রিয়াল মাদ্রিদ ৪-১ বার্সেলোনা
তিনি বড় ম্যাচের তারকা। আছে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে দলকে শিরোপা এনে দেওয়া গোলও। সেই ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই আরেকবার জ্বললেন স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে। মরুর বুকের ‘এল ক্লাসিকো’তে প্রথমার্ধেই আদায় করে নিয়েছেন দারুণ এক হ্যাটট্রিক।
সৌদি আরবে ভিনির আলো ছড়ানোর রাতে বার্সাকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে স্প্যানিশ সুপার কাপের শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে রিয়াল। এটি রিয়ালের ১৩তম স্প্যানিশ সুপার কাপ শিরোপা। এর মধ্য দিয়ে ১৪টি শিরোপা জিতে শীর্ষে থাকা বার্সার সঙ্গে ব্যবধানও কমিয়ে এনেছে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর দলটি।
চোটের কারণে এ মৌসুমে বেশ ভুগেছেন ভিনিসিয়ুস। সম্প্রতি মাঠে ফিরলেও দেখা পাননি গোলের। কে জানত, নিজের গোলগুলো সব বার্সা ম্যাচের জন্য জমিয়ে রেখেছেন এই ব্রাজিলিয়ান। ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের পেয়ে রীতিমতো আগুনে রূপ নেন ভিনি। আদায় করে নিয়েছেন লম্বা সময় মনে রাখার মতো এক হ্যাটট্রিকও। এটি এই শতকে এল ক্লাসিকোতে পঞ্চম হ্যাটট্রিক এবং রিয়ালের হয়ে দ্বিতীয়। এই শতকে এত দিন রিয়ালের হয়ে একমাত্র হ্যাটট্রিকটি ছিল করিম বেনজেমার।
এদিন প্রথমার্ধের খেলা ছিল এক কথায় দুর্দান্ত। বার্সা সমর্থকদের জন্য হতাশ হওয়ার অনেক জায়গা থাকলেও, লড়াইটা মোটেই নিরস ছিল না। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণকে পাখির চোখ করে দুই দল। বলের দখল ও আক্রমণে বার্সা এগিয়ে থাকলেও, রিয়ালের আক্রমণগুলো ছিল অনেক বেশি ধারাল ও বিপজ্জনক। তবে ৫ মিনিটে এগিয়ে যেতে পারত বার্সাই। কিন্তু বার্সার সেই প্রচেষ্টা রুখে দেন রিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রেই লুনিন।
তবে ফিনিশিংয়ে বার্সার ভুলের পুনরাবৃত্তি করেননি ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। ৭ মিনিটে জুড বেলিংহামের কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণভাবে এগিয়ে গিয়ে কাটান গোলরক্ষককেও। তারপর দারুণ ফিনিশিংয়ে এগিয়ে দেন রিয়ালকে। গোল করেই নিজের আদর্শ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর ‘সিউ’ উদ্যাপনও করেন ভিনি। এরপর বার্সা ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পাওয়ার আগেই ৩ মিনিটের মধ্যে ব্যবধান ২-০ করেন ভিনিসিয়ুস। দানি কারভাহালের লম্বা করে বাড়ানো বল ধরে রদ্রিগো বক্সে ঢুকে বাড়ান ভিনিসিয়ুসের উদ্দেশ্যে। দারুণভাবে স্লাইড করে বলকে জালে জড়ান ভিনি।
ম্যাচের ১০ মিনিটে ২ গোলে পিছিয়ে পড়ে বার্সা তখন রীতিমতো দিশেহারা। আগ্রাসী হয়ে পরপর কয়েকটি আক্রমণে যায় তারা। যদিও কোনোটিই কাঙ্ক্ষিত গোল এনে দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৩৩ মিনিটে বার্সার হয়ে ব্যবধান কমান রবার্ট লেভানডফস্কি। বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক ভলিতে লক্ষ্যভেদ করে বার্সাকে ম্যাচে ফেরানোর ইঙ্গিত দেন এ পোলিশ স্ট্রাইকার। কিন্তু বার্সাকে হতাশ করে ৩৯ মিনিটে রিয়ালের হয়ে পেনাল্টি আদায় করে নেন ভিনি। সেই পেনাল্টি অবশ্য তিনি নিজেই নেন। নিখুঁত লক্ষ্যভেদে এই ব্রাজিলিয়ান প্রথমার্ধেই আদায় করে নেন হ্যাটট্রিক। ৩-১ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় রিয়াল।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার আশায় বেশ কিছু পরিবর্তন আনে বার্সা। যদিও বার্সার আক্রমণগুলো ছিল নির্বিষ। রিয়ালকে চ্যালেঞ্জে ফেলার মতো তেমন কিছুই করতে পারছিল না জাভি হার্নান্দেজের দল। বরং রিয়ালের তৈরি আক্রমণগুলোই বেশি হুমকি তৈরি করছিল। শেষ পর্যন্ত তেমনই এক আক্রমণ থেকে গোল করে ম্যাচের ইতি টেনে দেন রদ্রিগো। এই আক্রমণটিও তৈরি করেন সেই ভিনিসিয়ুসই।
৬৪ মিনিটে ৪-১ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর বার্সার এই ম্যাচে হারের ব্যবধান বাড়তে না দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া দলটি অবশ্য এ সময় উদ্যমও হারিয়ে ফেলে। অন্য দিকে উজ্জীবিত রিয়ালের চেষ্টা ছিল ব্যবধানটা আরও বড় করার।
এর মধ্যে ভিনিসিয়ুসকে লাথি মেরে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন বার্সার রোনাল্দ আরাউহো। ১০ জনের দল নিয়ে অলৌকিক কিছু করে দেখাতে পারেনি বার্সা। এমনকি শেষ দিকে চেষ্টা করেও পারেনি ব্যবধান কমাতে। বড় হার নিয়েই শেষ পর্যন্ত মাঠ ছাড়তে হয় দলটিকে।