টাকায় চ্যাম্পিয়নস লিগ মিলছে না ‘দুর্ভাগা’ পিএসজির
আক্রমণভাগে বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় আপনার দলে। শুধু তাঁর (কিলিয়ান এমবাপ্পে) বর্তমান বাজার মূল্য (১৮ কোটি ইউরো) দিয়েই অনেক ক্লাবের পুরো দল হয়ে যায়। বরুসিয়া ডর্টমুন্ড স্কোয়াডের বর্তমান বাজার মূল্যের প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি দামটা। আর পিএসজির গোটা স্কোয়াডের বর্তমান বাজার মূল্য যাচাই করলে ডর্টমুন্ড ধারেকাছেও আসবে না। কোথায় ১০২ কোটি ইউরো, আর কোথায় ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ইউরো! এ দুটি দল মুখোমুখি হলে কী হবে ফলটা আপনার জানা।
ভুল। অন্তত খেলাধুলায় সব সময় টাকায় ফল মেলে না। পিএসজি কোচ লুইস এনরিকে চাইলে এই দাবি করতে পারেন। গতকাল রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল ফিরতি লেগ ১-০ গোলে জিতেছে ডর্টমুন্ড।
দুই লেগ মিলিয়ে ২-০ গোলের জয়ে ফাইনালে উঠেছে জার্মান ক্লাবটি। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, দুই লেগ মিলিয়ে ৪৪টি শট নিয়েও পিএসজি গোল পায়নি। ভাগ্যও সহায় হয়নি। দুই লেগ মিলিয়ে পিএসজি ডর্টমুন্ডের পোস্ট কাঁপিয়েছে ছয়বার! এরপরও যদি গোল না পায় তাহলে তো ফুটবলকে দোষারোপ করাই যায়!
বিদায়ের পর সংবাদ সম্মেলনে তেমন অনুযোগই ঝরল পিএসজি কোচ লুইস এনরিকের কণ্ঠে, ‘এই লেগে ফুটবল আমাদের সঙ্গে ন্যায্য ছিল না। এটা মেনে নিতে হবে, ফাইনালে ওঠা দলকে অভিবাদন জানাতে হবে, শোক পালন শেষে এই হতাশা কাটিয়েও উঠতে হবে।’
স্কোয়াডের দাম বিচারে অর্ধেকও নয়—এমন দলের সঙ্গে হারে, বিশেষ করে দুই লেগ মিলিয়েও গোল করতে পারেনি পিএসজি। ডর্টমুন্ডের মাঠে প্রথম লেগ ১-০ গোলে হারের পর ঘরের মাঠে ৯০ মিনিট সময় পেয়েছিল পিএসজি। অথচ নিজেদের ঘরেও গোল করতে পারেননি কিলিয়ান এমবাপ্পে, উসমান দেম্বেলে, মার্কো আসেনসিও, গনসালো রামোসদের মতো তারকারা!
এনরিকে এর ব্যাখ্যায় টানলেন ভাগ্য সহায় না হওয়ার ব্যাপারটি। অন্তত এটাই বোঝা গেল তাঁর কথায়, ‘এই লড়াইয়ে আমরা খারাপ দল ছিলাম না। আমরা ছয়বার বল পোস্টে মেরেছি। ফুটবলের কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাপার হলো, কখনো কখনো ন্যায্যতা মেলে না— (ফিরতি লেগে) আমরা ৩১টি শট নিয়েছি, কিন্তু একটি গোলও পাইনি।’
ফিরতি লেগে চারবার বল পোস্টে মেরেছেন পিএসজির খেলোয়াড়েরা। তবে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে এনরিকে সন্তুষ্ট। হারের দায়ও নিয়েছেন নিজের কাঁধেই, ‘আমি নিজের দল নিয়ে খুব গর্বিত। এই হারের জন্য দায়টা সবার আগে আমারই। তবে খেলোয়াড়দের নিয়ে সন্তুষ্ট।’
ঘরোয়া লিগ জয় আগেই নিশ্চিত করেছে পিএসজি। ২৫ মে ফ্রেঞ্চ কাপের ফাইনালে লিঁও-এর মুখোমুখি হবে এনরিকের দল। পিএসজির হয়ে এটি হতে পারে এমবাপ্পের শেষ ম্যাচ। মৌসুম শেষে তাঁর চুক্তির মেয়াদ ফুরোবে ক্লাবটির সঙ্গে। রিয়াল মাদ্রিদে যাবেন এমন জোর গুঞ্জনও চলছে। তবে অফিশিয়ালি কোনো কিছুই নিশ্চিত হয়নি।
পিএসজির হয়ে এটাই শেষ ইউরোপিয়ান ছিল কি না—ম্যাচ শেষে এমন প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য উল্টো ইঙ্গিতই দিয়েছেন এমবাপ্পে, ‘এই মৌসুমের জন্য অবশ্যই (শেষ ম্যাচ)।’
ড্রেসিংরুমে এমবাপ্পে-দেম্বেলেরা যখন শোকাহত, এনরিকে তাঁদের থেকে দূরে থাকেননি। কাছে গিয়ে সান্ত্বনা দিয়েছেন। কিন্তু এমন হারের কি কোনো সান্ত্বনা হয়? এনরিকে পরোক্ষভাবে যেন এ প্রশ্নটাই তুললেন, ‘ম্যাচ শেষে কখনোই আমি খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলি না। কিন্তু আজ (গতকাল রাতে) ব্যতিক্রম হয়েছে। তাদের স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি কিন্তু এমন হারের তো কোনো সান্ত্বনা হয় না। কিন্তু এটাই খেলাধুলা, এটাই জীবন। এটা গুরুত্বপূর্ণ যে কীভাবে জিততে হয়, তার পাশাপাশি কীভাবে হারতে হয়—সেটাও জানা।’