্বীপকে ১৩–০ গোলে বিধ্বস্ত করে সেটার প্রমাণও দিয়েছেন ভুটানি মেয়েরা।
২০২২ সালের সাফেও ভারতকে হারিয়েছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। কৃষ্ণা মনে করেন সেই জয়ের প্রভাব ছিল এবারও, ‘গত সাফে ভারত বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল। তাদের হারিয়েই গ্রুপসেরা হয়েছে বাংলাদেশ। তাই এবার আমাদের সবার ভেতরে আত্মবিশ্বাস ছিল। কোচ-খেলোয়াড় সবাই সহমত ছিলাম কীভাবে দলটা খেলবে। সে হিসাবে আমরা রেজাল্টও পেয়েছি।’
ভারতের সঙ্গে পাওয়া সাফল্যকে হুট করে পাওয়া বলে ভাবছেন না কৃষ্ণা, ‘ভারত আমাদের আটকাতে ৫টা ডিফেন্স খেলিয়েছে। ওরা আমাদের কঠিন প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখে। আমি জুনিয়র থেকে যখন খেলছি, ভারতের সঙ্গে লড়াই হয়। জুনিয়র টিমে ভারত-নেপালকে অনেকবার হারিয়েছি আমরা।’
গত সাফে কৃষ্ণা ৪ গোল করেছিলেন। ৪ গোল করেন বাংলাদেশের স্বপ্নাও। ভারতের আনজু তামাং ও ভারতের নাদিয়া খানেরও গোল ৪টি। এঁদের ছাপিয়ে ৮ গোল করে গোল্ডেন বুট পেয়েছিলেন সাবিনা খাতুন। এবার গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচেই প্রথম একাদশে খেলা সাবিনার গোল নেই। বদলি নামা কৃষ্ণাও গোলহীন। সাবিনা দলের অধিনায়ক হিসেবে বরাবরের মতোই আলো কাড়ছেন। তবে কৃষ্ণা যেন একটু আড়ালেই ঢাকা পড়ে গেছেন।