একজন খেলেন উইংয়ে, আরেকজন স্ট্রাইকার। ফুটবল মাঠে দুজনের বোঝাপড়াটা তাই খুব জরুরি। তা ভালোই আছে সানজিদা আক্তার ও কৃষ্ণা রানী সরকারের মধ্যে। মাঠের বাইরেও যে দুজনের এমন গভীর বন্ধুত্ব, তা অবশ্য আমার জানা ছিল না। যা জানলাম ঘণ্টাখানেকের তুমুল আড্ডায়। তা এই দুজনের কথাই কেন মাথায় এল? উত্তরটা দিচ্ছি একটু পরে।
এর আগে স্থান–কাল বলে নিই। স্থান: বাফুফে ভবন। কাল: ২২ সেপ্টেম্বর। একদিন আগে ছাদখোলা বাসে দেশকে উৎসবে মাতিয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ দল। আমি বাফুফে ভবনে গিয়েছিলাম মূলত অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের সাক্ষাৎকার নিতে। একটু অপেক্ষা করতে হলো সে জন্য। কারণ, বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন তখন সাফজয়ী মেয়েদের নিয়ে বসেছেন।
সেই পর্ব শেষ হওয়ার পর টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি ও নারী ফুটবলের প্রধান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক সভা। বাফুফে সভাপতি যেখানে ডেকে নিলেন আমাকে। মেয়েদের ফুটবলে অর্জন–সমস্যা–সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে বলতেই হঠাৎ মনে হলো, শুধু সাবিনা কেন, আরও দু–একজন ফুটবলারের সঙ্গেও কথা বলি না কেন! সেই চিন্তা থেকেই কৃষ্ণা রানী সরকার ও সানজিদা আক্তারের সঙ্গে গল্প করতে বসা।
এই দুজনই কেন, সেই উত্তর এবার দিই। যদিও আপনি হয়তো অনুমান করে ফেলেছেন বলেই আমার অনুমান। ফাইনালে ২ গোল করায় কৃষ্ণার নাম তখন সবার মুখে মুখে। সানজিদা, সানজিদা রব তো উঠেছে ফাইনালেরও আগে। যখন তাঁর একটা ফেসবুক স্ট্যাটাস রীতিমতো ভাইরাল হয়ে গেছে।
এর আগে দু–একবার কথা হয়েছে। দুজনের কারও সঙ্গেই প্রাণ খুলে গল্প করার মতো সম্পর্ক নয়। বয়সের ব্যবধানও বড় একটা বাধা। প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল তাই দুজনকে সহজ করে নেওয়া। ভয়েস রেকর্ডার অন করার আগে মিনিট দশেকের কথাবার্তাতেই অবশ্য তা হয়ে গেল। অনেক বছর ধরে এই মেয়েদের অনুসরণ করে আসা প্রথম আলোয় আমার সহকর্মী বদিউজ্জামানের উপস্থিতিও কিছুটা ভূমিকা রেখেছে এতে। সময়টা যে চোখের পলকে কেটে গেল, তার মূল কারণ অবশ্যই কৃষ্ণা আর সানজিদার মধ্যকার রসায়ন।
দুষ্টুমি, খুনসুটি, ইয়ার্কি, হাসি, কখনো না বলেও মুখভঙ্গিতে অনেক কিছু বলা…পুরোটা লেখায় ফুটিয়ে তুলতে পারব কি না, এ নিয়ে সংশয় ছিল। শেষ পর্যন্ত তাই সিদ্ধান্ত নিই, সেই আড্ডার নির্বাচিত অংশ তুলে দেওয়াই ভালো। দুজনের বাচনভঙ্গিটা এতে থাকছে না, এটাই শুধু আফসোস।
উৎপল শুভ্র: সানজিদা, বাংলাদেশ টিমে আপনার সবচেয়ে বেশি খাতির কার সঙ্গে?
সানজিদা আক্তার: কৃষ্ণাদির সাথে একটু বেশি মিশি। তবে সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক।
শুভ্র: কৃষ্ণা, আপনার?
