ইউরোয় ইয়ামালের সামনে আরও রেকর্ডের হাতছানি
ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ‘এক্স’ হ্যান্ডল থেকে করা পোস্টে লেখা হয়েছে—‘দ্য স্টার বয় ইজ আ হিস্টরি মেকার’। বাংলায় অর্থটা দাঁড়ায়—তারকা ছেলেটি ইতিহাস গড়ছে।
আক্ষরিক অর্থেই ঠিক তা–ই। ১৬ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল মাঠে নামলেই যেন কোনো না কোনো ক্ষেত্রে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ড গড়েন! আর এই পথে গতকাল রাতে ইউরোয় ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে স্পেনের ৩-০ গোলে জয়ের ম্যাচে পোলিশ মিডফিল্ডার ক্যাসপার কোজলফস্কিকে পেছনে ফেলে ইউরোয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ডও গড়েছেন ইয়ামাল।
কোজলফস্কি ফুটবলে তেমন পরিচিত কোনো নাম নয়। ব্রাইটনের এই মিডফিল্ডার গত বছর ধারে যোগ দেন ডাচ ক্লাব ভিত্তেসেতে। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইউরোয় ১৭ বছর ২৪৬ দিন বয়সে মাঠে নেমে টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ড গড়েন কোজলফস্কি। অবশ্য স্পেনের ইউরো স্কোয়াডে ইয়ামাল ডাক পাওয়ার পর থেকে একরকম নিশ্চিতই ছিল, কোজলফস্কির রেকর্ড ভাঙতে চলেছে। বার্লিনে কাল ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে স্পেন একাদশের হয়ে ১৬ বছর ৩৩৮ দিন বয়সী ইয়ামাল মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই তাই ভাঙে ওই রেকর্ড।
করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ইউরো অনুষ্ঠিত হয় পরের বছর। আর সে টুর্নামেন্টেই দুবার ভাঙতে দেখা যায় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ড। ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচে ১৭ বছর ৩৪৯ দিন বয়সে মাঠে নেমে ইউরোয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ডটি নেদারল্যান্ডসের জেত্রো উইলিয়ামসের কাছ থেকে কেড়ে নেন ইংল্যান্ড তারকা জুড বেলিংহাম। ২০১২ ইউরোয় ১৮ বছর ৭১ দিন বয়সে মাঠে নেমে বেলজিয়াম কিংবদন্তি এনজো শিফোকে পেছনে ফেলেছিলেন উইলিয়ামস। ১৯৮৪ ইউরোয় সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ১৮ বছর ১১৫ দিন বয়সে মাঠে নেমে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ড গড়েছিলেন শিফো।
যাহোক, ২০২১ সালে ইউরোয় বেলিংহাম সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ড গড়ার ৬ দিন পর একই টুর্নামেন্টে স্পেনের বিপক্ষে মাঠে নেমে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ড গড়েছিলেন কোজলফস্কি। পরের আসরে সেটি নিজের করে নিলেন ইয়ামাল।
খুব অল্প বয়সে পেশাদার ফুটবলে অভিষেক হওয়ায় ইয়ামাল বিভিন্ন পর্যায়ে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড়ের রেকর্ড ভেঙে চলেছেন। গত বছর এপ্রিলে বার্সেলোনার মূল দলের হয়ে অভিষেক তাঁর। ১৯২২ সালে আরমান্দো সাগির পর বার্সার সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে মূল দলে খেলার কীর্তি হয় তাঁর।
এ ছাড়া লা লিগায় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামা, গোল করা, গোল বানানোর (অ্যাসিস্ট) রেকর্ড গড়ার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার কীর্তিও গড়েছেন। স্পেনের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় এবং জাতীয় দলের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে গোলের রেকর্ডও তাঁর। ইউরো বাছাইয়ের ইতিহাসেও সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোলের রেকর্ড ইয়ামালের।
গতকাল শুধু ইউরোর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নামার রেকর্ডই গড়েননি, দানি কারবাহলকে দিয়ে স্পেনের তৃতীয় গোলটি করিয়ে আরেকটি রেকর্ড গড়েছেন ইয়ামাল। ইউরোর মূল পর্বে সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে গোল বানানোর (অ্যাসিস্ট) পথে ইয়ামাল ভেঙেছেন শিফোর রেকর্ড। ১৯৮৪ ইউরোয় সাবেক যুগোস্লাভিয়ার বিপক্ষে ১৮ বছর ১১৫ দিন বয়সে গোল বানিয়েছিলেন বেলজিয়ামের হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলা কিংবদন্তি।
গতকাল জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে স্পেনের কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তে ইয়ামালকে নিয়ে বলেছেন, ‘সে রেকর্ড ভেঙেই চলছে। বেড়ে ওঠার পথে সে আরও পরিণত হচ্ছে এবং প্রতিদিনই উন্নতি করছে। সে বড় খেলোয়াড় হয়ে ওঠার পথে। তবে এখনো তরুণ, আমাদের তাই ধৈর্য ধরতে হবে।’
এবার ইউরোয় ইয়ামালের সামনে আরও রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে। গোল করলেই সুইজারল্যান্ডের ইয়োলান ফনলান্তেনকে পেছনে ফেলে ইউরোর ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতা হবেন। ২০০৪ ইউরোয় ১৮ বছর ১৪১ দিন বয়সে গোলের রেকর্ড গড়েছিলেন ফনলান্তেন। চার দিন আগেই গড়া ওয়েইন রুনির রেকর্ড ভেঙেছিলেন তিনি।
গত মৌসুমে বার্সার হয়ে ৫০ ম্যাচে ৭ গোল করার পাশাপাশি ১০টি গোল বানানো ইয়ামাল যদি স্পেনের হয়ে এবার ইউরোর নকআউট পর্বে উঠতে পারেন, তবে সেখানেও রেকর্ড গড়বেন। ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত ইউরোর নকআউট পর্বে ১৮ বছর ৪ দিন বয়সে খেলা বেলিংহামের দখলে এই রেকর্ড। আর স্পেন যদি ফাইনালে উঠতে পারে এবং ইয়ামাল যদি ফাইনালে খেলেন, তবে সেখানেও রেকর্ড গড়বেন। ১৮ বছর ৩২৮ দিন বয়সে ইউরোর ফাইনালে খেলার রেকর্ড রেনাতো সানচেজের।