সুযোগ হাতছাড়া করে পিয়ানিচ–আলকাসারদের কাছে হারল কিংস
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বসুন্ধরা কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোন বলেছিলেন, ১১ জন বনাম ১১ জনের খেলায় সুযোগ কাজে লাগানোর কথা। অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী শারজা এফসির বিপক্ষে আজ সেই সুযোগ ঠিকই এসেছিল বসুন্ধরা কিংসের সামনে। কিন্তু প্রতিপক্ষের মাঠে পাওয়া সেসব সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন দরিয়েলতন গোমেজ-মিগুয়েল ফেরেইরারা। তবে বসুন্ধরা না পারলেও ভুল করেনি শারজা। ঘরের মাঠে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার লুয়ান পেরেইরার জোড়া গোলে বসুন্ধরাকে ২–০ গোলে হারিয়েছে শারজা। এই হারে এএফসি চ্যাম্পিয়নস লিগের বাছাইপর্ব থেকেই বিদায় নিল বসুন্ধরা।
সাবেক বার্সেলোনা তারকা মিরালেম পিয়ানিচ ও পাকো আলকাসারদের নিয়ে গড়া শারজা এই ম্যাচে ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিল। ম্যাচে দাপটও ছিল তাদের। তবে রক্ষণে দৃঢ়তা দেখিয়ে শুরুতে জবাবটা ভালোই দিয়েছিল বসুন্ধরা। প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটা শারজার মতো দলের বিপক্ষে গোল না খেয়ে থাকাটাও কম কথা নয়। কিন্তু ফলটা নিজেদের পক্ষে নিতে সামর্থ্যের চেয়েও বেশি দিতে হতো বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়নদের। সেই কাজই করতে পারেনি তারা। সামনে আসা সুযোগগুলো কিংস কাজে লাগাতে পারলে এই ম্যাচের ফল অন্য রকম হতো।
শারজা স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলা শুরু করে স্বাগতিকেরা। এ সময় বসুন্ধরার সব খেলোয়াড় জমা হয়েছিলেন নিজেদের অর্ধে। চাপ সামলাতে না পেরে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ফাউল করে ম্যাচের ৩ মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন বসুন্ধরার রাকিব হোসেন। ৬ মিনিটের মাথায় দারুণ এক সুযোগ পেয়ে এগিয়ে যেতে পারত শারজা। তবে সাবেক বার্সেলোনা তারকা পাকো আলকাসারকে রুখে দেন বসুন্ধরা গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো।
প্রতি আক্রমণ থেকে এক–দুবার চেষ্টা করলেও বসুন্ধরা খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না। ম্যাচের প্রথম ২০ মিনিট মাঠজুড়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে শারজা। তবে আক্রমণে যতটা দাপট ছিল, সুযোগ তৈরিতে ততটা ছিল না। বসুন্ধরার জমাট রক্ষণে বারবার আটকে গেছে তাদের আক্রমণগুলো। ওদিকে আকস্মিক আক্রমণে গিয়ে শারজাকে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করেছে বসুন্ধরা। কিন্তু সেই আক্রমণগুলো গোল আদায়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ২৬ মিনিটে পেরেইরার শট লক্ষ্যভ্রষ্ট না হলে তখনই লিড নিতে পারত শারজা।
ম্যাচের ৩৩ মিনিটে প্রথম কর্নার পায় বসুন্ধরা। সেই কর্নার থেকে সুযোগ এসেছিল ব্রুজোনের দলের সামনে। কিন্তু দরিয়েলতনের নেওয়া হেড অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে যায়। একটু পর ফ্রি–কিকও পায় বসুন্ধরা। যদিও সেটিকে কাজে লাগাতে পারেননি অস্কার ব্রুজোনের শিষ্যরা। ৩৯ মিনিটে বসুন্ধরার এক খেলোয়াড়কে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন সাবেক বার্সা ও জুভেন্টাস তারকা মিরালেম পিয়ানিচ। ৪০ মিনিটে সেই পিয়ানিচ বিপজ্জনকভাবে ঢুকে পড়েছিলেন বসুন্ধরার রক্ষণে। কিন্তু তাঁকে কোনো সুযোগ দেয়নি বসুন্ধরার ডিফেন্স।
প্রথমার্ধের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত আমিরাত লিগের ছয়বারের চ্যাম্পিয়নদের আটকে রাখতে পারে বসুন্ধরা। কিন্তু যোগ করা সময়ে আক্রমণের চাপে ভেঙে পড়ে বসুন্ধরার প্রতিরোধ। বিরতির আগমুহূর্তে কাইওর কাছ থেকে ডি–বক্সের ভেতর বল পেয়ে দারুণভাবে সেটি বাড়ান পিয়ানিচ। দারুণ ফিনিশিংয়ে সেই বলকে জালের পথ দেখান ব্রাজিলিয়ান তারকা পেরেইরা।
বিরতির পরও খেলার ধরন বদলায়নি শারজা। আক্রমণাত্মক ফুটবলে ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা করে তারা। তবে পাল্টা আক্রমণ থেকে গোলের সুযোগ এসেছিল বসুন্ধরার সামনে। সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন মিগুয়েল পেরেইরা। ৫২ মিনিটে গোল করার দারুণ সুযোগ এসেছিল বসুন্ধরার সামনে। কিন্তু মিগুয়েলের কাছ থেকে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়েও শট নিতে দেরি করে ফেলেন দরিয়েলতন। পরে তাঁর শট সহজেই রুখে দেন শারজার গোলরক্ষক।
এমন সহজ সুযোগ হাতছাড়া করার পর বসুন্ধরার জন্য ম্যাচে ফেরা কঠিন ছিল। শেষ পর্যন্ত হয়েছেও তাই। আরও একাধিকবার গোলের সম্ভাবনা অবশ্য জাগিয়েছিল তারা। কিন্তু পাওয়া হয়নি কাঙ্ক্ষিত গোলটি। উল্টো ৭১ মিনিটে পিয়ানিচের ফ্রি-কিক থেকে গোল প্রায় হজম করে ফেলেছিল বসুন্ধরা। তবে সে যাত্রায় দলকে বাঁচান গোলরক্ষক জিকো। এরপরও অবশ্য শেষ রক্ষা হয়নি বসুন্ধরার। একটু পর সালিম আলীর ক্রস থেকে দারুণ এক হেডে নিজের ও দলের দ্বিতীয় গোলটি করেন পেরেইরা। এই গোলের পরই মূলত নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। শেষ পর্যন্ত আর কোনো দল গোল না পেলে ২–০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে শারজা।