গোলরক্ষকদের ক্লিন শিট—শীর্ষে টের স্টেগেন, মার্তিনেজ নেই ৪০ জনের মধ্যেও
‘ভালো মানের গোলরক্ষক ছাড়া আপনি কোনো ট্রফি জিততে পারবেন না’—কথাটা বলেছিলেন লিভারপুল কিংবদন্তি গ্রায়েম সউনেস। তাঁর এই কথার মূল্য সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে ভালো বোঝার কথা আর্জেন্টিনার।
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে এমিলিয়ানো মার্তিনেজ অবিশ্বাস্য সেই সেভটা না করলে কি আর্জেন্টাইনদের তিন যুগের অপেক্ষা ফুরাত? লিওনেল মেসিরও তো ক্যারিয়ারের একমাত্র অপ্রাপ্তি ঘুচত না। অথবা গত রাতে ইউরো বাছাইপর্বে আয়াল্যান্ড–ফ্রান্স ম্যাচটার কথাই ধরুন না। ম্যাচের অন্তিম সময়ে মাইক মেনিয়ঁ ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত সেভটা না করলে হয়তো জেতাই হতো না ফরাসিদের।
ম্যাচ জেতানো সব মুহূর্ত উপহার দেওয়ার পরও গোলরক্ষকেরা রয়ে যান আড়ালে। ‘পুরস্কার-টুরস্কারও’ খুব একটা জোটে না। তাঁদের নিয়ে তেমন চর্চাও হয় না। তবে গোলরক্ষকদের অবদান অস্বীকার করার বা লুকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ইউরোপীয় ফুটবলের শীর্ষ পাঁচ দেশের ক্লাবগুলোতেই যেমন এ মৌসুমে যে গোলরক্ষকদের নামের পাশে সবচেয়ে বেশি ক্লিন শিট, তাঁদের দলও আছে ভালো অবস্থানে।
আবার এটাও সত্যি যে ভালো গোলকিপার থাকলেই হয় না, দলের রক্ষণও হতে হবে মজবুত। ফুটবলে তো এটা প্রচলিতই আছে—যে দলের রক্ষণ যত ভালো, সে দলের গোলকিপারও তত ভালো! এরপরও গোলকিপারদের পারফরম্যান্সের হিসাব রাখা হয়। সেই হিসাবে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ইউরোপিয়ান লিগগুলোর গোলকিপারদের ক্লিন শিটে সবচেয়ে এগিয়ে বার্সেলোনার মার্ক–আন্দ্রে টের স্টেগেন। আর এই তালিকায় পাঁজনের মধ্যে তো নয়ই, ৪০ জনের মধ্যেও নেই বিশ্বকাপের সেরা গোলকিপার ফিফা দ্য বেস্ট পুরস্কারজয়ী আর্জেন্টিনার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট বলছে, সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোল না খাওয়া গোলরক্ষকদের তালিকায় সবার ওপরে আছেন মার্ক-আন্দ্রে টের স্টেগেন। তাঁর ক্লাব বার্সেলোনাও আছে স্প্যানিশ লা লিগার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। বছরের শুরুতেই স্প্যানিশ সুপার কাপ জেতা বার্সা কোপা দেল রের ফাইনালেও এক পা দিয়ে রেখেছে। জার্মানির হয়ে ইউরো বাছাইপর্ব খেলতে যাওয়ার আগে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৩৭ ম্যাচের ২১টিতে গোল খাননি টের স্টেগেন।
তালিকার দুইয়ে আছেন আরেক স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল সোসিয়েদাদের গোলরক্ষক আলেক্স রেমিরো। ৩৮ ম্যাচের ১৮টিতে তাঁর নামের পাশে ক্লিন শিট। সোসিয়েদাদও লিগে শীর্ষে চারে অবস্থান করছে। মৌসুমের বাকি সময় রেমিরো ছন্দটা ধরে রাখতে পারলে ৯ বছর পর চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলবে সোসিয়েদাদ।
১৮টি ক্লিন শিট আছে দাভিদ দে হেয়ারও। তবে রেমিরোর চেয়ে চার ম্যাচ বেশি খেলায় তালিকার তিনে আছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড গোলরক্ষক। সম্প্রতি রেড ডেভিলদের হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্লিন শিটে কিংবদন্তি পিটার স্মাইকেলকে ছাড়িয়ে গেছেন দে হেয়া। লিগ কাপ (কারাবাও কাপ নামে পরিচিত) জিতে ইউনাইটেডের ছয় বছরের শিরোপা–খরা ঘোচাতেও রেখেছেন বড় অবদান। এরিক টেন হাগের দলের সবচেয়ে পুরোনো খেলোয়াড়ও ৩২ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ।
শীর্ষ পাঁচের শেষ দুজন দুই ইতালিয়ান ক্লাব নাপোলির আলেক্স মেরেত ও লাৎসিওর ইভান প্রোভেদেল। দুজনই ১৭ ম্যাচে কোনো গোল খাননি। সিরি ‘আ’তে তাঁদের দলও আছে শীর্ষ দুইয়ে। নাপোলি তো এরই মধ্যে স্কুদেত্তোর সুবাস পেতে শুরু করেছে। চ্যাম্পিয়নস লিগেও প্রথমবার কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে।
এমিলিয়ানো মার্তিনেজ অবশ্য এখানে ব্যর্থ। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষকের ক্লাব অ্যাস্টন ভিলাও ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খুব একটা ভালো অবস্থানে নেই। ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে ভিলার অবস্থান ১১তম। অন্য ঘরোয়া টুর্নামেন্ট থেকেও অনেক আগে বাদ পড়েছে ক্লাবটি। এ মৌসুমে ক্লিন শিটে এগিয়ে থাকা গোলরক্ষকদের তালিকায় শীর্ষ ৪০–এও নেই মার্তিনেজ।
একই দশা কাল ফ্রান্সকে জেতাতে বড় অবদান রাখা মেনিয়ঁরও। ইতালিয়ান ক্লাব এসি মিলানের গোলবার সামলান মেনিয়ঁ। গত মৌসুমে মিলানের হয়ে সিরি ‘আ’ জেতা এই গোলপ্রহরীর মৌসুমে খুব বেশি ক্লিন শিট নেই। তাঁর দলেরও এবার শিরোপা ধরে রাখার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অবশ্য পায়ের মাংসপেশিতে চোট পাওয়ায় বেশি কিছুদিন মাঠের বাইরে ছিলেন মেনিয়ঁ।