ওটা রবসন দা সিলভাই তো!
কথাটি এভাবে উঠত না। যদি না আজ কিংস অ্যারেনায় গোল উদ্যাপন করতে গিয়ে মাঠের বাইরের ফেন্সের ওপর উঠে দাঁড়াতেন ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ড। মাঠে নামা আর গোল করা রবসনের জন্য অনেকটাই নিয়মিত ব্যাপার। কিন্তু গোল উদ্যাপনে এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখা গেছে বলে মনে হয় না।
এই উদ্যাপনটাই বুঝিয়ে দেয় বসুন্ধরা কিংস ও আবাহনী লিমিটেড ম্যাচটা বর্তমানে ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে উত্তেজনাকর, মর্যাদার তো বটেই। তাই আগের ম্যাচে হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করা কিংসের কাছে এই ম্যাচের গুরুত্ব অনেক বেশি। রানার্সআপ নিশ্চিত হওয়া আবাহনীর কাছেও তাই।
মাঠে দুই দলের খেলোয়াড়দের হাতাহাতি, আবাহনীর ডাগআউটে উত্তেজনা—এগুলোই বলে দেয় বসুন্ধরা–আবাহনী ম্যাচের পারদ এখন ‘মর্যাদার লড়াই’তেও পৌঁছে গেছে। এমন ম্যাচে আবাহনীকে ৩–২ গোলে হারিয়ে কিংস প্রমাণ করল, আবাহনীর চেয়ে শক্তিতে এগিয়ে আছে বলেই তারা চ্যাম্পিয়ন।
মূলত রবসন–জাদুতেই ম্যাচটি জিতেছে কিংস। ১–১ গোলে সমতায় থাকা অবস্থায় দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন রবসন। প্রথমে ৭১ মিনিটে গোল করে দলকে এগিয়ে নিলেন। পরে যোগ করা সময়ে দুর্দান্ত গোলে ব্যবধান বাড়িয়ে জয়ের পথে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন আরেক ধাপ। শেষ বাঁশি বাজার আগে পেনাল্টি থেকে রাফায়েল আগুস্তো গোল করে ব্যবধান কমিয়েছেন মাত্র।
আজই বাফুফের কাছে চিঠি দিয়ে ট্রফির দাবি জানিয়েছিল কিংস। কিন্তু বাফুফে তাদের সেই আবেদনে সাড়া দেয়নি। ট্রফি হাতে না নেওয়া হোক, লাল জার্সিতে কিংস সমর্থকেরা গ্যালারি মাতিয়ে রাখতে কোনো দ্বিধা করেননি।
শীর্ষ দুই দলের খেলায় শুরুর দিকেই উত্তেজনা। ১৪ মিনিটে কিংসের ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মিগেল ফেগুয়েরা ও আবাহনীর ইরানি ডিফেন্ডার মিলাদ শেখের হাতাহাতিতে খেলা বন্ধ ছিল প্রায় তিন মিনিট। মিগেল ও সোহেলকে হলুদ কার্ড দেখিয়ে রেফারি সতর্ক করলেও পরে এমন ঘটনা দেখা গেছে আরও।
২০ মিনিটে নুহা মারংয়ের গোলে এগিয়ে যায় বসুন্ধরা কিংস। মিগেলের ফ্রি–কিকে ফ্লিক হেডে গোলটি করেন গাম্বিয়ান এই স্ট্রাইকার। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটেই সমতায় ফেরে আবাহনী। দরিয়েলতনের রক্ষণচেরা পাস থেকে বক্সের মধ্যে থেকে প্রথম স্পর্শে জালে জড়িয়ে দিয়েছেন রাকিব হোসেন।
দ্বিতীয়ার্ধে বদলি হিসেবে নেমেই রবসন খেলার চেহারা বদলে দেন। ৭১ মিনিটে স্বদেশি মিডফিল্ডার মিগেলের সাধারণ একটা পাস। বক্সের মধ্যে কোনায় নিয়ন্ত্রণে নিলেন। ডান পায়ের জোরালো শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জালে, ২–১। যোগ করা সময়ে ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোলটি আরও দুর্দান্ত। এগিয়ে আসা গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে আলতো চিপে ব্রাজিলিয়ান ঢঙে জালে জড়িয়েছেন।
শেষ বাঁশি বাজার আগে পেনাল্টি পায় আবাহনী। স্পট কিক থেকে নেওয়া রাফায়েলের শট কিংস গোলকিপার আনিসুর ঠেকিয়ে দিলেও ফিরতি শটে বল জালে জড়িয়েছেন তিনি।
এই জয়ে ২১ ম্যাচে ৫৪ পয়েন্ট হলো কিংসের। সমানসংখ্যক ম্যাচে আবাহনীর পয়েন্ট ৪৪। লিগে দুই দলের ম্যাচ বাকি আছে আরও একটি করে।