খেলার সূচি
দল পরিচিতি
নেদারল্যান্ডস: ‘কমলা রং’ এবার যেতে চাইবে দূর, বহুদূর
১৯৭৪, ১৯৭৮, ২০১০—তিনটি ফাইনাল, তিনবারই হার। নেদারল্যান্ডসের বিশ্বকাপ জিততে না–পারা ফুটবলের চিরন্তন দুঃখগাথাগুলোর একটি। টোটাল ফুটবলের জনকদের এই একটিমাত্র অপ্রাপ্তি যুগের পর যুগ বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। চিরতারুণ্যের প্রতীক কমলা তাই ফুটবলে হয়ে গেছে বেদনার রং।
১৯৫৮ থেকে ১৯৭০—টানা চার বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। এরপর সে দলকেই বদলে দেন টোটাল ফুটবলের অগ্রদূত ইয়োহান ক্রুইফ। শুধু তা–ই নয়, দলের সব সতীর্থের ব্যক্তিত্বেও পরিবর্তন আনেন তিনি। ১৯৭৪ সালে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের মতো পরাশক্তিদের বিদায় করে ফাইনালে ওঠে ক্রুইফের নেদারল্যান্ডস। কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে অতি আত্মবিশ্বাস কাল হয়ে দাঁড়ায়।
পরেরবারও প্রায় একক নৈপুণ্যে দলকে ১৯৭৮ বিশ্বকাপের টিকিট পাইয়ে দেন ক্রুইফ। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগের বছর হুট করে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সে দেশের জার্সি চিরতরে তুলে রাখা নিয়ে ছিল রহস্য। কেউ মনে করতেন, সামরিক স্বৈরশাসক ক্ষমতায় থাকায় আর্জেন্টিনায় যাননি। কারও কারও দাবি, পরিবারের চাপে খেলেননি। তবে ২০০৮ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি খোলাসা করেন ক্রুইফ। জানান, তাঁকে ও পরিবারের সদস্যদের অপহরণ করতে পারে, এমন খবর কানে আসতেই অবসরের ঘোষণা দেন। তবে যে দলটা গুছিয়ে দিয়ে যান, সেটাই উঠে যায় ফাইনালে। এবারও রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।
ক্রুইফ বলে গেছেন, ‘বিশ্বকাপ এমন এক টুর্নামেন্ট, যেখানে একজন খেলোয়াড়কে নিজের ২০০ শতাংশ দিতে হয়।’ ২০০ শতাংশ দেওয়ার মতো একঝাঁক খেলোয়াড় খুঁজে পায়নি বলেই হয়তো ক্রুইফ–পরবর্তী (১৯৭৮ বিশ্বকাপের পর) সময়ে টোটাল ফুটবলের মশাল সেভাবে বয়ে নিয়ে বেড়ানো সম্ভব হয়নি। সে কারণে দীর্ঘ সময় বিশ্বকাপে তেমন সাফল্যও ধরা দেয়নি।
দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে ২০১০ বিশ্বকাপে দেখা গেছে ডাচ ফুটবলের পুনর্জাগরণ। আরিয়েন রোবেন, ওয়েসলি স্নাইডার, রবিন ফন পার্সি, ডার্ক কাউট, ক্লাস–ইয়ান হান্টেলারদের ছোঁয়ায় বদলে যায় তারা। ৩২ বছর পর ওঠে আরেকটি ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্যের শিকে সেবারও ছেঁড়েনি। ২০১৪ সালে তৃতীয় হওয়া দলটাকেও দুর্ভাগা বলা যায়।
গতবার রাশিয়ায় ছিল কমলার অনুপস্থিতি। লুই ফন গাল অবসর ভেঙে কোচের দায়িত্বে ফেরার পর ভোজবাজির মতো বদলে যায় সবকিছু। বাছাইয়ে দাপট দেখিয়ে কাটে কাতারের টিকিট। আট বছর বিরতি দিয়ে বিশ্বমঞ্চে ফিরছে কমলা রং। ইউরোপীয় পরাশক্তিরা এবার যেতে চাইবে দূর, বহুদূর।...আরও