অভিষেকেই দুর্দান্ত গোলে ইন্টার মায়ামিকে জেতালেন মেসি
ম্যাচের ৯৪ মিনিট। সবাই তখন প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন মাঠ ছাড়ার। গোল না পেলেও যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে মেসির অভিষেক দেখার স্বাদ তো মিটেছে। কিন্তু তিনি যে মেসি! এত আয়োজনের যোগ্য উপহার দেবেন না, তা কি হয় নাকি! তাই হয়তো জাদু জমিয়ে রেখেছিলেন শেষ মুহূর্তের জন্য। মেসি জ্বললেন, গোল করলেন ট্রেডমার্ক ফ্রি–কিকে। আর লিগস কাপে ক্রুজ আজুলের বিপক্ষে ইন্টার মায়ামিও পেল ২–১ গোলের দুর্দান্ত এক জয়। অভিষেকেই মেসি বুঝিয়ে দিলেন, কেন তিনি সেরাদের সেরা।
লিওনেল মেসিকে বেঞ্চে রেখে শুরুর সম্ভাবনার কথা আগেই বলেছিলেন ইন্টার মায়ামি কোচ জেরার্দো টাটা মার্তিনো। গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের অপেক্ষায় রেখে হলোও তাই। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় বেঞ্চে বসেই কাটান মেসি। ৪৪ মিনিটে দলের প্রথম গোলের পর সেখানে বসেই করেছেন উদ্যাপন।
বিরতির পর সবার চোখ মাঠের চেয়ে বেশি ছিল সাইড লাইনের দিকে। ‘মেসি, মেসি’ রবটা যেন তখন আরও বাড়ছিল। সবার অপেক্ষা, কখন নামবেন আর্জেন্টাইন জাদুকর। একটু পর মেসিকে দেখা গেল গা গরম করতে। অবশেষে মেসিকে যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ গালিচায় খেলতে দেখার অপেক্ষা ফুরাল ম্যাচের ৫৪ মিনিটে। মাঠে নামেন মেসি। এ সময় তাঁর সঙ্গী হন সের্হিও বুসকেতসও। মেসি নামার পর ৬৫ মিনিটে লিড হারায় ইন্টার মায়ামি। গোল করে মেক্সিকান ক্লাব ক্রুজ আজুলকে সমতায় ফেরান ইউরিয়েল আনতুনা।
মাঠে নেমেই নিজের ছাপ রাখতে শুরু করেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। দুর্দান্ত রক্ষণচেরা পাস, বল নিয়ে চিরচেনা দৌড় এবং ড্রিবলিংয়ের জাদুতে মোহিত করেছেন সবাইকে। কয়েকবার বল নিয়ে প্রতিপক্ষ রক্ষণের আশেপাশে বেশ হুমকিও তৈরি করেছিলেন। পাশাপাশি শুরুর দিকে দলের সঙ্গে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে না পারার ছাপও ছিল স্পষ্ট। দলের হয়ে প্রথম ম্যাচে যা অবশ্য স্বাভাবিকই ছিল।
মেসিকে একাদশে না রাখলেও ডিআরবি পিএনকে স্টেডিয়াম ছিল মেসিময়। এদিন মেসির অভিষেকের উত্তাপ আরও বাড়িয়েছেন গ্যালারিতে উপস্থিত তারকারা। ইন্টার মায়ামির অন্যতম মালিক ডেভিড বেকহাম তো ছিলেনই, এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে মেসির সাবেক সতীর্থ সের্হিও আগুয়েরো, বাস্কেটবল মহাতারকা লেব্রন জেমস, টেনিস কিংবদন্তি সেরেনা উইলিয়ামস এবং মডেল কিম কারদাশিয়ানকেও দেখা গেছে দর্শক সারিতে।
মেসিকে পেয়ে নতুন উদ্যমে জেগে ওঠার ছাপ স্পষ্ট ছিল ইন্টার মায়ামির খেলাতেও। শুরু থেকেই ক্রুজ আজুলের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিয়ে খেলেছে তারা। ইন্টার মায়ামির খেলা দেখে মনেই হচ্ছিল না, এই দলটি মে মাসের ১৪ তারিখের পর লিগে আর কোনো জয় পায়নি। ইতিবাচক ফুটবলের ফল পেতে ইন্টার মায়ামিকে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ম্যাচের ৪৪ মিনিট পর্যন্ত। বিরতিতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে গোল করে দলকে এগিয়ে দেন রবার্তো টেলর।
যদিও শেষ পর্যন্ত সেই লিড ৬৫ মিনিটে হারিয়ে ফেলে তারা। এরপর মেসি দলকে নিয়ে বেশ চেষ্টা করছিলেন গোল আদায়ের। একাধিকবার সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু ক্রুজ আজুলের রক্ষণ দেয়াল টপকে শেষ পর্যন্ত সেই কাঙ্ক্ষিত গোলটি আর পাওয়া হচ্ছিল না তাদের। ৮৭ মিনিটে একবার অবশ্য সতীর্থকে পাস দিয়ে গোলও করিয়েছিলেন মেসি। যদিও শেষ পর্যন্ত সেই গোলটি বাতিল হয়েছে অফসাইডের ফাঁদে পড়ে। এরপর ৯০ মিনিটে আরও একবার বল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন প্রতিপক্ষের ডি–বক্সে। কিন্তু এবার মেসিকে আটকে দেন প্রতিপক্ষ গোলরক্ষক। আর অন্তিম মুহূর্তে ফ্রি–কিকেই জাদু দেখালেন মেসি। ইন্টার মায়ামি পেল দারুণ এক জয়।