কৃষ্ণা রানী সরকার: ওই যে সেইম।
শুভ্র: মানে সানজিদার সাথে বেশি মেশা হয়, তবে সবার সাথেই সম্পর্ক ভালো…
কৃষ্ণা: হ্যাঁ।
শুভ্র: এই প্রশ্নটা আপনারা নেপাল থাকতেই কৃষ্ণাকে করেছিলাম। আপনারা এতগুলো মেয়ে সব সময় একসাথে থাকেন। ঝগড়াঝাঁটি হয় না?
সানজিদা: ঝগড়াঝাঁটি, কথা-কাটাকাটি—সবকিছুই হয়। তবে মুহূর্তের মধ্যেই কিছু নাই—সবকিছু উধাও হয়ে যায়। আমরা তো আসলে একটা ফ্যামিলির মতো।
কৃষ্ণা: আমরা আসলে ঝগড়াঝাঁটি করব কার সাথে? সবাই একসাথে থাকি, খেতে গেলে একসাথে, খেলতে গেলে একসাথে…ঝগড়াঝাঁটি করে কতক্ষণ থাকব?
শুভ্র: কৃষ্ণা, সানজিদার সাথে প্রথম দেখা হয়েছিল কবে?
কৃষ্ণা: ওর সাথে আমার প্রথম দেখা ২০১৪ সালে। আন্ডার ফোরটিন এএফসি কাপ, যেটাতে আমরা কোয়ালিফাই করতে পারি নাই। আর বন্ধুত্বের শুরু ২০১৬ সালে।
শুভ্র: প্রথম পরিচয়টা না হয় মনে থাকতে পারে, বন্ধুত্বের দিন–তারিখ কীভাবে মনে থাকে?
কৃষ্ণা: সালটা বললাম, তারিখ তো মনে নাই।
শুভ্র: বন্ধুত্বটা হলো কীভাবে?
সানজিদা: দুজনই ফরোয়ার্ডে খেলি। দুজনের মধ্যে তাই ভালো আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল, বন্ডিং ছিল।
কৃষ্ণা: আন্ডার সিক্সটিনে যখন খেলি, সানজিদা খেলত উইংয়ে, আমি স্ট্রাইকার পজিশনে, নাম্বার নাইন।
সানজিদা: আমার খেলা যে তোমার ভালো লাগত, সেটা বলো…
কৃষ্ণা: কথা কম ক (হাসি)…আসলে ওর বলেই আমি বেশির ভাগ গোল করেছিলাম।
শুভ্র: বুঝেছি, উইংয়ের প্লেয়ারের সঙ্গে তো খাতির রাখতেই হবে…নইলে তো বল দেবে না…
কৃষ্ণা: না, এমন কোনো কিছু না। ওর দেওয়া বলগুলো খুব সুন্দর ছিল।
শুভ্র: মানে উইং থেকে ভালো ক্রস করতে পারত।
কৃষ্ণা: হ্যাঁ, খাইট্যা খাওয়া মানুষ না, মাইমেনসিঙ্গা…পায়ে শক্তি আছে।
শুভ্র: সানজিদা, ভাইরাল হয়ে যাওয়া আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাসে পাহাড়ি মানুষের জীবনসংগ্রামের কথা বলেছেন। কিন্তু আপনাকে দেখলে তো সংগ্রাম–টংগ্রাম কিছু করেছেন বলে মনে হয় না, বরং মনে হয় ধনীর দুলালী। আপনার ছোটবেলাটা আসলে কেমন ছিল?
সানজিদা: আমরা চার বোন, দুই ভাই হলে কী হবে, আমাদের ফ্যামিলির অবস্থা অতটা খারাপ ছিল না। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা মেয়ে। ধানের সময়ে আমাদের বাসায় প্রচুর ধান আসত। তখন একটু কাজ করতে হতো। এ ছাড়া আমি কোনো কাজটাজ করতাম না বাসায়। আমার আগে আরও দুই বোন ছিল, আম্মা ছিল। ওরাই কাজ করত। আমি শুধু ঘুরতাম, খাইতাম আর খেলতাম। এটাই আমার কাজ ছিল।
শুভ্র: কলসিন্দুর স্কুলের মেয়েরা যে প্রথম আলোর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে এসেছিল, আপনিও তো এসেছিলেন?
সানজিদা: হ্যাঁ, আমিও আসছিলাম।
শুভ্র: ওই স্মৃতিটা কেমন?
