‘বাচ্চা’ চেলসিকে নিয়ে খেলল আর্সেনাল

এমিরেটস স্টেডিয়ামে আর্সেনাল–চেলসি ম্যাচের স্কোরকার্ডএএফপি

হাল ছেড়ে দিয়েছিল চেলসি। মাঠের খেলায় সেটি স্পষ্ট বোঝা গেছে। তাতে কেউ কেউ মজাও নিচ্ছেন। চেলসি ডিফেন্ডার থিয়াগো সিলভার স্ত্রী বেলে যেমন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘কিছু দেখিনি, কিছু শুনিনি, কিছু বলিনি’—এমন বোঝানোর ইমোজি পোস্ট করেছেন।

বেলে এর আগে চেলসি কোচ মরিসিও পচেত্তিনোর ছাঁটাই চেয়েছিলেন। স্টামফোর্ড ব্রিজে সেই দাবিটা এখন আরও জোরালো হওয়াই স্বাভাবিক। এমিরেটস স্টেডিয়ামে গতকাল রাতে আর্সেনালের কাছে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়েছে চেলসি। ‘লন্ডন ডার্বি’তে গত ৩৮ বছরের মধ্যে চেলসি কখনো এত বড় ব্যবধানে হারেনি। তবু লড়াই করে হারলেও চেলসি সমর্থকেরা মনকে বুঝ দিতে পারতেন। শেষ দিকে চেলসির খেলা দেখে বোঝা গেছে, বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষের জালে আক্রমণ নয়, তাঁরা শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষায়। সম্ভবত সে জন্যই এমিরেটসের গ্যালারিতে এক চেলসি সমর্থকের ব্যানার এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল, ‘আমি তোমাদের জার্সি চাই না। আমি চাই তোমরা আমাদের হয়ে লড়ো।’

শুধু গতকালের ম্যাচ নয়, গোটা মৌসুমজুড়েই চেলসি এই লড়াইটা করতে পারেনি।

আরও পড়ুন

পয়েন্ট টেবিল তার প্রমাণ। ৩২ ম্যাচে ৪৭ পয়েন্ট নিয়ে নবম স্থানে চেলসি। অথচ ২০২২ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের টড বোয়েলি চেলসি কিনে নেওয়ার পর দলের শক্তি বাড়াতে দলবদলের বাজারে ঢেলেছেন ১০০ কোটি পাউন্ডের বেশি। এ অঙ্কের বিপরীতে কাল রাতের ফলটা যেন ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’! যা দেখে টিএনটি স্পোর্টসে ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাবেক ডিফেন্ডার রিও ফার্ডিনান্ড বলেছেন, ‘দেখে মনে হয়েছে বড়দের বিপক্ষে বাচ্চারা খেলেছে। একদম ধ্বংস হয়ে গেছে।’

হারের পর বিমর্ষ চেলসির খেলোয়াড়েরা
রয়টার্স

অসুস্থতার কারণে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোরার কোল পালমারকে পায়নি চেলসি। কিন্তু সেটি বড়জোর গোল করতে না পারার অজুহাত হতে পারে। এত বড় হারের আসলে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যাই চলে না। মাত্র ৪ মিনিটের মাথায় লিয়ান্দ্রো ত্রোসারের গোলে পিছিয়ে পড়েছিল চেলসি। বিরতির পর সেই দলটাই কি-না ৪ গোল হজম করল! বেন হোয়াইট ও কাই হাভার্টজ বিরতির পর আর্সেনালকে দুটি করে গোল এনে দেন। আর তাতে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে চেলসির বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় পেয়েছে আর্সেনাল। শুধু কী তাই, ধরে রেখেছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থানও।

৩৪ ম্যাচে ৭৭ পয়েন্ট আর্সেনালের। ৩৩ ম্যাচে ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় লিভারপুল। তৃতীয় ম্যানচেস্টার সিটির সংগ্রহ ৩২ ম্যাচে ৭৩। আর্সেনাল শীর্ষে থাকলেও লিগের ভাগ্য নির্ভর করছে সিটির ওপর। কারণ, আর্সেনালের চেয়ে ২ ম্যাচ এবং লিভারপুলের চেয়ে ১ ম্যাচ কম খেলেছে সিটি।

আরও পড়ুন

এই ম্যাচের পর চেলসির খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স নিয়ে নিশ্চয়ই প্রচুর কাটাছেঁড়া হবে? ৫৬ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে প্রতিপক্ষের জালে মাত্র একটি শট রাখতে পারা, যেখানে আর্সেনালের খেলোয়াড়েরা রেখেছেন ১০টি শট—এমন পারফরম্যান্সের পর চেলসি কোচ পচেত্তিনোর ব্যাখ্যা কি হতে পারে?

সংবাদ সম্মেলনে পচেত্তিনো স্বীকার করেছেন, তাঁর খেলোয়াড়েরা ‘হাল ছেড়ে দিয়েছিল।’

তবে পচেত্তিনোর কাছেও এমন হারের ব্যাখ্যা আছে। মৌসুমে এতগুলো ম্যাচের মাঝে কখনো কখনো এমন একটা বাজে দিন যেতেই পারে। পচেত্তিনো এ ক্ষেত্রে কিংবদন্তিদের উদাহরণও টেনেছেন, ‘আমি ফুটবল খেলেছি। বড় মাপের এবং অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে এমন পরিস্থিতি পার করেছি। ডিয়েগো ম্যারাডোনা, রোনালদিনিও, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাদের সঙ্গে খেলেছি। মৌসুমের কোনো কোনো সময় এমন কিছু ঘটতেই পারে এবং তখন বলাই যায়, এসব খেলোয়াড়েরা শীর্ষ পর্যায়ের হলেও হাল ছেড়ে দিয়েছিল।’

জয়ে শীর্ষস্থানে উঠল আর্সেনাল
এএফপি

পচেত্তিনো ব্যাখ্যায় আরও বলেছেন, ‘কখনো কখনো প্রতিপক্ষ, নিজেদের ইচ্ছাশক্তির অভাব এবং পরিস্থিতি থেকে কোনো কিছুই তুলে নেওয়ার না থাকলে ম্যাচেও ইতিবাচক কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন এমন কিছু ঘটতে পারে। আমি নিশ্চিত ব্যাপারটা অন্য দলগুলোর ক্ষেত্রেও ঘটবে।’

বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে ধারে খেলার সময় পচেত্তিনোকে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছেন আর্সেনাল কোচ মিকেল আরতেতা। স্প্যানিশ এই কোচ তখন পচেত্তিনোকে ‘পিতৃতুল্য’ হিসেবে সম্বোধন করতেন।

চেলসি সমর্থকের এই ব্যানার ভাইরাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে
রয়টার্স

এমন এক ব্যক্তিত্বের বিপক্ষে বড় জয় তুলে নেওয়ার পর সমবেদনাই প্রকাশ করলেন আরতেতা, ‘তার জন্য আমার সব রকম সমবেদনা রইল। তিনি দারুণ কাজ করছেন। (চেলসি) দলটার দিকে তাকালে এবং (মাঠে) প্রতিটি সেকেন্ড বিশ্লেষণ করলে বুঝবেন, অনেক ম্যাচেই জয়টা তাদের প্রাপ্য ছিল, বড় দলগুলোর বিপক্ষেও জয় প্রাপ্য ছিল তাদের। আশা করি পরিস্থিতি তার পক্ষে চলে আসবে এবং যেটা প্রাপ্য সেটাই তিনি পাবেন।’

আরও পড়ুন