রোনালদোর সামনে ‘আলপাইন মেসি’
রোনালদো তাঁর প্রিয় খেলোয়াড়, ছোটবেলার আদর্শ। এতটাই যে নিজের সপ্তম জন্মদিনে উপহার হিসেবে রোনালদোর একটা জার্সি কিনে দেওয়ার জন্য রীতিমতো কান্নাকাটি করেছিলেন মায়ের কাছে। জেরদান শাকিরির সেই ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেননি তাঁর পরিচ্ছন্নতাকর্মী মা।
রোনালদো মানে এই ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নন, শাকিরির ভাষায়, ‘আসল রোনালদো’—দ্য ফেনোমেনন। তাই বলে ভাববেন না, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে অসম্মান করেন শাকিরি। বরং উল্টোটা। এই রোনালদোকে তিনি কী চোখে দেখেন, সেটা বোঝা যাবে দুই দিন আগে বলা আরেকটি কথায়, ‘ক্রিস্টিয়ানোকে কখনো বাতিল করে দেওয়া যায় না। সে–ও লিওনেল মেসির মতো বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। যেকোনো সেকেন্ডে, যেকোনো মিনিটে, যেকোনো অবস্থায় সে গোল করে দিতে পারে। ওর কত অভিজ্ঞতা, সবাই জানে সে পর্তুগালের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’
সেই রোনালদোর ভক্ত হঠাৎ যে এই রোনালদোকে নিয়ে কথা বলছেন, এরও একটা কারণ আছে। বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে আজ রোনালদোর পর্তুগালের বিপক্ষে খেলবে জেরদান শাকিরির সুইজারল্যান্ড। রোনালদো কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা জানা না থাকলে তাঁর দলের বিপক্ষে খেলবেন কী করে!
সুইজারল্যান্ডকে শেষ ষোলো পর্যন্ত নিয়ে আসায়ও শাকিরির বড় ভূমিকা। গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ক্যামেরুনের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে ব্রিল এমবোলোর একমাত্র গোলটা এসেছিল তাঁর পাস থেকে। ব্রাজিলের বিপক্ষে পরের ম্যাচে খেলেননি, সেটা হেরেছে সুইজারল্যান্ড।
সার্বিয়ার বিপক্ষে সর্বশেষ ম্যাচেও সুইজারল্যান্ডের ৩-২ গোলের জয়ে প্রথম গোলটা শাকিরির। ওই গোল দিয়েই একটা রেকর্ডে তিনি মেসি-রোনালদোকে স্পর্শ করেছেন, সর্বশেষ তিন বিশ্বকাপে গোল আছে শুধু এই তিনজনেরই। আজ পর্তুগালের বিপক্ষে যখনই নামেন, শাকিরির দিকে তাকিয়ে থাকবে তাঁর দল।
তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ায় কসোভান-আলবেনিয়ান বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম নেওয়া শাকিরির কাছে এ প্রত্যাশা এমনি এমনিই তৈরি হয়নি। ফুটবলকে ধ্যানজ্ঞান বানিয়ে বড় হওয়া শাকিরির প্রতিভার ঝলক প্রথম দেখা যায় সুইস ক্লাব এফসি বাসেলের বয়সভিত্তিক দলে খেলার সময়। দারুণ ড্রিবলিং করেন, দুই পায়েই বল রাখতে পারেন, শুটিংও চমৎকার।
বাসেলের মূল দল থেকে তাই ২০১২ সালে জার্মান পরাশক্তি বায়ার্ন মিউনিখ কিনে নেয় তাঁকে। সুইজারল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয়ে গিয়েছিল এরও তিন বছর আগে। বায়ার্ন থেকে ইন্টার মিলান, স্টোক সিটি, লিভারপুল, লিওঁ হয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ফায়ারে।
মূলত ইংল্যান্ডে থাকার সময়টাতেই তাঁকে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘আলপাইন মেসি’ নামে ডাকতে শুরু করে। সেটা একেবারে অকারণে নয়। ড্রিবলিং ভালো তো করেনই, মেসির মতোই উইংয়ের ডান দিকে খেলতে স্বচ্ছন্দ শাকিরিও। আর সবচেয়ে বড় কথা, দুজনের উচ্চতায় মিল—দেখতে দুজনই ছোটখাটো।
সুইজারল্যান্ডের হয়ে এরই মধ্যে ১১১টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। বয়স ৩১ হয়ে গেছে। হয়তো এটাই তাঁর শেষ বিশ্বকাপ। পর্তুগালের বিপক্ষে হারটা হয়ে যেতে পারে বিশ্বকাপে তাঁর শেষ ম্যাচও। নাকি পথচলাটা আরেকটু দীর্ঘ করতে পারবেন শাকিরি!