হারের বিব্রতকর রেকর্ডের পর শিরোপা হারানোর শঙ্কায় গার্দিওলা

ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করছেন গার্দিওলারয়টার্স

সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নবাণ যতই তীক্ষ্ণ হচ্ছিল, পেপ গার্দিওলার কপালের ভাঁজগুলো স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছিল। একটু আগে ইতিহাদে যে বিব্রতকর ঘটনার সাক্ষী হয়ে এসেছেন, সেটাই যেন ক্রমেই ফুটে উঠছিল গার্দিওলার কপালে। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে হার। অবিশ্বাস্য! এই অবিশ্বাস দল হিসেবে ম্যানচেস্টার সিটির জন্য যতটা সত্য, একইভাবে গার্দিওলার জন্যও।

টানা চার মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন, সব মিলিয়ে শেষ ছয়বারের মধ্যে পাঁচবারই ট্রফির গায়ে লেখা হয়েছে ইতিহাদের ক্লাবটির নাম। এ মৌসুমেও হট ফেবারিট হিসেবেই শুরুটা করেছিল সিটি। কিন্তু দিন যতই গড়াচ্ছে, সিটির দুর্দশা ক্রমেই বাড়ছে। গতকাল রাতে ঘরের মাঠেই ৪–০ গোলে বিধ্বস্ত হলো টটেনহামের কাছে। এই স্কোরলাইন এতই বিস্ময়কর যে প্রথমবারেই বিশ্বাস করা কঠিন। চোখ কচলে দ্বিতীয়বার দেখে নিতে হয়। দলটা সত্যিই সিটিই তো!

সিটির এমন দুর্দশার জন্য দায়ী করা হচ্ছে দলে একের পর এক চোটকে। বিশেষ করে দলের অন্যতম সেরা তারকা ও ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার রদ্রির চোটকেই সামনে আনা হচ্ছে বারবার। কিন্তু শুধু চোটকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোই হয়তো সবটা বলে না। কারণ, প্রতি মৌসুমেই এমন একটা সময় আসে, যখন চোট হানা দেয়। দল সেরা অবস্থায় থাকে না।

আরও পড়ুন

কিন্তু এরপরও নিজেদের টিকিয়ে রাখার উপায়টা ঠিকই বের করে নেন গার্দিওলা এবং পাশার দান উল্টে বাজিমাতও করেন। কিন্তু এবার সিটির খেলার ধরন, শরীরী ভাষা থেকে শুরু করে কৌশলগত জায়গাগুলোও কেমন যেন মলিন হয়ে গেছে। রক্ষণে সেই দৃঢ়তা যেমন নেই, আক্রমণভাগের তীব্রতাও কমে গেছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, গার্দিওলার জাদুর ছড়িও আর স্পর্শেই বদলে দিতে পারছে না ম্যাচের রং।

৬৮ বছর পর ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ স্তরে কোনো চ্যাম্পিয়ন দল এই প্রথম সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা ৫ ম্যাচ হারল। ১৯৫৬ সালে সর্বশেষ এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল চেলসির।

গার্দিওলার জন্য দুঃসংবাদ অবশ্য এখানেই শেষ হচ্ছে না। এমনকি লিগে পরের ম্যাচে হার শিরোপা ধরে রাখার পথও বন্ধ করে দিতে পারে। কারণ, পরের ম্যাচটি সিটি খেলবে শীর্ষে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে। লিভারপুল বর্তমানে এক ম্যাচ কম খেলে সিটির চেয়ে ৫ পয়েন্টে এগিয়ে। আজ রাতে সাউদাম্পটনের মাঠে জিতলে সিটির সঙ্গে লিভারপুলের পয়েন্ট ব্যবধান হবে ৮। আর ১ ডিসেম্বর অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের কাছে সিটি হারলে সেই ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াবে ১১।

৫২ ম্যাচ পর ঘরের মাঠে হেরেছে সিটি
রয়টার্স

১১ পয়েন্টে পিছিয়ে শিরোপা জিততে হলে অলৌকিক কিছুর অপেক্ষাতেই থাকতে হবে সিটিকে। সে ক্ষেত্রে নিজেদেরকে যেমন অবিশ্বাস্য ছন্দে ফিরতে হবে, তেমনি প্রতিপক্ষের বিপর্যয়ের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে। পাশাপাশি সিটির ২৩ পয়েন্টের বিপরীতে ২২ পয়েন্ট নিয়ে ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছে আরও তিনটি দল। চেলসি, আর্সেনাল ও ব্রাইটনকে নিয়েও তাই আলাদা করে ভাবতে হবে গার্দিওলাকে।

দ্বিতীয় দল হিসেবে গার্দিওলার দলকে তাদের মাঠে ৪–০ গোলে হারাল টটেনহাম। ২০১৩–১৪ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে একই কাজ করেছিল রিয়াল মাদ্রিদ।

লিভারপুলের বিপক্ষে হারলে সেটি সিটির লিগ শিরোপা হাতছাড়া করার কারণ হবে কি না, জানতে চাইলে গার্দিওলা বলেছেন,‘হ্যাঁ, এটা সত্য। আমরা এখন শিরোপা জেতা বা হারানোর কথা ভাবছি না। মৌসুম শেষে কী হতে পারে, সেটা নিয়ে ভাবার মতো পরিস্থিতিতে আমরা নেই। শেষ পর্যন্ত আমরা যদি না জিতি তার মানে আমরা এটার দাবিদার নই। আর অতীতে এটা জিতেছি, কারণ আমরা এটার দাবিদার ছিলাম।’

ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো লিগে টানা তিন ম্যাচে হার দেখলেন গার্দিওলা। এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসে বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। সেবার বুন্দেসলিগা জয় নিশ্চিত করার পর লেভারকুসেন, অগসবুর্গ এবং ফেইবুর্গের কাছে হেরেছিল গার্দিওলার বায়ার্ন।

গত আট বছরে সিটি এমন পরিস্থিতিতে আর পড়েনি উল্লেখ করে গার্দিওলা আরও বলেছেন, ‘গত আট বছরে আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়িনি। আমি জানতাম, আগে পরে আমরা ধাক্কা খাব। কিন্তু টানা তিন প্রিমিয়ার লিগ ম্যাচ হারার বিষয়টি আশা করিনি।’

পরিস্থিতি অবশ্য যতই খারাপ হোক, উত্তরণের পথ গার্দিওলা নিশ্চয় বের করে নেবেন। ক্যারিয়ারে এমন চ্যালেঞ্জে কখনো পড়তে না হলেও হারার আগে যে হারতে নেই, সেটা তিনি ভালোভাবেই জানেন। এখন সামনের ম্যাচগুলোয় গার্দিওলা নতুন কোনো ব্রহ্মাস্ত্র নিয়ে হাজির হন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।

গার্দিওলা খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে এই প্রথম টান পাঁচ ম্যাচ হারের বিব্রতকর স্বাদ পেলেন।