সুখী মানুষের ‘জামা’ পরেছেন মেসি
লিওনেল মেসি আসার আগে লিগে টানা ১১ ম্যাচ জয়শূন্য ছিল ইন্টার মায়ামি। মেসি এসে মায়ামির খেলোয়াড়দের মুখের হাসি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর মুখের হাসিও কি ফেরেনি? আর্জেন্টাইন তারকা ইন্টার মায়ামিতে যোগদানের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলাবলি হয়, মেসির মুখের হাসি ফিরেছে, পিএসজিতে যেটা হারিয়ে গিয়েছিল। যে হাসিটা দেখা যায় আর্জেন্টিনার জার্সিতে, সেটাই অনূদিত হচ্ছে মায়ামির জার্সিতে। যুক্তরাষ্ট্রে সুখেই আছেন কিংবদন্তি।
আজ ইউএস ওপেন কাপ সেমিফাইনাল শেষেও হাসি ফুটেছে মেসির মুখে। সিনসিনাটিকে টাইব্রেকারে ৫-৪ গোলে হারানোর আগে অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত ৩-৩ গোলে সমতায় ছিল মায়ামি। এই ৩ গোলের মধ্যে ২টি গোলের উৎস মেসি। এর মধ্যে দ্বিতীয় গোলটির পাস ইন্টার মায়ামি সমর্থকদের মনে থাকবে অনেক দিন। গোলদাতা লিওনার্দো কাম্পানার একদম মাথার ওপর গিয়ে পড়েছে বল—যেন প্লেটে করে তুলে দেওয়া গোল।
সে যা–ই হোক, গোলের পর মেসির দৌড় দেখে মনে হয়েছে ২৫–২৬ বছরের বার্সেলোনার সে ছেলেটি! অথচ মেসি ৩৬–এ পা রেখেছেন এবং আর্জেন্টাইন তারকা কবে অবসর নেবেন, সেসব নিয়েও কথা হচ্ছে। যদিও মাঠে তাঁর খেলা দেখে অবসরের প্রশ্ন ওঠাকেই অবান্তর মনে হতে পারে কারও কারও। মায়ামির হয়ে ৮ ম্যাচে মেসির গোলসংখ্যা ১০, গোল বানিয়েছেন ৩টি। এমন ফর্মে থাকা মেসি যে ফুটবলটা সত্যিই উপভোগ করছেন, তা না বললেও চলে।
কিন্তু মেসির অবসর নিয়ে আবারও কথা বলতেই হলো। গত ডিসেম্বরে কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের পর একবার বলেছিলেন, ফুটবলটা আরও কিছুদিন উপভোগ করতে চান। সেই ‘আরও কিছুদিন’ ঠিক কত দিন, সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। তাতে অবশ্য মেসির সমর্থকদেরই লাভ। মেসিকে যত বেশি দিন সম্ভব দুচোখ ভরে তো দেখে নেওয়া যাচ্ছে।
অ্যাপল টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অবসর নিয়ে মেসির কথা শুনলেও তাঁর ভক্তরা খুশি হবেন। বুট তুলে রাখা নিয়ে মেসি যে এখনো কিছুই ভাবেননি। ফুটবলটা এখনো উপভোগ করছেন। কত দিন খেলবেন, তা এখনো জানেন না, তবে যত দিন সম্ভব মাঠে থাকতে চান। কারণ? ওই তো, মেসি ফুটবল খেলতে ভালোবাসেন।
ইউএস ওপেন কাপের সেমিফাইনালে মাঠে নামার কয়েক ঘণ্টা আগে অ্যাপল টিভিকে দেওয়া মেসির সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়। সংবাদকর্মী ও টিভি ব্যক্তিত্ব টনি চেরচিকে অবসর নিয়ে সেখানে মেসি বলেছেন, ‘সত্যি বলতে এখনো এটা নিয়ে ভাবিনি। আমি খেলতে ভালোবাসি। বল পায়ে মাঠে থাকতে ভালো লাগে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অনুশীলন করতেও ভালো লাগে। আর কত দিন খেলব জানি না, তবে চেষ্টা করব যতটা বেশি সময় থাকা যায়।’