সানজিদা: সেটাই আমার প্রথম সোনারগাঁও হোটেলে যাওয়া। প্রথম আলো আমাদের নিয়ে অনেক বড় একটা প্রতিবেদন করেছিল। এর পরে আনিসুল হক স্যারের নেতৃত্বে আমাদেরকে নিয়ে একটা ডকুমেন্টারি তৈরি হলো, রেদওয়ান রনি ভাইয়াও ছিল। ওইটাতেই আমরা অনেক সাড়া পেয়েছি, ভাইরাল হয়ে গেছে কলসি
শুভ্র: ওই ডকুমেন্টারিতে মজার একটা দৃশ্য ছিল। আপনারা ফুটবল খেলছেন, গ্রামের এক লোক আপনাদের জন্য শসা নিয়ে এসেছে। আপনি বলছেন, এরপর শসার সঙ্গে লবণও নিয়ে আসবেন।
সানজিদা: আমি ছোটবেলা থেকেই একটু চঞ্চল টাইপের ছিলাম। আমি বেশি কথা বলতে, মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করি। ইদানীং অনেকে বলে, আমি নাকি একটু কম কথা বলি, কম মিশি…যদিও আমি জানি না, এটা ঠিক কি না।
কৃষ্ণা: এখন সেলিব্রিটি না…
সানজিদা: আমাদের ওইখানে একটা লোক আছে, অনেক বড় শসার খেত করে। আমরা খেলাধুলা করি, উনি আমাদের শসা খাওয়াতেন। তো যখন উনি শুটিংয়ের মধ্যে শসা নিয়া আসেন, তখন আমি ওই ডায়ালগটা দিই। দুষ্টুমি করেই বলেছি, বুঝি নাই ওই কথাটাই এত ভাইরাল হয়ে যাবে। আমার কথাগুলাই কেন যেন ভাইরাল হয়ে যায় (হাসি)।
কৃষ্ণা: তুই যে সেলিব্রিটি, এই কারণে…(হাসি)
শুভ্র: কৃষ্ণা, বাংলাদেশের এই টিমে সবচেয়ে দুষ্টু কে? কৃষ্ণা যদি হয়, তাহলে তো অন্যের মুখে শুনতে হবে, নিজের কথা তো নিজে বলবেন না…
সানজিদা: ও তো মিঠা শয়তান। আমরা সামনাসামনি বলে ফেলি।
শুভ্র: কৃষ্ণা, সানজিদা বলছে আপনি মিঠা শয়তান…
কৃষ্ণা: না, না, না, আমি জীবনেও না। এটা ভুল কথা।
সানজিদা: দুষ্টু সবাই কমবেশি।
কৃষ্ণা: আমি স্বতন্ত্র পার্টি। আওয়ামী লীগও না, বিএনপিও না। এটা ঠিক আছে না? সানজিদা: আমি কোনো পার্টি করি না। যার যেটা, সেটাই মুখের ওপরে বলে দিই। যে–ই হোক…
শুভ্র: এতে কোনো ঝামেলা হয় না?
সানজিদা: ঝামেলা হলে তো আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি তো যেটা সত্যি, সেটাই বলতেছি।
শুভ্র: দু–একটা উদাহরণ? আচ্ছা ধরুন, বাফুফে প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিন এমন কিছু বললেন, যা আপনার পছন্দ হলো না। তাঁর মুখের ওপর এটা বলতে পারবেন?
