সালাহ থাকা আর না থাকায় কতটুকু পার্থক্য লিভারপুলের
অ্যানফিল্ডে কিছুটা হতাশা নেমে এসেছিল ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে। ১৭ ও ২৩ ডিসেম্বর টানা দুটি ম্যাচ যে ড্র করেছিল লিভারপুল। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ২০২৩ সালটা লিভারপুল শেষ করেছে জয় দিয়ে। বক্সিং ডেতে বার্নলির মাঠ থেকে ২-০ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছে তারা। নতুন বছরের শুরুটাও দুর্দান্ত হয়েছে অ্যানফিল্ডের দলটির, ২০২৪ সালের প্রথম দিনে নিজেদের মাঠে নিউক্যাসলকে তারা হারিয়েছে ৪-২ গোলে।
টানা ২ জয়ের পর ২০ ম্যাচ শেষে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষে উঠে গেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাস্টন ভিলার পয়েন্ট সমান ম্যাচে ৪২। এক ম্যাচ কম খেলে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে আছে ম্যানচেস্টার সিটি। চতুর্থ স্থানে থাকা আর্সেনালের পয়েন্ট ২০ ম্যাচে ৪০।
এমন অবস্থার পরও লিভারপুলের সমর্থকদের মাঝে একটা অস্বস্তি কাজ করছে। লিগে পরের ৪ ম্যাচে যে লিভারপুল দলে পাচ্ছে না অন্যতম সেরা তারকা মোহাম্মদ সালাহকে। মিসরের হয়ে আফ্রিকান নেশনস কাপ খেলতে এরই মধ্যে অ্যানফিল্ড ছেড়ে গেছেন তিনি। লিভারপুলের সর্বশেষ জয়েও জোড়া গোল করেছেন মিসরের তারকা। শক্তির বিচারে লিভারপুলের পরের চার ম্যাচের দুটির প্রতিপক্ষই কঠিন—চেলসি ও আর্সেনাল। অন্য দুটি ম্যাচ বোর্নমাউথ ও বার্নিলর বিপক্ষে।
চলতি মৌসুমে ৩১ বছর বয়সী সালাহ লিগে প্রতি ৭৯ মিনিটে একটি গোল করেছেন অথবা সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন। লিগের গুরুত্বপূর্ণ মূহূর্তে এমন একজন খেলোয়াড়কে না পাওয়া নিয়ে ক্লপ নিজেও একটু অস্বস্তিতে থাকার কথা এর আগে বলেছেন। এমনকি মজা করে গ্রুপ পর্ব থেকে সালাহর দেশ মিসর বিদায় নিলে খুশি হবেন বলেও মন্তব্য করেছেন।
পরিস্থিতি যখন এ–ই, একবার পরিসংখ্যানে চোখ বুলিয়ে দেখা যাক—সালাহকে নিয়ে আর সালাহকে ছাড়া লিভারপুলের পারফরম্যান্স আসলে কেমন। গুরুত্বপূর্ণ এই খেলোয়াড়কে নিয়ে আর তাঁকে ছাড়া লিভারপুলের হারজিতের শতাংশই–বা কী!
সালাহকে নিয়ে লিভারপুলের রেকর্ড
এ মৌসুমে লিভারপুলের পঞ্চম খেলোয়াড় হিসেবে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২০০ গোলের মাইলফলক ছুঁয়েছেন সালাহ। অ্যানফিল্ডে সাড়ে ৬ মৌসুমের ক্যারিয়ারে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে দলের যত খেলা ছিল, এর ৯০ শতাংশের বেশি ম্যাচেই খেলেছেন মিসরের তারকা। সালাহ লিভারপুলে নাম লেখানোর পর সাড়ে ৬ মৌসুমে তাঁকে নিয়ে অ্যানফিল্ডের দলটি ৩৩২টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে ২০৯টিতেই জিতেছে তারা। ড্র করেছে ৬৯টি ম্যাচ, হেরেছে ৫৪টি। ৩৩২ ম্যাচে লিভারপুল গোল করেছে ৭১৭টি, যেখানে সালাহর অবদান ২০৪ গোল। আর লিভারপুল গোল খেয়েছে ৩৩১টি।
সালহকে ছাড়া লিভারপুলের রেকর্ড
২০১৭ সালে লিভারপুলে নাম লেখানোর পর চোটের কারণে সালাহ মাত্র ৩টি ম্যাচ মিস করেছেন। ওই তিন ম্যাচে হারেনি লিভারপুল। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানা কারণে লিভারপুলের হয়ে সালাহ খেলতে পারেননি আরও ২৮টি ম্যাচ। সব মিলিয়ে সালাহর খেলতে না পারা ৩১ ম্যাচের ২১টি জিতেছে অ্যানফিল্ডের দলটি। ৭টি ম্যাচ ড্র করেছে, হেরেছে ৩টি। এই ৩১ ম্যাচে লিভারপুল গোল করেছে ৬৭টি, খেয়েছে ৩১টি।
কাগজ-কলমে সালাহকে ছাড়া লিভারপুলকে আরও ভালো দল মনে হতে পারে, কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে তাঁকে আসলে ক্লপ অগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতেই বিশ্রাম দিয়েছেন। বিশেষ করে ঘরোয়া কাপের ম্যাচে, তা–ও আবার যেগুলো তুলনামূলক কম শক্তির দলের বিপক্ষে।
অন্যদিকে সালাহকে দলে নিয়ে পাওয়া সাফল্যের দিকে তাকালে তাঁকে ছাড়া খেলার কথা ভাবাটা লিভারপুলের সমর্থকদের জন্য কঠিন মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। ফুটবলবিষয়ক তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান অপ্টার হিসাব অনুযায়ী লিভারপুলের হয়ে কমপক্ষে ২০০ ম্যাচ খেলা (খেলোয়াড়ের সংখ্যাটা ১০০ জনেরও বেশি) খেলোয়াড়ের মধ্যে সালাহর জয়ের শতাংশ সপ্তম সর্বোচ্চ।