‘১১ বনাম ১০’—সুবিধাটা নিতে না পারার আক্ষেপ আলফাজের
ম্যাচের ৪৮ মিনিটে হঠাৎই মাথা গরম করে লাল কার্ড দেখলেন বসুন্ধরা কিংসের রফিকুল ইসলাম। কোনো বিপদ নেই, একেবারে সাইডলাইনের ধারে মোহামেডানের ওমর ফারুক বাবুর কাছ থেকে বল কাড়তে গিয়ে তাঁর বুকেই লাথি মেরে বসলেন কিংসের এই মিডফিল্ডার। রেফারি জালালউদ্দিনের লাল কার্ড দেখানো ছাড়া আর কোনো বিকল্পই ছিল না । কিন্তু স্বাধীনতা কাপের ফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে প্রতিপক্ষের ১০ জনের দলে পরিণত হওয়ার সুযোগটা কি নিতে পারল মোহামেডান?
উত্তর হচ্ছে—না! এমনিতে আজ গোপালগঞ্জের ফাইনালে তুলনামূলক শক্তিধর প্রতিপক্ষ কিংসের সঙ্গে মন্দ খেলেনি মোহামেডান। ৫০ মিনিটে মোজাফফরভের কর্নার থেকে ইমানুয়েল সানডে হেড করে গোল করে দলকে এগিয়েও দিয়েছিলেন। কিন্তু পরের মিনিটেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই গোল শোধ করে দেন রাকিব হোসেন।
মোহামেডানের কোচ আলফাজ আহমেদের আক্ষেপ সেটি নিয়েই। ম্যাচ শেষে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তো সুবিধাটুকুই নিতে পারলাম না। কিংস ১০ জনের দল হয়ে যাওয়ার পরপরই আমরা গোল করে এগিয়ে যাই। কিন্তু গোলটা করেই হয়তো খেলোয়াড়েরা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। সেই সুযোগটাই নিয়েছে কিংস।’
কিন্তু ১-১ অবস্থাতেও তো কিংসের ওপর কোনো সেভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি সাদা–কালোরা। সংখ্যাগত সুবিধা যেখানে ফুটবলে পার্থক্য গড়ে দেয়, সেখানে একজন বেশি নিয়েও ম্যাচের বাকি সময়টায় তো কিংসকে সেভাবে চেপেই ধরতে পারল না মোহামেডান। আলফাজের বক্তব্য এখানে সহজ-সরল, ‘আমার একটা পরিকল্পনা ছিল। সেভাবেই খেলোয়াড়দের নির্দেশনা দিয়েছিলাম। অভিজ্ঞতা এখানে বড় একটা ব্যাপার। কিংস এখানেই আমাদের হারিয়েছে। তবে আমি আমার দলের খেলায় খুশি। তারা লড়াই করেছে।’
গত ফেডারেশন কাপের ফাইনালে এক সোলেমান দিয়াবাতের ওপর ভর করেই আবাহনীকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল মোহামেডান। কিন্তু এবারের স্বাধীনতা কাপে দিয়াবাতে ছিলেন বড্ড বেশি নিষ্প্রভ। উজবেকিস্তানের মিডফিল্ডার মোজাফফরভ দুর্দান্ত খেললেও দিয়াবাতের জ্বলে না ওঠাটা বেশ ভুগিয়েছে মোহামেডানকে। আলফাজ অবশ্য এটাকে খুব বড় কিছু মনে করেন না, ‘দিয়াবাতে দুর্দান্ত ফুটবলার। সে আমাদের গত চার বছর ধরে সার্ভিস দিচ্ছে। কখনো কখনো তো খেলোয়াড়দের ফর্ম একটু খারাপ যেতেই পারে। দিয়াবাতে এই মুহূর্তে ওই সময়টা পার করছে। আমি আশা করি লিগে সে নিজেকে ফিরে পাবে।’
টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতল কিংস। এমন একটা সময়ে তাদের এই শিরোপা, যখন এক সপ্তাহ আগেই মহাদেশীয় পর্যায়ে তীরে এসে তরি ডোবার দুঃখে নিমজ্জিত দলটি। এএফসি কাপে গ্রুপে ১০ পয়েন্ট নিয়েও শেষ ম্যাচে ওডিশা এফসির কাছে এক হারেই হয়েছে তাদের স্বপ্নভঙ্গ। আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে বড় সাফল্যে অনেক দিন ধরেই পাখির চোখ কিংসের।
কিন্তু সেটি যখন হয়নি, তখন স্বাধীনতা কাপের আরও একটি শিরোপা দলটিকে নতুনভাবে জাগাবে। আজ কঠিন পরিস্থিতিতেই সেটি সম্ভব হয়েছে ব্রুজোনের দলের। ম্যাচ শেষে রাকিব জানালেন রফিকের লাল কার্ডের পরও আত্মবিশ্বাস হারাননি তাঁরা, ‘আমরা যখন ১০ জনের দল হয়ে গেলাম, আমরা আত্মবিশ্বাস হারাইনি। আমরা জানতাম নিজেদের খেলাটা খেলতে পারলে আমরা মোহামেডানকে হারাতে পারব। শেষ পর্যন্ত ভালো খেলেই আমরা জিতেছি।’