এমবাপ্পে ‘থ্রিলার সিরিজে’র নতুন মৌসুম শুরু
পিএসজি-রিয়াল মাদ্রিদের যৌথ প্রযোজনায় আজ থেকে শুরু হলো কিলিয়ান এমবাপ্পে সিরিজের ‘সিজন সিক্স’। নাহ, এটা কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সিরিজ নয়। ২০২১ সালের জুলাই থেকে প্রতি ছয় মাস পরপর দৃশ্যমান বাস্তব জগতে চলছে এই লাইভ সিরিজ। ছয় মাস পরপর শুরু হওয়া এই থ্রিলার সিরিজকে ঘিরে একটাই কৌতূহল, ‘এমবাপ্পে কি পিএসজি ছেড়ে এবার রিয়াল মাদ্রিদে যেতে পারবেন?’ প্রশ্ন তো সহজ, কিন্তু উত্তর? অজানা!
একাধিকবার তো শেষ এপিসোডে (দলবদলের শেষ দিন) জমজমাট লড়াইয়ের পর শেষ হয়েছে দলবদল। যদিও এখন এই সিরিজের কোনো মৌসুমে জিততে পারেনি রিয়াল। অবশ্য যেদিন রিয়াল সফল হবে, সেদিনই শেষ হবে এই জমজমাট সিরিজটি। কিংবা লড়াই থেকে যেকোনো এক দলের সরে দাঁড়ানোর পর যবনিকা পড়বে এই সিরিজটির।
রিয়াল-পিএসজি-এমবাপ্পে ত্রয়ীর নাটকীয়তা বাদ দিলেও গতকাল থেকে শুরু হওয়া দলবদলে চোখ থাকবে আরও কয়েকজনের ওপর। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এবারও যথারীতি আলোচনায় থাকবেন এমবাপ্পেই। এদিকে গতকাল থেকে শীতকালীন দলবদল শুরু হওয়ার সঙ্গে এমবাপ্পের সঙ্গে পিএসজির চুক্তির শেষ ছয় মাসের কাউন্টডাউনও শুরু হয়ে গেল। অর্থাৎ আগামী জুনে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে যেকোনো ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করতে পারবেন এমবাপ্পে।
২৫ বছর বয়সী এমবাপ্পে এরই মধ্যে দুবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছেন, একবার জিতেছেন। জিতেছেন গোল্ডেন বুটের পুরস্কারও। এরই মধ্যে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়দের একজন হিসেবে স্বীকৃতিও পেয়েছেন। তবে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় অর্জন চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা এখনো জেতা হয়নি তাঁর। পিএসজির হয়ে ২০১৭ সাল থেকে চেষ্টা করে গেলেও ফাইনালে গিয়ে হার এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অর্জন।
সেই চ্যাম্পিয়নস লিগের খোঁজে এবং শৈশবের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দিতে এমবাপ্পে চেয়েছিলেন রিয়ালে যেতে। কিন্তু একাধিকবার চেষ্টার পরও শেষ পর্যন্ত প্যারিস থেকে মাদ্রিদের বিমান ধরতে পারেননি। ইউরোপিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এবারই হয়তো এমবাপ্পের পিএসজি ছেড়ে রিয়ালে যাওয়ার শেষ সুযোগ। এবার নয়তো আর কখনোই নয়।
ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাথলেটিক জানিয়েছে, রিয়াল মাদ্রিদ এরই মধ্যে এমবাপ্পেকে পাওয়ার জন্য নতুন করে চেষ্টা শুরু করেছে। তবে এবার সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ক্লাবটির দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু পরিবর্তনও এসেছে। এই দলবদল নিয়ে নিজেদের টালি খাতা হয়তো এবারই বন্ধ করতে পারে রিয়াল। অবশ্য এটাও নতুন কিছু নয়। প্রতিবারই বলা হয়, এখনই শেষ। কিন্তু গ্রীষ্মে আবার নতুন করে নাটক শুরু হয় এবং আবারও কোনো মীমাংসা ছাড়া শেষ হয়।
