সোনার লড়াই নয়, সেমিফাইনালে ওঠার লড়াই।
কিন্তু প্যারিস অলিম্পিকে ছেলেদের ফুটবলে আজ ফ্রান্স–আর্জেন্টিনা ম্যাচটি সোনার লড়াইয়ের চেয়েও বড় আবহ নিয়ে উপস্থিত। বিশেষ করে ফ্রান্সের জন্য। দুই বছর আগে কাতারে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরেছিল ফ্রান্স। সেই ফাইনাল এবং গত মাসে কোপা আমেরিকা ফাইনালের পর ফরাসিদের নিয়ে আর্জেন্টাইনরা যে দৃষ্টিকটু উদ্যাপন করেছেন, সেটা কি ফ্রান্সের দর্শক সহজে ভুলবেন?
আর্জেন্টিনার ফুটবল এর মধ্যেই অলিম্পিক খেলতে এসে গ্যালারি থেকে দুয়ো শুনেছে, ম্যাচে যদিও ফ্রান্স ছিল না। তবে আর্জেন্টিনা রাগবি দল ফ্রান্সের মুখোমুখি হয়ে ‘শত্রুভাবাপন্ন’ পরিস্থিতি ভালোই টের পেয়েছে। এবার সরাসরি আর্জেন্টিনার ফুটবল দলই ফ্রান্সের সামনে। আজ বোর্দোয় ফরাসি দর্শক যে ‘বিপুল বিক্রমে’ আর্জেন্টাইনদের কান ঝালাপালা করে ছাড়বেন, তা অনুমান করতে ভবিষ্যদ্বক্তা হওয়ার দরকার নেই।
পরিস্থিতি যে কেমন হতে পারে, সেটি আর্জেন্টিনা দলও অনুমান করতে পারছে। আর সে কারণেই কি না, মাঠে প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য মানসিক প্রস্তুতিই নিয়ে রাখার কথা বলেছেন গোলকিপার হেরোনিমো রুই। গতকাল সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপের সময় ২০২২ বিশ্বকাপজয়ী দলে থাকা এই গোলকিপার বলেন, ‘পরিস্থিতি প্রতিকূলে থাকবে, সেটা আমাদের মাথায় আছে। অন্যদের ক্ষেত্রে হয়তো কিছুই ঘটত না। তবে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যপারটা বেশিই স্পষ্ট। আমরা মাঠে নামার পর জাতীয় সংগীত গাইলে ওরা শিষ বাজাবে, যেটা আমাদের রাগবি দলের সঙ্গেও করেছে। আমরা জানি, ব্যাপারটা আমাদের খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে নয়। বিশ্বকাপ ও তার পরে যা কিছু ঘটেছে, তার বিরুদ্ধে। তবে দুই দিক থেকেই এটা সুন্দর একটা ম্যাচই হবে আশা করি।’
ফুটবলে আর্জেন্টিনা–ফ্রান্সের সর্বশেষ দেখা কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালেই। এবার যদিও জাতীয় দল নয়, অনূর্ধ্ব–২৩ দলের লড়াই, তবু একই রঙের জার্সিতে প্রথম লড়াই বলে বিশেষ অনুভূতি হচ্ছে রুলির, ‘এটা স্পেশাল ম্যাচ হতে চলেছে। কারণ, বিশ্বকাপ ফাইনালের পর এবং গত কয়েক মাসের নানা ঘনঘটার পর এটিই প্রথম ম্যাচ। আর আর্জেন্টিনা যেহেতু বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবং কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন, সবাই আমাদেরই হারাতে চাইবে।’
গত মাসে আর্জেন্টিনার কোপা আমেরিকা জয়ের পর এনজোদের ফ্রান্সকে অপমান করা গানের সূত্র ধরে জল ঘোলা হয়েছে অনেক। ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করে ফ্রান্সের ফুটবল ফেডারেশন। ব্যাপারটা গড়ায় দুই দেশের সরকারি পর্যায়েও, যেখানে আর্জেন্টাইন সরকার ক্ষমাও চায় ফ্রান্সের কাছে। এরই মধ্যে অলিম্পিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে আর্জেন্টাইন প্রেসিডেন্ট হাভিয়ে মিলেইয়ের। দুজনে অবশ্য বিতর্ককে পাশ কাটিয়ে গেছেন। ফ্রান্সের অলিম্পিক ফুটবল দলের কোচ থিয়েরি অঁরি অবশ্য ২২ জনের লড়াইয়ের বাইরের কিছু প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি নন।
গতকাল সাংবাদিকেরা তাঁকে ম্যাচে সাম্প্রতিক বিতর্কের জের কেমন থাকতে পারে, জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। শুধু ম্যাচ নিয়েই কথা বলব। ওটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ আর্জেন্টিনা দলের কোচ হাভিয়ের মাচেরানোও এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। ফ্রান্স কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে আসার পথে গ্রুপে তিন ম্যাচই জিতেছে এবং একটি গোলও হজম করেনি—বিষয়টি মাথায় রেখে শিষ্যদের চ্যালেঞ্জ নিতে বলেছেন, ‘আমি ওদের বলেছি, তোমরা স্বাগতিকের বিপক্ষে নামছ। দর্শক সমর্থন ওদের পক্ষে থাকবে। যেটা গ্রুপ পর্বে আমাদের মরক্কো ও ইরাক ম্যাচের সময়ও দেখা গেছে। আমাদের মনোযোগ যেখানে নিয়ন্ত্রণ আছে সেদিকে। ফুটবল খেলাটা আমাদের হাতে। অন্য বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে শক্তি ক্ষয় করার কিছু নেই।’
ফ্রান্স–আর্জেন্টিনার ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়। এই ম্যাচের জয়ী দল সেমিফাইনালে মিশর–প্যারাগুয়ের মধ্যকার জয়ী দলের বিপক্ষে খেলবে।