সানজিদা: সালাউদ্দিন স্যার তো ভালো ভালো কথাই বলেন। একবার স্যারের বাসায় আমাদের দাওয়াত ছিল। তখন পল স্যার (পল স্মলি) মাত্র আসছেন। এত পরিমাণ লোড দেন যে আমি মাঠে পড়ে কান্না করি। দাওয়াতে গিয়ে সালাউদ্দিন স্যারকে বলেছিলাম, ‘স্যার, ফুটবল খেলতে পারব না। অনেক কষ্ট, পল স্যার অনেক লোড দেয়। আপনার বাসায় যা খাইছি, হজম হওয়ার আগেই উনি তা বের করে ফেলবে। আপনি ওনাকে বলে দেন, আমাদের যাতে লোড কম দেন, নইলে আমরা খেলতে পারব না। এরপর যখনই সালাউদ্দিন স্যারের সঙ্গে দেখা হয়, উনি বলেন, ‘সানজিদা আমাকে এই কথা বলেছিল। কী সানজিদা, বলছিলে না? এখন দেখেছ, কই গেছ?’ আজকেও যখন উনি এই কথা বলছিলেন, তখন আমি বলেছি, এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি রানিং করতে পারি। এখন আর না করি না, এখন আর কান্না করি না।
শুভ্র: ক্যাম্পে অবসর কীভাবে কাটে? বেশি ফেসবুকিং করার সুযোগ তো নেই, শুনলাম মোবাইল নাকি দিনে নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য আপনাদের হাতে দেওয়া হয়…
কৃষ্ণা: টিভি দেখি, গল্প করি। কেউ লেখাপড়া করতে চাইলে লেখাপড়া করে। আনন্দেই দিন কাটে।
শুভ্র: আপনারা দুজনই তো এআইইউবিতে অর্থনীতিতে পড়েন, তাই না?
কৃষ্ণা: আমরা দুজন আর মণিকা।
শুভ্র: অর্থনীতি বেছে নেওয়ার কারণ?
সানজিদা: অন্য সাবজেক্টও নিতে পারতাম, ইকোনমিকসই নিয়েছি। আমাদের কিছু বন্ধুবান্ধব আছে, ওদের হেল্প পাব ভেবেই এটা নেওয়া। টিচাররাও হেল্প করে।
শুভ্র: পড়াশোনা কেমন লাগে? বই আছে?
সানজিদা: ইউনিভার্সিটির কোনো বই–টই নাই।
শুভ্র: বলেন কী, কোনো বই নাই? সব অনলাইন?
কৃষ্ণা: হ্যাঁ, সব অনলাইন।
শুভ্র: ক্লাস করা হয় নিয়মিত?
কৃষ্ণা: না। ইউনিভার্সিটিতেই তো মনে হয় তিনবার গেছি।
শুভ্র: সানজিদা, ফাইনালের আগে আপনার একটা ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়ে গেছে। ভাইরাল হওয়ার মতোই। প্রতিটা কথাই এত সুন্দর। কীভাবে চিন্তাটা মাথায় এল?
সানজিদা: আপনি যখন ও রকম পরিস্থিতিতে থাকবেন, তখন আপনা–আপনি মাথায় ওটা চলে আসবে। আপনি যখন ওই রকম নিজের চোখ দিয়ে দেখবেন, তখন চিন্তাটা এমনি এমনিই আসবে। কিছুদিন আগেও কিন্তু আমার ফেসবুক পেজ ছিল না। তবে আমার নামে অনেকগুলো ফেক আইডি ছিল। আমার ফেসবুক–ইনস্টাগ্রাম সব খুলে দিয়েছে কৃষ্ণাদি।
কৃষ্ণা: খোলার পরই সানজিদা ভাইরাল হয়ে গেছে। চেহারা ভালো না? বাংলাদেশে যাদের চেহারা ভালো, তাদের সবাই ভালোবাসে (হাসি)।
সানজিদা: বাংলাদেশের দর্শক আমাকে অনেক সাপোর্ট করে। তাদের সাপোর্টের কারণেই আমি এত দূর এগিয়ে এসেছি।
কৃষ্ণা: বাংলাদেশের মানুষ আমাদেরও সাপোর্ট করে।
সানজিদা: এখন তো করেই, বিশেষ করে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর…
কৃষ্ণা: আমাকে আগেই করত না সাপোর্ট? (বদিউজ্জামানের দিকে তাকিয়ে) বলেন মিলন ভাই, করত না আমাকে সাপোর্ট?
শুভ্র: আচ্ছা, সানজিদার ফেসবুক পোস্টে ফিরি। কেন আপনার মনে হলো, এমন একটা পোস্ট দিই?
সানজিদা: আমার ফ্যান–ফলোয়াররা জানতে চায়, আমরা কখন কী করছি। এ কারণে প্রতিদিনই একটা না একটা পোস্ট দেওয়া হয়। ফাইনাল খেলার আগে এভাবেই পোস্টটা দেওয়া। পাহাড়ি এলাকা, আমরা যে ১১ জন মাঠে নামি তাদের কথা…এসব মাথায় আসছিল…আমি কিন্তু ভাইরাল হওয়ার জন্য পোস্ট দিইনি। তবে ছাদখোলা বাসটা আসলে আমাদের দরকার ছিল।
শুভ্র: রাতে পোস্ট দিলেন, পরদিন সারা দেশে এটা নিয়ে আলোড়ন। এই খবর তো নেপালেই পেয়েছিলেন, নাকি?
