ফুটবলে সবচেয়ে সুন্দর ও আনন্দের দৃশ্যটি নিশ্চয়ই গোল করার। অবশ্য গোলটা যদি আপনার প্রিয় দল হজম করে, তবে বিষয়টা ভিন্ন। গোল করার আনন্দ তাই যতটা তীব্র, গোল হজম করার হতাশাও ততটাই গভীর। আর কেউ যদি গোল খাওয়ায় নতুন কোনো রেকর্ডই করে বসে, তবে বিষয়টা আরেকটু বেশি বিব্রতকর। প্রিমিয়ার লিগে এ মৌসুমে তেমনই এক বিব্রতকর ঘটনা ঘটেছে, যা ভেঙে দিয়েছে ৩০ বছরের পুরোনো একটি রেকর্ডও।
ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ স্তর প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পারাটা যেকোনো দলের জন্য সৌভাগ্যের। কিন্তু প্রতি মৌসুম শেষে তিনটি দলকে অবনমিত হতে হয় বেদনা নিয়ে। শেফিল্ড ইউনাইটেডের জন্য এবার সেই বেদনা যেন দিগুণ হলো। গোল খাওয়ার নতুন রেকর্ডটি যে তারাই গড়েছে। যেখানে তারা পেছনে ফেলেছে সুইনডন টাউনকে।
আজ থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৯৩–৯৪ মৌসুমে বিব্রতকর এই রেকর্ড গড়ে ১০০ গোল হজম করেছিল সুইনডন। তারা এই রেকর্ড গড়েছিল ৪২ ম্যাচের লিগে, যা এবার ৩৮ ম্যাচের লিগে ভেঙে দিয়েছে শেফিল্ড। যারা এ মৌসুমে ৩৭ ম্যাচেই হজম করেছে ১০১ গোল। এখনো আরও এক ম্যাচ হাতে আছে শেফিল্ডের। এর ফলে রেকর্ডটি আরও বড়ও হতে পারে।
শেফিল্ড ইউনাইটেড (২০২৩–২৪)
১০১ গোল
ম্যাচপ্রতি গোল ২.৭৩
এ মৌসুমে গোল খাওয়ার রেকর্ড ভাঙার সম্ভাবনাটা আরও আগেই জাগিয়েছিল শেফিল্ড। প্রথম ২৩ ম্যাচেই তারা হজম করেছিল ৫৯ গোল। তখন তারা ম্যাচপ্রতি গোল খেয়েছিল ২.৫৬ করে। মৌসুমের বাকি সময়েও এ ধারা থেকে বিচ্যুত হয়নি শেফিল্ড। ৪ মে নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে ৩–১ গোলে হারের পথে তারা স্পর্শ করে এক শ গোলের বিব্রতকর মাইলফলক। এর মধ্যে দিয়ে সুইনডনের পর প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের দ্বিতীয় দল হিসেবে এক শ গোল হজম করে শেফিল্ড।
তবে গতকাল রাতে এভারটনের বিপক্ষে ১–০ গোলে হেরে সুইনডনকেও ছাড়িয়ে গেল শেফিল্ড। ৩৭ ম্যাচে ক্রিস ওয়াইল্ডারের দল গোল খেয়েছে ১০১টি। অর্থাৎ এ মৌসুমে শেফিল্ড ম্যাচপ্রতি ২.৭৭টি করে গোল হজম করেছে, যা প্রিমিয়ার লিগের বর্তমান সংস্করণে সবচেয়ে বেশি। আর ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবল বিবেচনা করলে ১৯৬৩–৬৪ মৌসুমে ইপসউইচ টাউনের ২.৮৮ গোল হজমের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সেবার অবশ্য ইপসউইচ হজম করেছিল ১২১ গোল।
সুইনডন টাউন (১৯৯৩–৯৪)
১০০ গোল,
ম্যাচপ্রতি গোল ২.৩৮
বর্তমান সংস্করণের প্রিমিয়ার লিগ শুরুর এক মৌসুম পরই ১০০ গোল হজমের লজ্জায় পড়ে সুইনডন। গত তিন দশকে এই রেকর্ড ভাঙার লজ্জা পেতে হয়নি কোনো দলকে। শেষ পর্যন্ত এ মৌসুমে শেফিল্ডের কারণে কিছুটা লজ্জা কমল সুইনডনের। ২২ দলের প্রিমিয়ার লিগে সেবার ৪২ ম্যাচে এই গোল হজম করে সুইনডন। সে মৌসুমে সুইনডন জয় পেয়েছিল মাত্র ৫ ম্যাচে। সেবার সব মিলিয়ে মাত্র ৪ ম্যাচে ক্লিনশিট রাখতে পেরেছিল তারা। সে মৌসুমে সুইনডন ৫ গোল করে হজম করেছিল লিভারপুল ও সাউদাম্পটনের কাছে।
ইপসউইচ টাউন (১৯৯৪–৯৫)
৯৩ গোল
ম্যাচপ্রতি গোল ২.২১
ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ স্তরের ফুটবলে গোল খাওয়ায় ইপসউইচ টাউনের জুড়ি মেলা ভার। সুইনডন টাউনের পর দ্বিতীয় স্থানটি এত দিন দখলে ছিল তাদের। ১৯৯৪–৯৫ মৌসুমে ৯৩ গোল হজম করেছিল তারা। যেখানে ম্যাচপ্রতি তারা গোল খেয়েছিল ২.২১ করে। সেবার মাত্র ৩ ম্যাচে ক্লিনশিট রাখতে পেরেছিল তারা। আগামী মৌসুমে ইপসউইচ টাউনকে আবার দেখা যাবে প্রিমিয়ার লিগে। এবার গোল খাওয়ার নতুন কোনো রেকর্ড আর না গড়লেই হয়!
ডার্বি কাউন্টি (২০০৭–০৮)
৮৯ গোল
ম্যাচপ্রতি গোল ২.৩৪
ডার্বি কাউন্টি সেবার প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসের সবচেয়ে বাজে ফল গড়েছিল। মৌসুমজুড়ে তারা সংগ্রহ করেছিল মাত্র ১১ পয়েন্ট। যেখানে দলটির জালে বল জড়িয়েছিল ৮৯ বার। ৩৮ ম্যাচের মৌসুমে সেবার ডার্বি কাউন্টি গোল খেয়েছিল ২.৩৪ করে, যা কিনা ম্যাচপ্রতি গোল খাওয়ার হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ফুলহাম (২০১৩–১৪)
৮৫ গোল
ম্যাচপ্রতি গোল ২.২৪
প্রিমিয়ার লিগে এক মৌসুমে সবেচেয়ে বেশি গোল খাওয়ায় সেরা পাঁচে থাকলেও ফুলহাম কিন্তু সবার নিচে থেকে শেষ করেনি। যদিও তাতে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি। ১৯ নম্বর দল হিসেবে ঠিকই অবনমিত হয়ে যায় ফুলহাম। সেবার ম্যাচপ্রতি ২.২৪ করে ফুলহাম হজম করে ৮৫টি গোল। সেবার ফুলহাম সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হারটি দেখেছিল হাল সিটির বিপক্ষে। ডিসেম্বরের সে ম্যাচে ৬–০ গোল হজম করেছিল তারা।