বাফুফে নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, সন্দেহ ক্রীড়া উপদেষ্টার
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) বেশ কয়েকবার গেছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ক্রিকেটের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের সঙ্গেও জড়িয়েছেন। তবে উপদেষ্টা হওয়ার আড়াই মাসের মাথায় আজই প্রথম বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) যান তিনি।
ক্রীড়া উপদেষ্টার পরিদর্শনের সময় উপস্থিত ছিলেন না বাফুফের বিদায়ী নির্বাহী কমিটির কোনো সদস্য। তিনি বাফুফের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। পরে বাফুফের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, ফেডারেশনে আসার আগেই তিনি বলে দিয়েছিলেন আসছে নির্বাচনের কোনো প্রার্থী, এমনকি বিদায়ী নির্বাহী কমিটির কোনো সদস্য যেন তাঁর এই পরিদর্শনের সময় না থাকেন।
আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন। ক্রীড়া উপদেষ্টা অবশ্য এই নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক হতে পারছেন না। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু হবে, সেটি নিয়েই সন্দেহ আছে তাঁর। সেই ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে, ‘আগের কাউন্সিলরদের প্রায় সবাইকে স্ব স্থানে বহাল রেখে নির্বাচনের বিপক্ষে আমি।’
তবে বাফুফে যেহেতু একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং তারা ফিফার নিয়মে চলে, ক্রীড়া উপদেষ্টা সেই প্রক্রিয়াকে সম্মান জানাচ্ছেন, ‘আগের যে রাজনৈতিক দুষ্টচক্র খেলাধুলাকে নিয়ন্ত্রণ করত, যাঁদের সঙ্গে খেলাধুলার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই, তাঁরা এখনো জেলা ফুটবল সংস্থায় রয়ে গেছেন। আমার জানামতে, বেশ কয়েকজন জেলার কাউন্সিলর পলাতক আছেন। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। শুনেছি, কোনো কোনো প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এই কারণে নির্বাচন কতটুকু প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, জানি না।’
আগের যে রাজনৈতিক দুষ্টচক্র খেলাধুলাকে নিয়ন্ত্রণ করত, যাঁদের সঙ্গে খেলাধুলার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই, তাঁরা এখনো জেলা ফুটবল সংস্থায় রয়ে গেছেন।আসিফ মাহমুদ, ক্রীড়া উপদেষ্টা
বাফুফে নির্বাচনের অতীত ঘটনাবলি, দেশের ফুটবলে পৃষ্ঠপোষকদের না আসা, ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া নিয়েও কথা বলেছেন আসিফ মাহমুদ। ফুটবলে পৃষ্ঠপোষক না আসা নিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টার মন্তব্য, ‘সবাই ক্রিকেটে টাকা ঢালতে চায়, ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চায়। কিন্তু অন্য খেলায় যেতে চায় না। বাফুফে নিয়ে তো এমন কথাও ছিল যে এখানে স্পনসরের ৩০ শতাংশ অর্থ অন্য কারও পকেটে চলে যাওয়ার পর বাকি ৭০ শতাংশের ব্যবহার হতো। এ রকম হলে তো কেউ আসবে না। বাংলাদেশের ফুটবল নিয়ে যে উন্মাদনা আছে, ফুটবলের প্রচার ও প্রসার ক্রিকেটের চেয়েও বেশি হওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি।’
ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার ব্যাপারে আসিফ মাহমুদের কথা, ‘বাংলাদেশের ফুটবলে যে উন্মাদনা একটা সময় ছিল, এখনো আছে। গ্রামের মাঠগুলোতে ফুটবলও হয়, ক্রিকেটও হয়, ক্রিকেট হলে ২০ জন দর্শকও থাকে না, ফুটবলে থাকে হাজার হাজার দর্শক। গাছে উঠে খেলা দেখে, এসব আমরা মূলধারায় নিয়ে আসতে পারিনি। এটার জন্য দায়ী ফেডারেশনের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরাই।’
দেশের ফুটবলে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলবেন আসিফ মাহমুদ, ‘সরকারের তরফ থেকে ক্রীড়াক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলব। বর্তমানে ক্রীড়াক্ষেত্রে যে বিনিয়োগ, সেটা খুব কম। এর পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ আনার ব্যাপারে আমাদের কাজ শুরু করতে হবে। আসলে বিনিয়োগের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশটাও জরুরি।’
দেশের ফুটবলে তৃণমূল থেকে ফুটবলার তুলে না আনার জন্য ফুটবল যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেটির জন্য জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন বা ডিএফএগুলোকে দায়ী করেছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা, ‘আমরা জেলার টুর্নামেন্টগুলো আবার চালু করব। এই দায়িত্ব ডিএফএর। তারা বাফুফের অধীন। এ ক্ষেত্রে পুরো ব্যর্থতার দায়টা আমি বাফুফেকেই দেব।’
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কারকাজ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা, ‘বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংস্কারকাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৯৯ কোটি থেকে বেড়ে ১৫৮ কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। এটা নিয়ে আগে ফিজিবিলিট স্টাডিও করা হয়নি যে এই সংস্কারের লোড স্টেডিয়ামটি নিতে পারবে কি না। আমার কাছে সংস্কারকাজের মেয়াদ বাড়ানোর ফাইল এসেছিল। আমি বলে দিয়েছি, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। ফ্লাড লাইটের কাজ হয়তো শেষ হবে না, একটু সময় লাগবে।’
আগামী দুই–এক সপ্তাহের মধ্যেই ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের জন্য গঠিত সার্চ কমিটি বিভিন্ন ফেডারেশনে এডহক কমিটি দিয়ে দেবে বলেও জানিয়েছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।