গত আগস্টের দলবদলের কথায় ধরা যাক। সেবার এমবাপ্পেকে নিয়ে নাটকের শুরুটা হয় ‘পত্রবোমা’ ঘিরে। সেই চিঠিতে এমবাপ্পে জানিয়ে দেন ২০২৪ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি আর চুক্তি নবায়ন করতে চান না। জবাবে পিএসজি জানায়, চুক্তি নবায়ন না করে এক মৌসুম ক্লাবে থাকার সুযোগ নেই। হয় চুক্তি নবায়ন করতে হবে নয়তো দলবদলেই ক্লাব ছাড়তে হয়। এরপর দলবদলের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চলে নাটক। আন্তর্জাতিক সফর থেকেও বাদ পড়েন এই ফরোয়ার্ড। এমনকি তাঁকে পুরো মৌসুমে বসিয়ে রাখার কথাও বলা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এমবাপ্পে থেকে যান পিএসজিতে এবং এখনো খেলে চলেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, এ তো গেল এমবাপ্পে-পিএসজির চলতে থাকা নাটক। এত কিছুর পর রিয়াল এখন কী চায়? ইউরোপের একাধিক সংবাদমাধ্যম বলছে, এখনো এমবাপ্পেকে নিয়ে রিয়ালের আগ্রহ ফুরিয়ে যায়নি। তবে এবার রিয়াল বেশ কঠোর পথে হাঁটার সিদ্ধান্তই নাকি নিয়েছে। এরই মধ্যে নিজের ভবিষ্যৎ ভাবনা জানানোর জন্য মাঝ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে রিয়াল। এমবাপ্পে ইস্যুতে খেলোয়াড়ি এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরিবর্তনও এসেছে রিয়ালে। বিশেষ করে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু সংস্কারের পর ক্লাবটি ব্যয় সীমিত করার পথে হাঁটছে। পাশাপাশি মাদ্রিদ নিজেদের বার্ষিক লাভটাও ধরে রাখতে চায়। তাই এই মুহূর্তে বড় অঙ্ক খরচ করে এমবাপ্পেকে আনলে অর্থনৈতিকভাবে সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
আর মাঠের খেলায় জুড বেলিংহামকে পেয়ে রিয়ালের স্কোয়াড এখন দারুণ ভারসাম্য পেয়েছে। এ মৌসুমে দলটির সমন্বয়ও বেশ চোখে পড়ার মতো। তাই অনেকের মতে, এই মুহূর্তে এমবাপ্পেকে না পেলেও রিয়ালের খুব একটা সমস্যা হবে না। পাশাপাশি এমবাপ্পের অতিরিক্ত ক্ষমতাচর্চাও উল্টো বিপাকে ফেলতে পারে রিয়ালকে। তবে এরপরও এমবাপ্পের মতো কোনো খেলোয়াড়ের প্রভাবকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাঁর আগমন রিয়ালকে আরও অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে পারে।
তাই তাঁকে পাওয়ার সুযোগও হারাতে চায় না মাদ্রিদের ক্লাবটি। তবে সব মিলিয়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আগ্রহ থাকার পরও রিয়ালের প্রস্তাব হয়তো ভিন্ন কিছুই হবে। প্রথমত, অগ্রিম চুক্তি নিশ্চিত করার জন্য হয়তো খুব বেশি সময় হয়তো তাঁকে দেওয়া হবে। পাশাপাশি চুক্তির আগের মতো অত ছাড়ও হয়তো এমবাপ্পে এবার পাবেন না।
অন্যদিকে পিএসজি অবশ্য এখন পর্যন্ত এমবাপ্পে দীর্ঘ মেয়াদে ধরে রাখতে আগ্রহী। তবে এমবাপ্পেকে যে রীতিমতো জোর করে ধরে রাখা হয়েছে, সে সম্পর্কেও নিশ্চয়ই তারা সচেতন। এই মুহূর্তে প্যারিসের ক্লাবটি নাকি এমবাপ্পেসহ এবং এমবাপ্পেকে ছাড়া দুই রকম পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে।
আর এমবাপ্পে কী চান, সেটা সম্ভবত তিনিই ভালো জানেন। এমবাপ্পের কাছের মানুষেরা মনে করেন বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার রিয়ালে গিয়ে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে চান। যদিও রিয়ালের অনেকে মনে করেন, সে ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটি খেলোয়াড়কেই নিতে হবে। এমবাপ্পের দলবদল নিয়ে চলমান নাটক শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামে, সেটি জানতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতেই হচ্ছে।