মেসির কথায় বোঝা গেল, বিশ্বকাপ জয়ের পর তাঁর মাথায় শুধু জীবনটা উপভোগ করে যাওয়ার ভাবনা। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর কোনো ভাবনা নেই। শুধু বর্তমানটা উপভোগ করে যেতে চান, ‘এটা (অবসর) নিয়ে ভাবনা-চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় পরেও পাওয়া যাবে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, যা কিছু টিকে আছে, সেসব উপভোগ করে যাওয়া। সেটা যা–ই হোক, ছোট কিংবা বড়। আমি এখন সেটাই করছি, পরিপূর্ণভাবে সবকিছু উপভোগ করছি। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করছি, কোনো কিছু নিয়ে অনুশোচনা করতে চাই না।’
পিএসজি ছেড়ে গত জুনে ইন্টার মায়ামিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেন মেসি। গত মাসে ক্লাবটির হয়ে তাঁর অভিষেক ঘটেছে। এরই মধ্যে মায়ামির হয়ে জিতেছেন লিগস কাপের শিরোপা। ইউএস ওপেন কাপের ফাইনালে ওঠায় সাতবারের বর্ষসেরা এই তারকার সামনে আরও একটি শিরোপা জয়ের সুযোগ।
মেসি পিএসজির হয়ে দুই মৌসুমে দুটি লিগ জিতলেও প্যারিসে তাঁর সময়টা ভালো কাটেনি। সেটি বোঝা গেল তাঁর কথাতেই। আর তাই পরিবারের কথা ভেবেই পিএসজি ছেড়ে মেসি এমন একটি ক্লাবে যোগ দিতে চেয়েছিলেন, যেখানে খেলে স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে পারবেন। সুখে থাকবেন। মায়ামির মেসিকে দেখে মনে হয়, ক্লাবটির জার্সি যেন তাঁর কাছে মমতাজউদ্দীন আহমেদের ‘সুখী মানুষ’ গল্পের সেই জামা। সুখেই আছেন সেখানে।
মায়ামিতে যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে এসবই বলেছেন মেসি, ‘আমরা দুটি কঠিন বছর কাটিয়েছি (প্যারিসে)। সত্যি বলতে সেখানে ভালো ছিলাম না এবং তার খেসারতও দিতে হয়েছে। আর তাই আমরা বার্সেলোনায় যেমন ছিলাম, তেমন থাকতে চেয়েছি। সন্তানদের নিয়ে প্রতিটি দিন উপভোগ করেছি, আর তাই পরিবারকে ভালো রাখাটাই ছিল মূল কারণ।’
মেসি এরপর বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, ‘আমি খেলাধুলায় প্রতিটি দিন উপভোগ করি, যেটা (প্যারিসে) আমার ক্ষেত্রে ঘটছিল না। এমন অনেক কারণ মিলিয়েই আমরা এই জায়গাটিকে (ইন্টার মায়ামি) বেছে নিই। আর আমার মনে হয়, কিছুদিন এখানে কাটানোর পর বুঝতে পেরেছি সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল না। ফুটবল খেলাটা উপভোগ করাই আমার সুখ, যেটা আমি এখানে করতে পারছি এবং আমার মনে হয় এটাও (মায়ামিতে যোগ দেওয়ার) আরেকটি কারণ। উপভোগ করার যে ব্যাপারটা হারিয়ে ফেলেছিলাম, সেটা খুঁজে পেয়েছি। জাতীয় দলের সঙ্গে আমার সময়গুলো সবচেয়ে সুখের, কারণ, ওই জায়গাটা আমি উপভোগ করি এবং সৃষ্টিকর্তাতে ধন্যবাদ যে সেটা এখানে খুঁজে পেয়েছি।’