সানজিদা: আমাদের হাতে তো ফোন থাকে না, আমরা দেখতে পারি না। যেদিন খেলব, ওদিন লিটু স্যার (বাংলাদেশ দলের সহকারী কোচ মাহবুবুর রহমান) বললেন, ‘তুই তো পুরা ভাইরাল, পুরো বাংলাদেশ কাঁপতেছে।’ উনিই দেখালেন, অনেকগুলো নিউজ হয়ে গেছে এই লেখাটা নিয়ে। আমার একটু ভালো লাগছিল তখন। মনে হয়েছে এখন জিতি বা হারি, আগেই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তারা বলছে, তোমরা এখন হারলেও কোনো সমস্যা নেই, তোমরা আমাদের মন জয় করে নিয়েছ। এটা শুনে আমার বেশি ভালো লেগেছে।
শুভ্র: কৃষ্ণা, সানজিদার মতো আপনিও বললেন, ছাদখোলা বাসটা দরকার ছিল। কেন?
কৃষ্ণা: এটা কিন্তু বাংলাদেশে একটা রেকর্ড হয়ে গেছে। কারণ, এর আগে এমন হয়েছে কি না, জানি না।
শুভ্র: হয় নাই।
কৃষ্ণা: আমরা অনেক খুশি, দেশবাসীও খুশি। ছাদখোলা বাসের কারণে তারাও আমাদের যাত্রার, আনন্দের অংশীদার হতে পেরেছে।
শুভ্র: সানজিদা, বাড়িতে গেলে কী অভিজ্ঞতা হয় এখন? কলসিন্দুরের ছোট্ট মেয়েটা এখন বড় তারকা, টিভিতে দেখায়, পত্রপত্রিকায় ছবি ছাপা হয়, কী বলে এলাকার মানুষ?
সানজিদা: এখন সবাই গর্ব করে। আগে অনেকে অনেক কথা বলত। এখন সবাই প্রশংসা করে।
শুভ্র: আশপাশের গ্রাম থেকে লোকজন দেখতে আসে না?
সানজিদা: এটা আর বলবেন না! ভয়ে অনেক সময় যাইতেও মন চায় না (হাসি)। অনেক দূর দূর থেকে মানুষ বাড়িতে দেখতে আসে। অনেকে উপহার নিয়ে আসে…একটা কলম, ডায়েরি, গল্পের বই…। সেলফি তোলে। বলে, ‘তোমাকে টিভিতে দেখি, এখন বাস্তবে দেখছি, ইশ্, আমার কত ভাগ্য!’
কৃষ্ণা: এবার তো আরও বেশি আসবে…
শুভ্র: কৃষ্ণা, আপনি টাঙ্গাইলে কত বড় স্টার?
কৃষ্ণা: টাঙ্গাইল জেলায় তো আমি একাই। আর ছোটন স্যার আছেন আমার সাথে। আমার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরে। এলাকায় ভালোই সাড়া। সবার মুখে আমার নাম। দেশে আসার পর উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর সবাই ফোন দিয়েছে। এর বাইরেও এলাকার অনেক মানুষ। রাস্তার পাশেই আমাদের বাড়ি। সবাই ওটাকে ‘কৃষ্ণাদের বাড়ি’ নামেই চেনে।
শুভ্র: সানজিদা, আপনার প্রিয় খেলোয়াড় কে?
সানজিদা: রোনালদো।
শুভ্র: শুধু কি খেলার জন্যই রোনালদোকে ভালো লাগে, নাকি ওর চেহারা–স্টাইলের জন্যও?
সানজিদা: চেহারা তো কিছু না। পেলে নাকি কালো ছিল। তা–ও মানুষ তাঁকে ভালোবাসত। কেন ভালোবাসত? খেলার কারণেই তো…
শুভ্র: কৃষ্ণা, আপনার সঙ্গে একটু আগে যখন ড্রিবলিং নিয়ে কথা বলছিলাম, আপনি প্রিয় খেলোয়াড় হিসেবে রোনালদিনিওর কথা বলেছিলেন না?
