নিষিদ্ধ পগবার ক্যারিয়ার কি এখানেই শেষ
‘খেলাধুলার পেশাদার ক্যারিয়ারে যা কিছু গড়েছি, তার সবই কেড়ে নেওয়ায় আমি বিস্মিত, দুঃখ পেয়েছি, হৃদয়টা ভেঙে গেছে’—কথাটা পল পগবার।
নিষিদ্ধঘোষিত ড্রাগ গ্রহণের দায়ে গতকাল চার বছর নিষিদ্ধ হওয়ার পর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে এই কথা বলেছেন ৩০ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার। পোস্টে পগবা আরও বলেছেন, ‘আইনি বাধ্যবাধকতা সরে যাওয়ার পর গোটা গল্পটা জানা যাবে। কিন্তু আমি জেনে–বুঝে এবং ইচ্ছা করে কখনো এমন কিছু গ্রহণ করিনি, যার কারণে ডোপিং নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে।’
ফ্রান্সের বিশ্বকাপজয়ী এই ফুটবলার নিষেধাজ্ঞার রায়কে ‘ভুল’ দাবি করে সর্বোচ্চ ক্রীড়া আদালতে (কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট বা সিএএস) আপিল করার কথাও বলেছেন। পগবা জানেন এই শাস্তির মেয়াদ শেষ হতে হতে তাঁর বয়স পঁয়ত্রিশ ছুঁই ছুঁই হবে—তখন তো ক্যারিয়ার প্রায় শেষই। তাই যা করার একটু দ্রুতই করতে হবে। অবশ্য তাতে কতটুকু সুফল মিলতে পারে কে জানে! ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে বিবিসি, মেইল অনলাইন, গোল ডট কম কিন্তু পগবার ক্যারিয়ারের শেষ দেখছে।
ছয় বছর বয়সে ফ্রান্সের ইউএস রইসি-এন-ব্রি ক্লাবে যোগ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু পগবার। সেখান থেকে টর্সি, লে হার্ভে হয়ে যোগ দেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বয়সভিত্তিক দলে। ২০১১ সালে ক্লাবটির মূল দলে সুযোগ পাওয়ার আগে থেকেই পগবাকে ভাবা হচ্ছিল উঠতি মিডফিল্ডারদের মধ্যে সেরা সহজাত প্রতিভা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দুই দফায় মোট ৮ মৌসুম কাটানো এবং জুভেন্টাসে দুই দফায় মোট ৬ মৌসুম কাটানো পগবার ক্লাব ক্যারিয়ারে সাফল্য একেবারে কম নেই। সিরি আ জিতেছেন ৪ বার। ইউরোপা লিগ, লিগ কাপ ও কোপা ইতালিয়াও জিতেছেন। ২০১৩ সালে ফ্রান্সের জার্সিতে অভিষিক্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৯১ ম্যাচে ১১ গোল করা পগবা জিতেছেন ২০১৮ বিশ্বকাপ।
প্রতিভা নিয়ে কখনো কোনো প্রশ্ন না থাকলেও পগবার ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল সব সময়ই। মেজাজ হারানোর পাশাপাশি মাঝেমধ্যেই জড়িয়ে পড়েছেন বিতর্কে। কিন্তু ভুল থেকে কখনো শিক্ষা নেননি। সে জন্যই সম্ভবত পগবার সামনে এখন নির্মম বাস্তবতা।
পগবাকে সেই বাস্তবতা চোখ রাঙাচ্ছে এভাবে—আপিলে রায় নিজের পক্ষে আনতে ব্যর্থ হলে পগবাকে নিষেধাজ্ঞার পুরোটা সময়ই মাঠের বাইরে থাকতে হবে। সেটি ২০২৭ সালের আগস্ট পর্যন্ত। সে সময় ৩৫ ছুঁই পগবার কোনো ক্লাব থাকবে না। দীর্ঘদিন খেলার বাইরে থাকায় মরচে পড়বে পা দুটিতেও। চোট এবং অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে যে খেলোয়াড় প্রায় কোনো মৌসুমেই ক্লাবকে নিজের পুরোটা দিতে পারেননি, সেই খেলোয়াড় এই দীর্ঘ নিষেধাজ্ঞার মধ্যে নিজেকে ফিট রাখবেন কীভাবে?
