হামজাদের নতুন কোচ নিস্টলরয়
গত ২৪ নভেম্বর খবরটি জানিয়েছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ও লেস্টারসিটি নিউজ। চেলসির কাছে আগের দিন লেস্টারের ২–১ গোলে হারের পর মাত্র পাঁচ মাসেই কোচের পদ থেকে ছাঁটাই হন স্টিভ কুপার। এরপর টেলিগ্রাফ এবং লেস্টার সিটিকেন্দ্রীক সংবাদমাধ্যম লেস্টারসিটি নিউজ জানিয়েছিল, কুপার তাঁর মেয়াদে ক্লাবের বিভিন্ন খেলোয়াড়ের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে আছেন ইয়ানিক ভেস্তারগার্দ, হ্যারি উইঙ্কস ও হামজা চৌধুরী।
শুধু তাই নয়, ডেনিশ ডিফেন্ডার ভেস্তারগার্ডকে কারণ ছাড়া অনুশীলনেরও বাইরে রেখেছিলেন কুপার। এই ওয়েলশ কোচ ছাঁটাই হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে লেস্টাররা ফুটবলাররা কোপেনহেগেনে পূর্ব–পরিকল্পিত পার্টিতে যোগ দেন। ডেনিশ মিডিয়া আউটলেট ‘এক্সত্রাব্লাদেত’–এর প্রকাশ করা ভিডিওতে দেখা যায়, লেস্টারের খেলোয়াড়েরা সে পার্টিতে ক্লাবের সাবেক কোচ এনজো মারেসকার উদ্দেশে একটি বার্তা দেখাচ্ছেন, ‘এনজো, আই মিস ইউ।’ অর্থাৎ কুপার ছাঁটাই হওয়ার আগেই তাঁর বিরুদ্ধে ‘এককাট্টা’ ছিলেন হামজারা। তবে ক্লাব কিন্তু মারেসকাকে ফেরায়নি। কুপারের জায়গায় কোচ পদে নেদারল্যান্ডসের সাবেক স্ট্রাইকার রুড ফন নিস্টলরয়কে বসিয়েছে লেস্টার। প্রশ্ন হলো, তাঁর অধীনে লেস্টারে কতটা সুযোগ পাবেন হামজা?
নিস্টলরয়ের বিষয়টি আগে জানানো যাক। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে এরিক টেন হাগের সহকারী হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন নিস্টলরয়। টেন হাগ ছাঁটাই হওয়ার পর অন্তবর্তী কোচের দায়িত্বও নেন ক্লাবটির সাবেক এ খেলোয়াড়। ইউনাইটেডে থেকে যাওয়ার ইচ্ছাও ছিল নিস্টলরয়ের। কিন্তু ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ক্লাবটি রুবেন আমোরিমকে কোচ পদে নিয়োগ দেওয়ায় ইউনাইটেড ছাড়েন নিস্টলরয়। ডাচ ক্লাব পিএসভির কোচের দায়িত্ব পালন করা নিস্টলরয় তার পর থেকেই বেকার বসে ছিলেন। কুপারকে ছাঁটাই করে লেস্টার তাঁকে নিয়ে আসতেও পারে—এমন গুঞ্জন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে ভাসলেও তাতে তেমন জোর ছিল না। কিন্তু সেই গুঞ্জনই সত্যি হলো গতকাল।
২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত লেস্টারের কোচ হিসেবে চুক্তি সই করেছেন নিস্টলরয়। নতুন দায়িত্ব পেয়ে বলেছেন, ‘আমি গর্বিত। রোমাঞ্চও জাগছে। যাদের সঙ্গে লেস্টার সিটি নিয়ে কথা বলেছি সবাই খুব আগ্রহী। ক্লাবের সাম্প্রতিক ইতিহাস দারুণ।’
