তিন দিন আগেই কমলাপুর স্টেডিয়ামে প্রথম ফিফা প্রীতি ম্যাচে সিঙ্গাপুরকে ৩-০ গোলে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে আজ জয়ের ব্যবধান বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল স্বাগতিকদের। তাই বলে ৮ গোলের ব্যবধানে জয়! বাংলাদেশ কোচ সাইফুল বারী ও অধিনায়ক সাবিনা খাতুন দুজনই জয়ের ব্যবধান দেখে অবাক।
কোচ সাইফুল বারী সংবাদ সম্মেলেন বলেছেন, ‘এই জয়ে আমার বিন্দুমাত্র অবদান নেই। মেয়েরা যা করছে, সব ওদের কৃতিত্ব। আজ আমি অবাক, ৮-০! ওয়াও।’ কোচের পাশে বসে সাবিনা বললেন, ‘গত বছর ঢাকায় মালয়েশিয়ার সঙ্গে প্রথম ম্যাচে ৬-০ গোলে জেতার পর পরের ম্যাচে গোলশুন্য ড্র করি। সেটা একটা বাজে অভিজ্ঞতা ছিল। তাই আমি আজ অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। ফলে আমিও ভাবিনি আমরা আজ আট গোলে জিতব।’
আন্তর্জাতিক ফুটবলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ২০১০ সালে ভুটানের সঙ্গে ৯-০ গোলে। আজ সেই রেকর্ডের প্রায় কাছাকাছি চলে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটা কীভাবে সম্ভব হয়েছে? সাইফুল বারী বলছেন, ‘আগেই বলেছিলাম, এ ধরনের ম্যাচে মানসিকভাবে কঠিন থাকতে হয়। আমরা সিঙ্গাপুরের সঙ্গে জিতেছি ৩-০ গোলে। সেই ম্যাচটি অত কঠিন ছিল না। মিস হয়েছে অনেক।। তারপর আবার এভাবে খেলা...সব কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের। ওরা ভিন্ন মানসিকতা দেখেয়েছে।’
বাংলাদেশ নারী দলের সঙ্গে সাইফুল বারীর চুক্তি ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। শোনা যাচ্ছে, বাফুফের চাকরি ছেড়ে যাওয়া পল স্মলি আবার আসছেন। এবার তিনি বাংলাদেশ নারী দলের প্রধান কোচ হবেন। তাহলে সাইফুলের ভবিষ্যত কী? প্রস্তাব পেলে আর কাজ করবেন কি না? সাইফুল বলেন, ‘সময় আসুক। তারপর চিন্তা করা যাবে।’
গত বছর সাফের ফাইনালে হারানো নেপালের সঙ্গে এ বছর তিনটি ড্র করেছে বাংলাদেশ। সেই সময়টা পেরিয়ে অনেক দিন পর চেনা ছন্দে বাংলাদেশ, যেভাবে মেয়েদের দেখতে চায় সবাই। সাবিনাও ছন্দে ফিরে খুব খুশি, ‘নেপালের সঙ্গে যে দুটি ম্যাচ খেলেছিলাম। সেখানে ফিটনেসে অনেকটা ঘাটতি ছিল। ফিটনেস অনেক বড় ব্যাপার। কিন্তু শেষ ৩-৪ মাস আমরা যে অনুশীল করেছি আগের মতোই সেরাটা দিতে পেরেছি। মেয়েরা ভালো খেলেছে। ম্যাচের আগে বলা হয়, সবাই ১২০ ভাগ দেবে। মেয়েরা আজ ২০০ ভাগ দিয়েছে।’
কয়েকটি সুযোগ হাতছাড়া করে সাবিনা নিজে একটা গোল পেয়েছেন। সেটি দেখার মতো গোলই। তবে সাবিনা বিরক্ত নিজের ওপর, ‘যেটা করেছি, সেটা দর্শনীয় গোল না। যে গোল মিস করেছি, আমার মনে হয় আমার ক্যারিয়ারে সব থেকে বাজে আজকের মিসগুলো।’
অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে সাবিনা বলেছেন, ‘ছোটন স্যার, পল স্যার চলে গেলে মেয়েরা মানসিভাবে ভেঙে পড়ে। সেটার প্রভাব দেখা গেছে নেপালের সঙ্গে। সাইফুল স্যার বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কোচ। উনি চেষ্টা করেছেন। প্রথম প্রথম আমাদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সময় লেগেছে। আমাদেরও তাই। প্রথম প্রথম মেয়েরা বলত স্যার একটু রূঢ়। তবে মেয়েরা এখন বলে, স্যারের ভেতর অনেক বদল এসেছে।’ পল এলে তাঁকে স্বাগত জানাবেন সাবিনা, ‘পল স্যার আমাদের সঙ্গে ২০১৬ থেকে কাজ করেছেন। আমাদের যে ধারাবাহিক ক্যাম্পে হয়েছে, তাতে পল স্যারের অবদান আছে আমার মনে হয়।’
ঋতুপর্ণা চাকমা আজ দুটি গোলের সঙ্গে তিনটি গোলে করেছেন সহায়তা। এই প্রথম জাতীয় দলের জার্সিতে এক ম্যাচে করেছেন দুই গোল। তবে হ্যাটট্রিক না হওয়ায় কোনো আফসোস নেই তাঁর। কোচ ও সাবিনার পাশে বসে বললেন, ‘গত ম্যাচে সেভাবে ভালো খেলতে পরিনি। নিজের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলাম, এ ম্যাচে ভালো খেলব। ভালো খেলতে পেরে আমি খুশি।’