নেইমারকে কিনে খরচে সবাইকে ছাড়িয়ে গেল আল হিলাল
এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে ফুটবলের চিরকালীন সব হিসাব–নিকাশই যেন বদলে যাচ্ছে। যে ইউরোপকে ঘিরে জমে উঠত ফুটবলের সব রোমাঞ্চ ও উত্তেজনা, তা যেন এখন জায়গা হারানোর আশঙ্কায় রীতিমতো কাঁপছে। এরই মধ্যে রোনালদো–নেইমার–বেনজেমাদের মতো অনেক হাই প্রোফাইল তারকা পাড়ি জমিয়েছেন সৌদি ক্লাবগুলোতে। সালাহ–আলিসনদের মতো আরও অনেক তারকা আছেন সৌদি যাওয়ার পথে।
ইউরোপকে পাল্লা দেওয়ার জন্য সৌদি ক্লাবগুলো রীতিমতো টাকার থলে নিয়ে মাঠে নেমেছে। এমনকি নেট খরচের (বেচাকেনা মিলিয়ে) দিক থেকে শীর্ষেও উঠে এসেছে সৌদি ক্লাব আল হিলাল। চূড়ায় ওঠার পথে আল হিলাল পেছনে ফেলেছে আর্সেনাল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবকে।
এবারের দলবদলে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি খরচ করেছে চেলসি। দলবদলের বাজারে ১৭ খেলোয়াড় কিনতে তারা খরচ করেছে ৩২ কোটি ৩০ লাখ ইউরো। বিপরীতে চেলসির আয়ও অবশ্য কম নয়। ১৯ খেলোয়াড় বিক্রি করে চেলসি আয় করেছে ২৫ কোটি ৪৯ লাখ ইউরো। যোগ–বিয়োগের পর চেলসির পকেট থেকে বেরিয়েছে কেবল ৬ কোটি ৮১ লাখ ইউরো। এরপর দ্বিতীয় স্থানে আছে আল হিলাল। যারা এখন পর্যন্ত ১২ খেলোয়াড় কিনতে খরচ করেছে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। যেখানে শুধু নেইমারের জন্য তাদের খরচ ৯ কোটি ইউরো।
নেইমার ছাড়া অন্য যেসব উল্লেখযোগ্য খেলোয়াড়কে আল হিলাল কিনেছে তাঁরা হলেন ম্যালকম, রুবেন নেভেস, মিলানকোভিচ সাভিচ ও কালিদু কুলিবালি। কিন্তু বিক্রির দিক থেকে আল হিলাল অনেক পিছিয়ে আছে। তারা ১০ খেলোয়াড়কে বিক্রি করে পেয়েছে মাত্র ১৩ লাখ ৮০ হাজার ইউরো। এখন পর্যন্ত আল হিলালের নেট খরচ হয়েছে ২৬ কোটি ৬৬ লাখ ইউরো। যা কিনা আয়–ব্যয় মিলিয়ে করা খরচের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আল হিলালের পর তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে আর্সেনাল। কয়েক দিন আগপর্যন্ত আর্সেনালই অবশ্য শীর্ষে ছিল। কিন্তু নেইমারকে কেনার পর গানারদের ছাড়িয়ে গেছে এশিয়ার সফলতম দলটি। আর্সেনাল এই মৌসুমে খেলোয়াড় কিনতে খরচ করেছে ২৩ কোটি ৪৯ লাখ ইউরো। এই অর্থে সব মিলিয়ে ১১ জন খেলোয়াড় কিনেছে মিকেল আরতেতার দল। বিপরীতে আর্সেনাল ছেড়ে গেছেন ৬ জন খেলোয়াড়। যাদের বিক্রি করে আর্সেনালের পকেটে ঢুকেছে ৩ কোটি ৪১ লাখ ইউরো। যেখানে তাদের নেট খরচ ২০ কোটি ইউরোর বেশি। এ মৌসুমে আর্সেনালে আসা উল্লেখযোগ্য তারকারা হলেন ডেকলান রাইস, কাই হাভার্টজ, জুরেন টিম্বার ও দাভিদ রায়া।
এ তালিকায় তিন নম্বরে আছে আরেক ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সাফল্যের জন্য মরিয়া ‘রেড ডেভিলস’রা দলবদলে খরচ করেছে ১৯ কোটি ১৭ লাখ ইউরো। এ টাকায় ৭ জন খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে তারা। ইউনাইটেডের কেনা সেই সাত খেলোয়াড়ের উল্লেখযোগ্য হলেন আন্দ্রে ওনানা, ম্যাসন মাউন্ট, রাসমুস হয়লুন্দ। আর খেলোয়াড় বিক্রি করে ইউনাইটেডের আয় ৩ কোটি ৭৮ লাখ ইউরো। সব মিলিয়ে ১৫ কোটি ৩৮ লাখ ইউরো।
নেট খরচের দিক থেকে চার নম্বরে আছে রিয়াল মাদ্রিদ। ৮ জন খেলোয়াড়কে কিনতে রিয়াল খরচ করেছে ১২ কোটি ৯৫ লাখ ইউরো। আর খেলোয়াড় বিক্রি করে পেয়েছে ৪০ লাখ ইউরো। ‘লস ব্লাঙ্কোস’ শিবিরের নেট খরচ ১২ কোটি ৫৫ লাখ। এ মৌসুমে তারা জুড বেলিংহাম, আর্দা গুলের, ফ্রান গার্সি এবং কেপা আরিজাবালাগার মতো খেলোয়াড়দের কিনে এনেছে।
তালিকার ৫ নম্বরে আছে আরেক সৌদি ক্লাব আল আহলি। এবারের দলবদলে ইউরোপ থেকে বেশ কজন শীর্ষ তারকাকে দলে ভিড়িয়েছে দ্বিতীয় স্তর থেকে ওঠে আসা এই ক্লাবটি। রিয়াদ মাহরেজ, রবার্তো ফিরমিনো, এদোয়ার্দো মেন্দি এবং ফ্রাঙ্ক কেসির মতো তারকাদের পেছনে আল আহলি খরচ করেছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ইউরো। আর খেলোয়াড় বিক্রি থেকে কোনো টাকা না পাওয়ায় তাদের পকেটে কোনো টাকা ঢোকেনি। তাই নেট খরচের অঙ্কটা ১২ কোটি ৩২ লাখই থেকে গেছে।