কিংবা প্রশ্নটা এভাবেও করা যায়, চার বছর পর মাঠে ফেরার প্রেরণাটা কি তিনি ধরে রাখতে পারবেন? এই প্রশ্নের উত্তর শুধু পগবাই দিতে পারেন। ফ্রান্সের ফুটবল সংবাদকর্মী হুলিয়েন লরেন্সের কথা শুনলে মনে হবে পগবার শেষটা তিনি দেখতে পাচ্ছেন, ‘তাকে প্রথম দেখি ১৫ বছর বয়সে এবং সে সময় সে-ই ছিল আমার দেখা সেরা প্রতিভা...ভেবেছিলাম সে সেরাদের কাতারে উঠে আসবে, ব্যালন ডি’অর জিতবে এবং সেরা খেলোয়াড় হবে। কিন্তু শেষবেলায় এসে আমরা তার ক্যারিয়ার এবং তার দিকে তাকিয়ে ভাবছি, কী কী হওয়া উচিত ছিল।’
অর্থাৎ প্রত্যাশার প্রতিদান দিতে পারেননি পগবা। তাই ‘শেষ বেলা’য় পেছন ফিরে তাকিয়ে ভাবতে হচ্ছে, পগবার ক্যারিয়ারে কী কী হওয়া উচিত ছিল। তবে পগবার ক্যারিয়ার বাঁচানোর সুযোগ একদমই নেই—সে কথাও বলা যায় না। লরেন্সের কথা শুনলে মনে হবে, পগবা একটি ভুল না করলে শাস্তির মেয়াদটা কমতে পারত, ‘যেটা বলা হয়েছে—তার (পগবা) মায়ামিতে এক চিকিৎসক বন্ধু আছে। তিনি তাকে কিছু ফুড সাপ্লিমেন্ট দিয়েছিলেন। সেগুলোর ভেতর কী কী উপাদান আছে—তা না জেনেই গ্রহণ করায় এই ঝামেলাটা হয়েছে। সে কিন্তু বলতে পারত “আমি বোকার মতো কাজ করেছি। খেয়াল করিনি কোন কোন উপাদান ছিল এবং ব্যাপারটা আমার (পগবার বর্তমান ক্লাব) জুভেন্টাসের মেডিকেল স্টাফদের জানানো উচিত ছিল।” তাহলে হয়তো নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ কমত।’
ইতালির ফুটবল বিশেষজ্ঞ মিনা রাউকির কথা শুনুন, ‘অ্যাথলেট যদি প্রমাণ করতে পারে তিনি জেনেবুঝে (নিষিদ্ধ উপাদান) খাননি তাহলে শাস্তির মেয়াদ কমতে পারে। কিংবা যদি এটা প্রমাণ করতে পারেন উপাদান দূষিত ছিল, এমনকি তদন্তে সাহায্য করলেও কমতে পারে। তাই ব্যাপারটা যে অনিচ্ছাকৃত এটা—সেটা প্রমাণের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে। তাহলে হয়তো শাস্তির মেয়াদ দুই বছর কমতে পারে এবং তাতে সে মাঠেও ফিরতে পারবে।’
কিন্তু সেটি না পারলে? বিবিসিকে উত্তরটা দিয়েছেন লরেন্স, ‘আমার মনে হয় চার বছরে এটাই হবে (ক্যারিয়ার শেষ)। এখন সে ৩১ ছুঁই। এর সঙ্গে চার বছর যোগ করুন। আর চোটের কারণে গত ১৮ মাসের মধ্যে সে বলতে গেলে মাঠেই নামতে পারেনি। তাই ব্যাপারটা শুধু চার বছরের নয়, এটা আসলে ছয় বছর। আমার মনে হয় না ৩৫ বছর বয়সে সে আবারও মাঠে নামতে চাইবে। তাই মেয়াদ না কমলে আমার মনে হয় ব্যাপারটা এমনই হবে। তবে দুই বছর কমাতে পারলে সে ৩৩ বছরে ফিরতে পারবে এবং চুক্তিও পাবে কোনো ক্লাবের।’
জুভেন্টাসে বছরে ৬৯ লাখ পাউন্ড আয় করেন পগবা। ইতালিয়ান ক্লাবটি চাইলে এখন তাঁর চুক্তিপত্র বাতিল করতে পারে। ২০২৬ সালের জুনে পগবার সঙ্গে জুভেন্টাসের চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি বাতিল করা হবে কি না, সে বিষয়ে ইতালির ফুটবল লেখক জেমস হর্নক্যাসল বলেছেন, ‘জুভেন্টাস এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি। তাদের ক্রীড়া পরিচালক সর্বশেষ বলেছেন, চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত তাঁরা অপেক্ষা করবেন। এখনো সিএএস-এ আপিলের সুযোগ আছে। এ ব্যাপারে ফল না আসা পর্যন্ত আমরা সম্ভবত জুভেন্টাসের কাছ থেকে অফিশিয়াল কোনো বিবৃতি পাব না।’