স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আরও এক কীর্তিমানের মৃত্যু, ৫ মাসে ৫ জন না ফেরার দেশে
এ যেন মৃত্যুর মিছিল চলছে।
গত পাঁচ মাসে না ফেরার দেশে চলে গেছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের পাঁচ সদস্য। গত ২৯ জুলাই চলে যান আমিনুল ইসলাম সুরুজ। ৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান সাইদুর রহমান প্যাটেল। ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁদের পথ ধরেন বিমল কর। ১৮ নভেম্বর পৃথিবীকে বিদায় জানান অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু। গতকাল অনন্তলোকে পাড়ি জমিয়েছেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের আরেক ফুটবলার ফজলে সাদাইন খোকন। বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
রাজশাহীর বোয়ালিয়া থেকে উঠে আসা ফজলে সাদাইন অনেক বছর ধরেই ফুটবল অঙ্গনের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ছিলেন। খেলা ছাড়ার পর অনেকেই আর ফুটবলের কোনো অনুষ্ঠানে আসেন না। দেশের ফুটবলও তাঁদের খোঁজ রাখে না। খবর হন মৃত্যুর ঘটনায়। যেমন এল ফজলে সাদাইন খোকনের খবর।
১৯৬৮ সালে আজাদ স্পোর্টিং দিয়ে ঢাকার ফুটবলে তাঁর শুরু। ১৯৭০ সালে ওয়ারান্ডার্সে নাম লেখান। এরপর ’৭৪ সালে ওয়াপদা হয়ে ১৯৭৬ সালে যোগ দেন আবাহনীতে।
ফজলে সাদাইনের মৃত্যুতে শোকাহত স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সহ–অধিনায়ক প্রতাপ শঙ্কর হাজরা বলেন, ‘খোকন অসুস্থ ছিল অনেক দিন। তার মতো ভদ্র, নম্র মানুষ কমই দেখেছি। ওয়ান্ডারার্সে খেলত। মিডফিল্ডার হিসেবে দারুণ। ১৯৭১ সালে সেই ঐতিহাসিক সময়ে মুম্বাইয়ে মাঠে দারুণ খেলেছিল খোকন। মহারাষ্ট্রের সঙ্গে ৩-১ গোলে জিতেছিলাম আমরা। নবাব মনসুর আলী খান পতৌদি খেলেছিলেন ওই ম্যাচটা।’
প্রতাপ শঙ্কর হাজরা যোগ করেন, ‘ঢাকায় কম আসত খোকন। ছয়-সাত মাসে হয়তো একবার। আর এলেও খুব একটা দেখা হতো না। আমার সঙ্গেই সর্বশেষ দেখা হয় ৬-৭ বছর আগে।’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম ডিফেন্ডার শেখ আশরাফ আলীও ব্যথিত এককালের সতীর্থকে হারিয়ে। ৫৩ বছর পেছন ফিরে নানা স্মৃতিচারণার তিনি তুলে আনেন স্বাধীন বাংলা দলে ফজলে সাদাইনের অবদানের কথা। শেখ আশরাফ আলী বলেন, ‘ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মারা গেছে খোকন। মরদেহ গতকালই রাজশাহীতে নিয়ে গেছে। তার মৃত্যুতে মনে হয় আপনজন হারিয়েছি।’
শেখ আশরাফ আলীর কণ্ঠে এরপর হাহাহার, ‘গত কয়েক মাসে সুরুজ, প্যাটেল, বিমল কর, পিন্টু ভাইয়ের পর খোকনও চলে গেল। ৫ মাসে ৫ জন। আমরা কয়েকজন সুস্থ আছি। তবে অনেকেই অসুস্থ। কায়কোবাদের অবস্থা ভালো না, মানুষজন বোধ হয় চিনতে পারছে না। তছলিমের শারীরিক অবস্থাও ভালো না।’