২০১৫–১৬ মৌসুমে রূপকথা গড়ে প্রিমিয়ার লিগ জেতা লেস্টার এবার লিগ টেবিলে ১৬তম। অবনমন অঞ্চল থেকে মাত্র ১ পয়েন্ট এগিয়ে। লিগে এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচ খেলা লেস্টারের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচেই মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন ক্লাবটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হামজা। সেটা গত ১৪ সেপ্টেম্বর ক্রিস্টাল প্যালেসের বিপক্ষে ২–২ গোলে ড্র ম্যাচে, তা–ও বদলি হয়ে ম্যাচের শেষ ১৪ মিনিটের জন্য।
গত ৩ অক্টোবর বিবিসি জানিয়েছিল, অনুশীলনে কাঁধের হাড় স্থানচ্যুত হওয়ায় চোটে পড়েছেন হামজা। তখন কোচ কুপার জানিয়েছিলেন, হামজাকে কত দিন মাঠের বাইরে থাকতে হবে, সেটা তিনি জানেন না। এরপর লিগে টানা চার ম্যাচে স্কোয়াডে ছিলেন না হামজা। গত ১০ নভেম্বর ইউনাইটেড এবং ২৩ নভেম্বর চেলসির বিপক্ষে ম্যাচে তাঁকে স্কোয়াডে ফেরান কুপার। কিন্তু মাঠে নামাননি। হামজা চোটে পড়ার আগে গত ১৯ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে তাঁকে চার ম্যাচে স্কোয়াডে রেখেছিলেন কুপার। তখনো মাঠে নামাননি। আর অ্যাস্টন ভিলার বিপক্ষে স্কোয়াডেই ছিলেন না। তখন বদলি হয়ে খেলেছেন শুধু ক্রিস্টালের বিপক্ষে ম্যাচটি।
প্রিমিয়ার লিগে ১২ ম্যাচে ২ জয়, ৪ ড্র ও ৬ হার নিয়ে ছাঁটাই হলেন কুপার। তাঁর ছাঁটাই হওয়ার পেছনে ড্রেসিংরুমের নিয়ন্ত্রণ হারানোর কারণটা সরাসরি বলেনি ব্রিটেনের কোনো সংবাদমাধ্যমই। ধারণা করা হচ্ছে, খেলোয়াড়দের সঙ্গে বাজে সম্পর্ক এবং মাঠে বাজে পারফরম্যান্সই তাঁর ছাঁটাই হওয়ার কারণ।
প্রিমিয়ার লিগে আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় ব্রেন্টফোর্ডের মাঠে নামবে লেস্টার। এ ম্যাচে অন্তবর্তী কোচের দায়িত্ব পালন করবেন বেন ডসন। নিস্টলরয় ম্যাচটি দেখবেন এবং আগামী ৩ ডিসেম্বর ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে ম্যাচে তাঁকে লেস্টারের ডাগ আউটে দেখা যাবে। ডসন গতকাল বিবিসিকে জানিয়েছেন, হামজাদের জানানো হয়েছে, কোপেনহেগেনের পার্টিতে তাঁদের আচরণ ‘অগ্রহণযোগ্য’, যদিও সেসব পেছনে ফেলে রেখে এখন সামনে এগিয়ে যেতে চায় লেস্টার।
দুই বছর আগে প্রিমিয়ার লিগ থেকে নেমে যাওয়া লেস্টার মারেসকার হাত ধরে ইংল্যান্ডের শীর্ষ লিগে ফিরেছে। এবার নিস্টলরয়ের হাত ধরে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথে এই ডাচ কোচ হামজাকে কতটুকু ব্যবহার করবেন এবং সেটা কীভাবে করবেন—সেই প্রশ্ন জাগতে পারে বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগ সমর্থকদের মনে। সেটা সময় হলেই দেখা যাবে। আপাতত হামজাকে নিয়ে অন্য এক অপেক্ষায়ও আছেন বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা। এর আগে জানা গিয়েছিল, হামজা বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এফএ) ছাড়পত্র পেয়েছেন। তাঁর বিষয়টি এখন ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটিতে। সেখান থেকে ছাড়পত্র মিললেই হামজার বাংলাদেশের হয়ে খেলতে বাধা থাকার কথা নয়।