রোনালদোর দল থেকে ছাঁটাই হওয়া যত কোচ
গুঞ্জন সত্যি হয়ে শেষ পর্যন্ত ছাঁটাই হয়ে গেছেন রুডি গার্সিয়া। ফরাসি এই কোচকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে আল নাসর। এ নিয়ে গত চার বছরের মধ্যে সাতজন কোচকে বিদায় নিতে দেখলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। যার মধ্যে জুভেন্টাসে তিনজন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দুজন আর একজন করে আল নাসর ও পর্তুগাল জাতীয় দলে।
কোচ নিয়োগ আর ছাঁটাইয়ের বিষয়টি দেখে ক্লাব কর্তৃপক্ষ। খেলোয়াড়দের মতপ্রকাশের সুযোগ থাকে কমই। তবে রোনালদোর মতো তারকা ফুটবলারদের কোচ নিয়োগ–ছাঁটাইয়েও মতামত দেওয়ার সুযোগ থাকে। কখনো কখনো থাকে একচ্ছত্র ক্ষমতাও। তবে পাঁচবারের ব্যালন ডি'অর জয়ী রোনালদোর দল থেকে প্রতিবছর কোচ বদল হওয়ায় তাঁর ভূমিকা আছে, নাকি শুধুই কাকতালীয়, এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ফুটবল অঙ্গনে।
গত চার বছরের রোনালদোর দল থেকে যাঁরা বিদায় নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রথম কোচ ছিলেন মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রি। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের মাঝপথে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে জুভেন্টাসে নাম লেখান রোনালদো। এক বছর পরেই জুভেন্টাস ছাড়তে দেখেন আলেগ্রিকে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গ ছিল না। মৌসুম শেষের আগেই ক্লাব কর্তৃপক্ষ এবং আলেগ্রি পারস্পরিক সমঝোতায় চুক্তিতে সমাপ্তি টানেন। টানা পাঁচটি সিরি এ শিরোপা জয় করে হাসিমুখে ক্লাব ছাড়েন আলেগ্রি। ২০২১ সালে ফিরে আসার পর এখনো তিনি জুভেন্টাসের ডাগআউটে আছেন।
২০১৯ সালে আলেগ্রি চলে যাবার পর জুভেন্টাসের কোচ হয়েছিলেন মাওরিসিও সারি। তিন বছরের চুক্তিতে দায়িত্ব নেওয়া এই ইতালিয়ান অবশ্য ১৪ মাসও পূর্ণ করতে পারেননি। ২০২০ সালের আগস্টে জুভেন্টাস চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকে বিদায় নিলে সারিকে ছাঁটাই করে জুভেন্টাস। সারির বিদায়ের পর জুভেন্টাসের কোচের দায়িত্ব পান আন্দ্রে পিরলো। ৯ মাস পর পিরলোকেও বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ।
ওই বছরই জুভেন্টাস ছেড়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরেন রোনালদো। কোচ হিসেবে পান ওলে গুনার সোলশারকে। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে ইউনাইটেডের জার্সিতে সোলশারের সঙ্গে খেলেছিলেন রোনালদো। সতীর্থ থেকে কোচ–খেলোয়াড় সম্পর্কের ব্যাপ্তি ছিল এক বছরের। প্রিমিয়ার লিগে ইউনাইটেডের ছন্দহীনতার জেরে ২০২১ সালের নভেম্বরে চাকরি চলে যায় সোলশারের। পরের মাসে অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন রাল্ফ রাংনিক। জার্মান এই কোচ দুই বছরের জন্য পরামর্শকের দায়িত্ব নেবেন বলেও কথা হয়েছিল। তবে ২০২১–২২ মৌসুম শেষের আগে ক্লাব–রাংনিক দুই পক্ষই আর না এগোনোর সিদ্ধান্ত নেয়।
রোনালদোর সামনে পরবর্তী কোচ বদল হয় পর্তুগালে। কাতার বিশ্বকাপের পর পর্তুগাল জাতীয় দলের কোচের পদ থেকে বরখাস্ত হন ফার্নান্দো সান্তোস। সর্বশেষ আল নাসরে বিদায় নিতে দেখলেন রুডি গার্সিয়াকে।
বিদায় নেওয়া সাত কোচের মধ্যে কারও কারও সঙ্গে রোনালদোর সম্পর্কের দূরত্ব ছিল স্পষ্ট। কাতার বিশ্বকাপের আগে পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সরাসরিই রাংনিককে ‘কোনো কোচই না’ বলে মন্তব্য করেছিলেন রোনালদো। একই সাক্ষাৎকারে ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগেরও সমালোচনা করেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে বেঞ্চে বসিয়ে রাখায় ক্ষুব্ধ ছিলেন সান্তোসের ওপরও। সর্বশেষ গার্সিয়ার সঙ্গেও মিলছিল না তাঁর। ফুটবলীয় কৌশল নিয়ে মাঠে ও মাঠের বাইরে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন একাধিকবার। এ নিয়ে কোচের বিরুদ্ধে আল নাসর কর্তৃপক্ষের কাছে রোনালদো অভিযোগও দিয়েছেন বলে জানায় সৌদির সংবাদমাধ্যম।
জুভেন্টাসের তিন কোচের সঙ্গেও সম্পর্ক নিয়ে কথা উঠেছে একাধিকবার। এর মধ্যে মাওরিসিও সারির সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল জানিয়েছিল ফুটবল–ইতালিয়া। রোনালদোকে সামলানো কঠিন বলেও মন্তব্য করেন সারি। তবে আলেগ্রি ও পিরলোর সঙ্গে রোনালদোর সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন শোনা গেছে কমই; বরং মরগানের সাক্ষাৎকারে নিজের দেখা সেরা কোচদের মধ্যে আলেগ্রির নামও উল্লেখ করেছিলেন।