সময়টা ভালো যাচ্ছে না লিভারপুলের। প্রিমিয়ার লিগে ৯ নম্বরে অবস্থান করে রীতিমতো ধুঁকছে অ্যানফিল্ডের দলটি। চ্যাম্পিয়নস লিগেও শুরুটা হয়েছিল অম্ল-মধুর। আয়াক্সের বিপক্ষে ২-১ গোলে জিতলেও, তার আগে নাপোলির কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল ৪-১ গোলে।
তবে দুঃসময় ভুলে ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিল ‘অল রেড’রা। ঘরের মাঠে রেঞ্জার্সকে ২-০ গোলে হারিয়েছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। দুর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আরনল্ড এগিয়ে দেওয়ার পর পেনাল্টি গোলে ব্যবধান দ্বিগুন করেন মোহাম্মদ সালাহ।
ম্যাচের ফলে অবশ্য পুরো চিত্রটা বোঝা যাচ্ছে না। অ্যানফিল্ডে গোছানো ফুটবলে রেঞ্জার্সকে শুরু থেকে বেশ চাপে রাখে লিভারপুল। গোলরক্ষক অ্যালান ম্যাকগ্রেগর বারবার বাধা হয়ে না দাঁড়ালে গোল-বন্যায় ভাসতে পারত স্কটিশ ক্লাবটি।
শেষ দিকে কয়েকটি আক্রমণ বাদ দিলে ম্যাচের বেশিরভাগ সময় বল স্পর্শ করতেই নাভিশ্বাস উঠেছে রেঞ্জার্সের। ম্যাচের প্রথমার্ধে লক্ষ্যে একটা শটও নিতে পারেনি তারা।
এই ম্যাচ শুরুর আগে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান লিভারপুলের পক্ষে ছিল না। স্কটিশ প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে সর্বশেষ তিন ম্যাচ জয়হীন ছিল ‘অল রেড’রা। তবে ‘চিরশত্রু’ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন এবং ঘরের ছেলে স্টিভেন জেরার্দের সাবেক এই ক্লাবটির বিপক্ষে (দুজনই আলাদা আলাদা সময়ে রেঞ্জার্সকে কোচিং করিয়েছেন) এদিন ভিন্ন পণ নিয়েই মাঠে নামে চ্যাম্পিয়নস লিগের অন্যতম সফল দলটি।
এদিন ম্যাচের শুরুতেই গোলের সুযোগ তৈরি করে লিভারপুল। যদিও সালাহ-জোতাদের সেই প্রচেষ্টা কাজে লাগেনি। গোলের জন্য অবশ্য ৭ মিনিটের বেশি অপেক্ষাও করতে হয়নি লিভারপুলকে।
ফ্রি-কিক থেকে দুর্দান্ত গোলে দলকে এগিয়ে দেন আরনল্ড। গোল করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় লিভারপুল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে সংগ্রাম করতে থাকা দলটিকে এ সময় বেশ আত্মবিশ্বাসীও মনে হচ্ছিল। গুছানো ফুটবলে রেঞ্জার্সকে চাপেও রাখে তারা।
১১ মিনিটে অল্পের জন্য নিরাশ হন লিভারপুল ফরোয়ার্ড লুইস দিয়াজ। ৩ মিনিট পর সালাহকে দারুণ নৈপুণ্যে নিরাশ করেন রেঞ্জার্স গোলরক্ষক ম্যাকগ্রেগর। লিভারপুলের আক্রমণাত্মক ফুটবলের বিপরীতে প্রতি-আক্রমণে দুয়েকবার লিভারপুল রক্ষণে টোকা দেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই করতে পারেনি রেঞ্জার্স।
১৮ মিনিটে রেঞ্জার্স ফ্রি-কিক আদায় করলেও তা থেকেও আসেনি কোনো সাফল্য। ৩৪ মিনিটে আবার ম্যাকগ্রেগর কৃতিত্বে বেঁচে যায় দলটি। এবার কাছাকাছি জায়গা থেকে দারউইন নুনিয়েজের শট ঠেকিয়ে দেন ম্যাচে দারুণ খেলা এই গোলরক্ষক। ৪৩ মিনিটে ফের নুনিয়েজকে নিরাশ করেন ম্যাকগ্রেগর। গোলরক্ষকের দৃঢ়তার কারণেই প্রথমার্ধে ৩-৪ গোল হজম করা থেকে বেঁচে যায় রেঞ্জার্স।
এটি ছিল ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় লিভারপুল ও রেঞ্জার্সের প্রথম ম্যাচ। তবে প্রথমার্ধে লিভারপুলকে কোনো পরীক্ষাতেই ফেলতে পারেনি অতিথিরা। লিভারপুলের দাপুটে ফুটবলে কোণঠাসা রেঞ্জার্স খেলোয়াড়েরা শুধু বলের পেছনে ছুটেই সময় কাটিয়েছেন।
প্রথমার্ধের প্রায় পুরোটাতেই বেশিরভাগ রেঞ্জার্স খেলোয়াড়েরা নিজেদের অর্ধেই ব্যস্ত সময় পার করেছেন। লিভারপুল গোলরক্ষক অ্যালিসন একরকম বেকার-ই বসে ছিলেন।
বিরতির একটু পর লিভারপুলের আক্রমণের চাপ সামলাতে না পেরে দিয়াজকে শেষ পর্যন্ত ফাউলই করে বসেন রেঞ্জার্স ডিফেন্ডার লিয়ন কিং। পেনাল্টি থেকে নিঁখুত শটে বল জালে জড়ান সালাহ।
২-০ গোলে এগিয়ে থাকা লিভারপুলকে একটু পর আবার নিরাশ করেন ম্যাকগ্রেগর। এবার জোতার বুলেট গতির শট আঙুল ছুঁয়ে বাইরে পাঠান এই গোলরক্ষক। শেষ দিকে গিয়ে অবশ্য লিভারপুলকে চাপে ফেলে সুযোগ তৈরি করেছিল অতিথিরা। তবে স্বাগতিকদের রক্ষণ-বাঁধা পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা পায়নি রেঞ্জার্স।
এই জয়ে গ্রুপ ‘এ’তে ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ২ নম্বরে থাকল লিভারপুল। টানা তিন জয়ে শীর্ষে নাপোলি। ১৩ অক্টোবর রেঞ্জার্সের মাঠে দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে আতিথ্য নেবেন সালাহ-জোতারা।
একই রাতের অন্য ম্যাচে গ্রুপ ‘বি’তে ক্লাব ব্রুগার বিপক্ষে ২-০ গোলে হেরেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। এই হারে গ্রুপে তলানিতে অবস্থান করছে ডিয়েগো সিমিওনের দল। অন্য দিকে টানা তিন জয়ে চমক দেখিয়ে শীর্ষে থাকল ব্রুগা।