‘গ্রেটদের কাতারে নাম লেখাবে এনদ্রিক’
বাঁ পায়ের আঁচড়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অভিষেক স্মরণীয় করে রাখলেন এনদ্রিক। বাঁ পা—এর জায়গায় চাইলে ‘তুলি’ শব্দটি বসিয়ে নিতে পারেন। দুরূহ কোণ থেকে অমন দর্শনীয় ভলিতে করা গোল তো আর প্রতিদিন দেখা যায় না!
গোলটি করেই ডান দিকে গ্যালারির দিকে খানিকটা ছুটে গেলেন এনদ্রিক। সতীর্থরা ততক্ষণে তাঁকে ঘিরে ধরেছেন। গোল উদ্যাপন চলল কিছুক্ষণ। এনরিকে সেই দঙ্গল থেকে বের হয়ে গ্যালারির দিকে ছুটলেন। বাঁ হাতের তর্জনী উঁচু করে কাকে যেন খুঁজছিলেন। পেয়ে যেতেই জড়িয়ে ধরলেন তাঁকে। ডগলাস! এনদ্রিকের বাবা।
বাবাকে জড়িয়ে ধরে কিছুক্ষণ আদর-টাদর নিয়ে ১৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড আবারও ছুটলেন মাঠে। না, আর গোল পাননি। বার্নাব্যুতে শেষ বাঁশি বাজার সময় স্পেন-ব্রাজিলের প্রীতি ম্যাচের স্কোরলাইন ৩-৩। কেউ জেতেনি। একটু ভুল হলো। এনদ্রিক জিতেছেন। সেটা অন্যরকম এক জয়। গ্যালারিতে তাঁর প্রেমিকা গাব্রিয়েলিও ছিলেন। ম্যাচ শেষে তাঁর সঙ্গে দেখাও করেছেন এনদ্রিক।
একবার ভেবে দেখুন তো—১৭ বছর বয়সী একটি ছেলে, আগামী জুলাইয়ে আঠারোয় পা রাখার পর এই বার্নাব্যুই হবে তাঁর ঘরের মাঠ, আর সে মাঠেই কি না তাঁর অভিষেক হলো দুর্দান্ত এক গোলে, সেটাও বাবা এবং প্রেমিকাকে সাক্ষী রেখে!
শুধু কী তাই, এক সপ্তাহেই ইউরোপে নিজের জাত চিনিয়েছেন এনদ্রিক। গত শনিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের জয়ে গোল করেছিলেন ঐতিহ্যবাহী ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে। আর গতকাল রাতে করলেন ইউরোপের আরেক ঐতিহ্যবাহী স্টেডিয়াম বার্নাব্যুতে। সাধেই কি আর স্পেনের সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’ লিখেছে—‘বার্নাব্যুতে নিজেকে চিনিয়েছেন এনদ্রিক।’
শিরোনামটা আংশিক সত্য। শুধু বার্নাব্যু নয়, এই এক সপ্তাহে গোটা ইউরোপকেই নিজের জাত চিনিয়েছেন এনদ্রিক। আর সেই ‘জাত’টা কোন ঘরানার, সেটা ম্যাচ শেষে বলেছেন ব্রাজিলের কোচ দরিভাল জুনিয়র, ‘সে (এনদ্রিক) যদি নিজের পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে পারে তাহলে গ্রেটদের কাতারে নাম লেখাবে।’
সেই পূর্ণ বিকাশের জন্য আপাতত তাই অপেক্ষা করতেই হচ্ছে। অপেক্ষায় রিয়ালও। এনদ্রিকের বয়স ১৮ হওয়ার পর-ই যে তাঁকে তারা খেলাতে পারবে। চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতা আগেই সেরে রেখেছে রিয়াল। স্পেন-ব্রাজিল ম্যাচ শেষে বার্নাব্যুতে ব্রাজিলের ড্রেসিংরুমে ঢুকে এনদ্রিককে সে কথাই বলেছেন রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। ভিনিসিয়ুস ও রদ্রিগোর সামনে এনদ্রিকের কাঁধে হাত রেখে পেরেজ বলেছেন, ‘আমরা তোমার অপেক্ষায় আছি।’
আর এনদ্রিক? যাকে ঘিরে এত আলোচনা, এত কথা, তার-ও তো নিশ্চয়ই কিছু বলার আছে! ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ তাঁর মন্তব্য প্রকাশ করেছে। ম্যাচ শেষে এনদ্রিকের বলা কথাগুলো শুনলে মনে হয়, বাবা-মা ও ভাই—অর্থাৎ পরিবার এখনো ১৭ বছর বয়সী ছেলেটির গোটা জগৎ-সংসার! এনদ্রিকের মুখেই শুনুন, ‘ম্যাচ শেষে পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছি। কারণ যখন ভালো অবস্থায় ছিলাম না, সবাই সমালোচনা করছিল, তখন শুধু তারাই আমার পাশে ছিল। তাদের আমি সব সময়ই ধন্যবাদ জানাই এবং সৃষ্টিকর্তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেই। তিনি ছাড়া আমি কিছুই না।’
এনদ্রিক তাঁর ভাই নোয়াকেও স্মরণ করেছেন, ‘ভাই আমাকে আবারও এক মিলিয়ন গোল করার কথা বলেছে (হাসি)। একটি গোল অন্তত করতে পেরেছি এবং ব্রাজিলে ফিরতে আর দেরি সইছে না। তাকে জড়িয়ে ধরতে চাই।’
বার্নাব্যুর রিয়াল-ভক্তরাও মনে মনে জড়িয়ে ধরেছেন এনদ্রিককে। সেটি আন্দাজ করে নেওয়া যায়, রিয়ালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা যে অঞ্চলে (কাতালুনিয়া) অবস্থিত, সেখানকার সংবাদমাধ্যম ‘স্পোর্ত’ এর লেখায়, ‘বার্নাব্যুকে পকেটে পুরেছেন এনদ্রিক।’