‘গার্দিওলার স্কুলে ভর্তি’র পর ফুটবলে চোখ খুলেছে গুন্দোয়ানের
জার্মান মিডফিল্ডার ইলকায় গুন্দোয়ানের সিনিয়র ক্যারিয়ার শুরু ২০০৮ সালে ভিএফএল বোচাম টু–তে। এরপর নুর্নবার ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ঘুরে ২০১৬ সালে যোগ দিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার সিটিতে। পেপ গার্দিওলা সিটির কোচ হয়ে আসার পর তাঁর প্রথম সাইনিং ছিলেন গুন্দোয়ান।
তাঁর আগে ইয়ুর্গেন ক্লপের মতো কোচের অধীনে খেলেছেন ডর্টমুন্ডে। সে সময় জার্মান ক্লাবটির হয়ে বুন্দেসলিগা এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ওঠার পাশাপাশি জিতেছিলেন জার্মান কাপও। ডর্টমুন্ডে দুর্দান্ত খেলেই নিজেকে তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। অথচ ইএসপিএনকে জার্মান তারকা বলেছেন, পেপ গার্দিওলার সঙ্গে কাজ করার আগপর্যন্ত তিনি ‘ফুটবল সমন্ধে কিছুই জানতেন না।’
গুন্দোয়ানের ক্যারিয়ারে গার্দিওলার প্রভাব অনস্বীকার্য। সিটিতে সাত মৌসুমের ক্যারিয়ারে পাঁচবার জিতেছেন প্রিমিয়ার লিগ, এফএ কাপও জিতেছেন। আর গত মৌসুমে তো চ্যাম্পিয়নস লিগসহ জিতে নেন ‘ট্রেবল’ শিরোপা। গার্দিওলার সাহচার্য ছেড়ে এ মাসেই ফ্রি ট্রান্সফারে বার্সেলোনায় যোগ দিয়েছেন গুন্দোয়ান। ইএসপিএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৩২ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার আরও জানিয়েছেন, বার্সেলোনায় মেসি, রোনালদিনিও ও সের্হিও বুসকেতসদের রোল মডেল হিসেবে দেখেছেন।
গার্দিওলার প্রভাব বোঝাতে গিয়েই ফুটবল সমন্ধে কিছু না জানার কথাটা বলেছেন গুন্দোয়ান। তাঁর ভাষায়, ‘ম্যানচেস্টার সিটিতে যোগ দেওয়ার আগে ভাবতাম, আমি ফুটবলটা জানি। তখন ২৫–২৬ বছর বয়স, চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল খেলে ফেলেছি, মনে হতো (ফুটবলে) অনেক কিছুই দেখে ফেলেছি। কিন্তু পেপের স্কুলে ৭ বছর কাটানোর পর এখন মনে হয়, তার আগে ফুটবল সমন্ধে কিছুই জানতাম না। দলে এবং আমার ওপর তার প্রভাব অসামান্য।’
স্প্যানিশ কোচের অধীনে গত মৌসুমে সিটির হয়ে ‘ট্রেবল’ জয়কে ‘স্বপ্নরাজ্য’ বলে মনে হয়েছে গুন্দোয়ানের। তবে সিটি ছাড়ার এটাই সঠিক সময় বলে মনে হয়েছে তাঁর, ‘নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং আরামের জায়গা থেকে বের হতে মনে হয়েছে, এটাই সঠিক সময়।’
সিটিতে গুন্দোয়ানের পজিশনে তাঁর বিকল্প ছিল না। জার্মান তারকা চেয়েছিলেন নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নতুন কিছু করে দেখাতে। আর সে জন্য যে ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন, সেই বার্সাকে গুন্দোয়ান শৈশব থেকেই ভালোবাসেন। কারণ, সেখানে খেলেছেন তাঁর ‘আদর্শ’রা। গুন্দোয়ানের মুখেই শুনুন, ‘ছোটবেলা থেকেই বার্সেলোনাকে ভালোবেসেছি। রোনালদিনিও, লিওনেল মেসি, সের্হিও বুসকেতস, জাভি, আন্দ্রেস ইনিয়েস্তারা খেলেছেন এখানে। সব সময় নিজেকে বলেছি, (বার্সেলোনায়) খেলার সুযোগ পেলে হাতছাড়া করব না।’
মেসি–ইনিয়েস্তার সঙ্গে বার্সার মাঠমাতানো কিংবদন্তি জাভি হার্নান্দেজ এখন কাতালান ক্লাবটির কোচ। গত মৌসুমে তাঁর অধীনে লা লিগা জিতেছে বার্সা। ২০০৯ সালের পর এটাই বার্সার প্রথম লিগ শিরোপা এবং কোচ হিসেবে নিজের প্রথম মৌসুমেই তা জিতিয়েছেন জাভি। নিজের কোচকে নিয়েও কথা বলেছেন গুন্দোয়ান, ‘যেমনটা ভেবেছিলাম, প্রথম সাক্ষাতে (জাভিকে) তেমনই লেগেছে। এই দলবদলের আগে আমাদের ফোনে কথা হয়েছিল এবং তিনি নিজের ভাবনাচিন্তা নিয়ে কিছু বিষয় আমাকে বুঝিয়ে বলেছিলেন, যার সঙ্গে সিটির মিল আছে...আমাদের সম্পর্কটা আগে থেকেই ভালো, সেটা আরও ভালো হবে।’
ডর্টমুন্ডে সতীর্থ হিসেবে পাওয়া রবার্ট লেভানডফস্কিকে বার্সাতেও পাচ্ছেন গুন্দোয়ান। আর আছেন জাতীয় দলের সতীর্থ গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টের–স্টেগেন। গুন্দোয়ান মনে করেন, দারুণ দলই গড়েছে বার্সা। তরুণদের সম্ভাবনা প্রচুর। বার্সার মাঝমাঠে জায়গা নিশ্চিত করতে গুন্দোয়ানকে লড়তে হবে গাভি, পেদ্রি, ওরিয়ল রোমেউ ও ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের সঙ্গে।
প্রাক্–মৌসুমে যুক্তরাষ্ট্র সফরে স্কোয়াডে অসুস্থতার কারণে জুভেন্টাসের বিপক্ষে বার্সার প্রীতি ম্যাচটি বাতিল করা হয়েছে। আর্সেনালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলে শনিবার আরলিংটনে প্রীতি ‘ক্লাসিকো’য় রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে বার্সা। মর্যাদার এই দ্বৈরথ নিয়ে গুন্দোয়ান বলেছেন, ‘এল ক্লাসিকো বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যাচ। গত সাত বছর ধরে এবং যখন জার্মানিতে ছিলাম, তখনো যাঁরা ফুটবল ভালোবাসেন, তাঁদের ক্লাসিকোর সময় টিভির সামনে বসতে দেখেছি। বিশ্ব–ফুটবলে এটা সম্ভবত সবচেয়ে মর্যাদার লড়াই।’