কৃষ্ণা: না। আমি সবারই সবকিছু খেয়াল করি। যেটা ভালো লাগে, সেটা মাথায় ঢুকিয়ে নিই। সে অনুযায়ী প্র্যাকটিস করি।
সানজিদা: ওর সবকিছু মেসি, ও মেসির পাগল…
কৃষ্ণা: (হাসি) আমি মেসির বিগ ফ্যান। তবে সব ফুটবলারকেই রেসপেক্ট করি। বিশেষ করে নেইমার, সালাহ…
সানজিদা: এমবাপ্পে…
কৃষ্ণা: এমবাপ্পে না (হাসি)।
সানজিদা: মার্সেলো…
কৃষ্ণা: মা–র্সে–লো…না…
শুভ্র: মার্সেলো তো ডিফেন্ডার।
সানজিদা: অনেক ভালো প্লেয়ার। ডিফেন্ডার, তারপরও গোল করে।
কৃষ্ণা: আমার হ্যাজার্ডকেও খুব ভালো লাগে। ওর স্কিলগুলো আমার দারুণ লাগে। যখন বিশ্বকাপ হয়, আমি ওদের সবার স্কিলগুলো দেখি।
শুভ্র: আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রিয় কোনো ক্লাব বা দেশ আছে?
কৃষ্ণা: এখন কার কথা বলব? আমি সব খেলাই দেখি।
শুভ্র: প্রিয় ক্লাব?
কৃষ্ণা: এটাও বলব না।
শুভ্র: সানজিদা, আপনার প্রিয় ক্লাব আছে?
সানজিদা: রিয়াল মাদ্রিদ। হালা মাদ্রিদ।
শুভ্র: আর দেশ?
সানজিদা: আগে সাপোর্ট করতাম, এখন আর ভালো লাগে না। কারণ, পাবলিক অনেক খ্যাপায়, কান্না করিয়ে দেয়। ব্রাজিলকে আগে সাপোর্ট করতাম, ৭ গোল খাওয়ার পর আমার এমন অবস্থা করছে…এখন আর কাউকেই করি না।
কৃষ্ণা: সেই বিশ্বকাপের সময় আমি আর বাবা ছিলাম আর্জেন্টিনার সাপোর্টার, বাসার বাকি সবাই ব্রাজিলের। ওই ম্যাচের পর সাত দিন কেউ বাসা থেকে বের হয় নাই (হাসি)।
শুভ্র: সানজিদা, সাফের আগে আপনার ফেসবুক ফলোয়ার কত ছিল, আর এখন কত?
সানজিদা: আগে ছিল ২৫০k (আড়াই লাখ)–এর মতো। এখন ৪০০k (চার লাখ)–এর ওপরে। ফেসবুকে আমার ফলোয়ার সবচেয়ে বেশি, ইনস্টাগ্রামেও সবচেয়ে বেশি।
শুভ্র: কৃষ্ণা, আপনি সানজিদার ফেসবুক–ইনস্টাগ্রাম খুলে দিলেন, আর দেখেন ও কী বলছে, ওর ফলোয়ার নাকি সবার চেয়ে বেশি…
কৃষ্ণা: কী করা যাবে…পোস্টার গার্ল বাংলাদেশের…রাগ করে লাভ কী? ওকে তো নাটকেও অভিনয় করার প্রস্তাব দিয়েছিল।
শুভ্র: তাই নাকি?
সানজিদা: দুইটা বিজ্ঞাপনে কাজ করার পর নাটকের প্রস্তাব আসছিল। বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ের সময় ওরা যা বলত, আমি আগেই তা বুঝতে পারতাম। এখনো দুইটা বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়ার প্রস্তাব আছে। মনে হয় না করা হবে। আমি ফুটবলে আছি, অন্য কোনো দিকে ফোকাস করতে চাই না। ফুটবল নিয়েই থাকতে চাই।
শুভ্র: খেলা ছাড়ার পর?
সানজিদা: খেলা ছাড়ার পরও না। ফুটবল খেলার পর ভালো চাকরি–টাকরি যদি পাই, করার ইচ্ছা আছে। তবে মডেলিং করব না।