ইউনাইটেড সমর্থক আর ফুটবল–পণ্ডিতদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়লেন টেন হাগ

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ এরিক টেন হাগরয়টার্স

‘ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সর্বশেষ লিগ জিতেছে ২০১৩ সালে। কিন্তু এখনো তারা প্রত্যাশা করে শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আমরা প্রতিটি ম্যাচ জিতব। ক্লাব এখনো এটার জন্য প্রস্তুত নয়’—কথাটা এরিক টেন হাগের। ডাচ সাময়িকী ‘ভুটবল’কে কথাটা বলেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ।

ওয়েম্বলিতে আজ এফএ কাপ ফাইনালে ম্যানচেস্টার সিটির মুখোমুখি হবে ইউনাইটেড। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের আগে ডাচ সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিজের রাগ–ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন টেন হাগ। বলেছেন, ইউনাইটেড সমর্থকদের ‘বাস্তব জ্ঞান নেই।’

কেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।

হতাশার এক মৌসুম পার করছে ইউনাইটেড। পয়েন্ট টেবিলে অষ্টম স্থান নিয়ে প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম শেষ করেছে। প্রিমিয়ার লিগে এর আগে পয়েন্ট টেবিলে কখনো এতটা নিচে থেকে মৌসুম শেষ করেনি ইউনাইটেড। চ্যাম্পিয়নস লিগ গ্রুপ পর্ব থেকে বাদও পড়েছে গত বছর ডিসেম্বরে।

টেন হাগের দাবি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সমর্থকদের বাস্তব জ্ঞান নেই
এএফপি

এ মৌসুমে শিরোপা জয়ের শুধু একটি সুযোগই আছে টেন হাগের সামনে এবং সেটি এফএ কাপ ফাইনাল। আর এই ফাইনালের আগেই গুঞ্জন উঠেছে, ম্যাচটি শেষ হওয়ার পর ছাঁটাই করা হবে টেন হাগকে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, এফএ কাপ ফাইনাল শেষে ইউনাইটেডের কোচ পদ থেকে টেন হাগকে ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, এফএ কাপ ফাইনালে ফল যা–ই হোক, টেন হাগের ইউনাইটেড থেকে বরখাস্ত হওয়া নিশ্চিত।

ডাচ সাময়িকীটিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে টেন হাগের ভাষ্য, ক্লাবের প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ইউনাইটেড এখন যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে, প্রত্যাশা তার চেয়ে বেশ উঁচুতে।

টেন হাগের ভাষায়, ‘আমাদের কিছু একটা তৈরি করার কথা ছিল এবং সে লক্ষ্যে গত বছর আমরা একটি ধাপও ফেলেছি। কিন্তু এরপরই আবিষ্কার করলাম এই ক্লাব কত বড় এবং কেউই সন্তুষ্ট নয়। ক্লাবের ভেতরের লোকজন সন্তুষ্ট। তবে ক্লাবের বাইরে এই গুঞ্জনটা চলছে, আমি শুধু লিগ কাপ জিতেছি, এফএ কাপ ফাইনালে হেরেছি এবং তৃতীয় হয়েছি।’

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে গত মৌসুম তৃতীয় হয়ে শেষ করে ইউনাইটেড। গত বছর ওয়েম্বলিতে এ সিটির বিপক্ষেই এফএ কাপ ফাইনালে ২–১ গোলে হেরেছে টেন হাগের দল। তবে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে লিগ কাপ ফাইনালে নিউক্যাসলকে ২–০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ইউনাইটেড।

সমর্থক থেকে সমালোচকেরা এ মৌসুমে টেন হাগের কাছে আরও ভালো পারফরম্যান্স প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু সেটি করতে ব্যর্থ হওয়ার পর যেহেতু সমালোচনা থামছেই না, তাই টেন হাগ এ বিষয়ে দুটি কথা বলেছেন। প্রথমটি তো আগেই বলা হয়েছে ‘বাস্তব জ্ঞান নেই’ এবং পরের কথাটি হলো ‘অন্য দলগুলোর স্কোয়াড অনেক ভালো।’ ইউনাইটেডের এবারের মৌসুম নিয়েও নির্মম সত্যটাই বলেছেন টেন হাগ, ‘পরিষ্কার করেই বলি। এটা খারাপ ছিল। খুবই বাজে। কিন্তু তারপরও আমরা এফএ কাপ ফাইনালে খেলব।’

ইউনাইটেড ফুটবল–পণ্ডিতদের সমালোচনার সহজ লক্ষ্য বলেও মনে করেন টেন হাগ। আর তাতে ক্লাবে এবং ক্লাবের বাইরে তাঁর ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি। রিও ফার্ডিনান্ড, রয় কিন, গ্যারি নেভিল, পল স্কোলসের মতো ইউনাইটেডের কিংবদন্তিরা টেন হাগের সমালোচনা করেছেন।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সহ–মালিক র‍্যাটক্লিফের সঙ্গে টেন হাগ
এক্স

টেন হাগ এর আগে সমালোচকদের অপেক্ষা করার কথা বললেও এবার সাক্ষাৎকারে আরেকটু কঠোর ভাষায় বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের পণ্ডিতেরা গোল চায়। তারা প্রমাণ করতে চায় যে পারিশ্রমিক পায়, সেটা যৌক্তিক। আর তাই ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (সমালোচনার) সহজ লক্ষ্য। ইংল্যান্ডে এটা সবচেয়ে বড় ক্লাব, সম্ভবত এই বিশ্বেরও। এই ক্লাবকে হয় ভালোবাসবেন নয়তো ঘৃণা করবেন—এর মাঝামাঝি কিছু নেই।’

আরও পড়ুন

টেন হাগ এরপর ফুটবল–পণ্ডিতদের একহাত নিয়ে বলেছেন, ‘তাই সময় যখন খারাপ যায়, তখন ওরা (ফুটবল–পণ্ডিত) বড় বড় কথা বলতে শুরু করে। তথাকথিত এসব বিশেষজ্ঞ নেতিবাচক কথা বলে, যাদের বাস্তবতার ভিত্তিতে কোনো কিছু ব্যাখ্যার সামর্থ্য নেই। তবে নিজেরা ভালো সাজতে তারা অন্যদের আক্রমণ করে। আর এই লোকেরাই গত বছর আমার পিঠ চাপড়ে দিয়েছিল। গত বছর যেন আমি সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারতাম। কিন্তু এ বছর আমি প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বাজে কোচ হয়ে গেছি।’