ভুলের অসুখে ভোগা ওনানা ‘ঠিক আছে’
চ্যাম্পিয়নস লিগে গত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে ‘ক্লিনশিট’ রেখেছিলেন কে? নামটা শোনার পর অবিশ্বাস্য লাগতে পারে। কারণ, গত মৌসুমে ইন্টার মিলানের হয়ে যিনি সর্বোচ্চ ১৪ ম্যাচে ক্লিনশিট রেখেছিলেন, সেই আন্দ্রে ওনানার ভুলেই এখন চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে যাওয়ার খুব কাছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।
শুধু যে গতকাল রাতে গালাতাসারাইয়ের বিপক্ষেই ভুল করেছেন, তা নয়। এর আগে চ্যাম্পিয়নস লিগে কয়েকটি বড় ভুল করেছেন এই গোলরক্ষক। দেখে মনে হতে পারে ওনানা বুঝি ভুলের অসুখে ভুগছেন!
গতকাল চ্যাম্পিয়নস লিগে একবার ২-০, আরেকবার ৩-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকার পরও জয় পায়নি ইউনাইটেড। ২৮ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দারুণ বুদ্ধিমত্তার এক ফ্রি কিকে ইউনাইটেডের জালে বল জড়ান হাকিম জিয়েশ। ওনানা একটু তৎপর থাকলে যা হয়তো রুখেও দিতে পারতেন।
ক্যামেরুনিয়ান এই গোলরক্ষক বড় ভুলটা করেন দ্বিতীয়ার্ধে। ৬২তম মিনিটে অনেকটা প্রথমার্ধের মতো জায়গাতেই ফ্রি কিক পায় গালাতাসারাই। এবারও জিয়েশ নেন প্রায় একই শট। বল নাগালেই ছিল ওনানার। কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে উল্টো নিজের জালেই জড়িয়েছেন!
গালাতাসারাইয়ের মাঠে এই ড্র ইউনাইটেডকে ঠেলে দিয়েছে খাদের কিনারে। গ্রুপ পর্বে আরও একটি ম্যাচ বাকি থাকলেও শেষ ষোলোয় ওঠার হিসাবটা আর শুধু ইউনাইটেডের হাতে নেই।
এই গালাতাসারাইয়ের বিপক্ষেই ঘরের মাঠে প্রথম লেগে বড় ভুল করেছিলেন ওনানা। সে ম্যাচে ২-২ সমতায় থাকা অবস্থায় সামনে গালাতাসারাইয়ের বদলি খেলোয়াড় দ্রিয়েস মের্তেন্স কাছাকাছি আছেন দেখেও বল পাস দেন কাসেমিরোকে। কিন্তু কাসেমিরো কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মের্তেন্স।
বেচারা কাসেমিরো বাধ্য হয়ে তাই মের্তেন্সকে ফাউল করে বসেন। অনুমিতভাবেই কাসেমিরো দেখেন হলুদ কার্ড। কিন্তু এর আগেও একবার হলুদ কার্ড দেখায় ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারকে মাঠ ছাড়তে হয়। ফাউল থেকে পাওয়া পেনাল্টিতে গোল মিস করলেও ১০ জনের দলে পরিণত হওয়া ইউনাইটেডের দুর্বলতার সুযোগে সদ্ব্যবহার করে গোল করেন মাউরো ইকার্দি।
এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বায়ার্নের সঙ্গে আরও বড় কাণ্ড ঘটান ওনানা। সে ম্যাচে ম্যাচের ২৮ মিনিটে হ্যারি কেইনের সঙ্গে বল আদান-প্রদান করে বক্সের ভেতর থেকে শট নিয়েছিলেন বায়ার্ন তারকা লেরয় সানে। ইউনাইটেডের ক্যামেরুন গোলরক্ষক ওনানা তাঁর বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বলটাও নাগালের ভেতরেই ছিল। কিন্তু কীভাবে তাঁর গ্লাভস ফসকে জালে জড়াল, এ নিয়ে গবেষণা হতে পারে!
এই ভুলের দায় নিয়েছিলেন ওনানা। ম্যাচ শেষে বলেছিলেন, ‘আমরা ভালো শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমার ভুলের পর ম্যাচে আমরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছি। আমার জন্য পরিস্থিতিটা কঠিন। দলের মাথা নত হয়েছে আমার কারণে। আমার কারণেই দল এ ম্যাচ জিততে পারেনি।’
ইউনাইটেড কোচ তখনো ওনানার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। গতকালের ভুলের পরও টেন হাগ ওনানার কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নিচ্ছেন না। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘ওনানা ঠিক আছে। আগেও বলেছি, এটা কোনো ব্যক্তির কারণে হয়নি। তবে অবশ্যই কোনো ব্যক্তির ভুল ফুটবল ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে, সে জন্য দায় তো আছেই। কিন্তু এটা সব সময়ই পুরো দলের বিষয়।’
টেন হাগেরই–বা কী করার আছে! অনেক আশা নিয়েই দলে ভিড়িয়েছিলেন ওনানাকে। ১২ বছর ধরে ওল্ড ট্রাফোর্ডের ক্লাবটির গোলবার সামলেছেন দাভিদ দে হেয়া। তাঁর জায়গাটা নেওয়া তো একেবার সহজ কাজ ছিল না। তবে নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বেন ওনানা সেটা নিশ্চয়ই ভাবেননি।
চ্যাম্পিয়নস লিগে ওনানার দুর্দশা চললেও লিগে ভালোই করছেন। লিগে ১৩ ম্যাচের মধ্যে পাঁচটাতেই ক্লিন শিট রেখেছেন। চ্যাম্পিয়নস লিগ এলেই যেন কী হয় তাঁর! ‘অপটা অ্যানালিস্ট’ এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৮–১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে এ পর্যন্ত ভুলের কারণে প্রতিপক্ষের গোল হজমের তালিকায় শীর্ষে ওনানা। সাতবার তাঁর ভুলে গোল পেয়েছে প্রতিপক্ষ।