কেন ঘোষণা দিলেও সভাপতি প্রার্থী হননি, এক মাস পর জানালেন তরফদার
২০২০ সালে বাফুফের সর্বশেষ নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই সভাপতি প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠেই ছিলেন না তরফদার রুহুল আমিন। এবারও সবার আগে সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়া দূরে থাক মনোনয়নপত্রই কেনেননি তিনি। আদৌ কোনো পদে প্রার্থী হন কি না, এই দোলাচলের মধ্যেই পরশু শেষ মুহূর্তে সিনিয়র সহসভাপতি পদে মনোনয়নপত্র কেনেন।
২০২০ সালে তৎকালীন সরকারের চাপে বাফুফের সভাপতি পদে প্রার্থী হতে পারেননি বলে দাবি তরফদারের। কিন্তু এবার কোনো সরকারি চাপ নেই বলে নিজেই জানিয়েছেন। তাহলে চাপ না থাকলে ঘোষণা দিয়েও সভাপতি পদে প্রার্থী না হওয়ার নেপথ্যের কারণ কী?
ফুটবল বিশ্লেষকেরা বলেছেন, সাবেক ফুটবলার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আউয়াল সভাপতি প্রার্থী হবেন ঘোষণার পরই তরফদার পিছুটান দেন। সভাপতি পদে নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার ঠিক এক মাস পর প্রকাশ্য এলেন তিনি। অনেকের মতে, অঙ্ক মিলিয়ে তিনি বুঝতে পারেন তাবিথ থাকলে তাঁর পক্ষে সভাপতি হওয়া কঠিন। স্রোত তাঁর অনুকূলে নয়। ফলে সিনিয়র সহসভাপতি পদটাই বেছে নেন তরফদার, যে পদে প্রার্থী হয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসানও।
সভাপতি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে বোঝাপড়া করেই তরফদার সিনিয়র সহসভাপতি পদে প্রার্থী বলে জানিয়েছেন। বাফুফে ভবনের পাশে ঢাকা জেলা ক্রীড়া সংস্থা অফিস চত্বরে দাঁড়িয়ে আজ নিজের অবস্থান খোলাসা করে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত নির্বাচনে আমার ওপর চাপ ছিল। এমনকি নির্বাচনের মাঠেও থাকতে পারিনি। এবার তেমন কোনো বিষয় নেই। এবার আমরা তাবিথের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছি। ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থে তাঁকে সভাপতি পদে সমর্থন দিয়েছি। সিনিয়র সহসভাপতি পদে তিনি আমাকে সমর্থন দেবেন বলে আশা করছি। ফুটবলের স্বার্থে কে বাফুফের ভেতরে বা বাইরে থাকবে, সেটা বড় ব্যাপার নয়। আসল হলো কাজ। আমরা একটা শক্তিশালী কমিটি দেখতে চাই। এ কারণেই তাবিথকে সমর্থন দেওয়া।’
তাবিথকে নিয়ে একটি প্যানেল করার আভাসও দিয়েছেন তরফদার, ‘২০ তারিখ পর্যন্ত প্রত্যাহারের সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা আমাদের প্যানেল তৈরি করব এবং আপনাদের জানাব। এ ব্যাপারে আমাদের আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। আলোচনা অব্যাহত আছে এবং তা চূড়ান্ত পর্যায়ে।’
বাফুফের নির্বাচনে তাবিথ আউয়ালসহ সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র কেনেন চারজন। বাকি তিনজন হলেন, বিসিবির সাবেক পরিচালক আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান, দিনাজপুরে তৃণমূল ফুটবল সংগঠক মিজানুর রহমান চৌধুরী ও বাংলাদেশ ফুটবল সাপোর্টাস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন। আজ শেষ দিনে সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিনজন— তাবিথ, মিজানুর ও শাহাদত।
আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাবিথ আউয়ালকে সমর্থন করেই সভাপতি পদে প্রার্থী হচ্ছি না। শুধু তা–ই নয়, সহসভাপতি পদেও আমি প্রার্থী হচ্ছি না। কোনো পদেই মনোনয়নপত্রও জমা দিইনি। সামনে বিসিবির নির্বাচন আছে। নিয়ম অনুযায়ী অন্য কোনো ফেডারেশনে থাকলে বিসিবিতে নির্বাচন করা যাবে না। আমি বিসিবিতে নির্বাচন করব।’
‘ফুটবলের বৃহত্তর স্বার্থে’ সভাপতি পদে তাবিথকে দরকার বলে দাবি করেন আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ। তাঁর কথা,‘অনেকের চাইতে তাঁর সক্ষমতা বেশি। আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। যেহেতু সালাহউদ্দিন গংরা এবার বিদায় নিচ্ছেন। ফুটবলের জন্য কাজ করার সুযোগ আছে। তাবিথের পক্ষে আমি আছি।’
সিনিয়র সহসভাপতি পদে মনোনয়নপত্র তুললেও নারায়ণগঞ্জের তৃণমূল সংগঠক মনির হোসেন তা জমা দেননি। সহসভাপতির পদে ১২ জন মনোনোয়নপত্র কিনলেও ৭ জন জমা দিয়েছেন। তাঁরা হলেন, ওয়াহিদ উদ্দীন চৌধুরী, ফাহাদ করিম, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, সাব্বির আহমেদ, সৈয়দ রুম্মান বিন ওয়ালী বিন সাব্বির, শফিকুল ইসলাম মানিক ও ইকবাল হোসেন। জমা দেননি আবদুল্লাহ আল ফুয়াদ রেদোয়ান, ছাইদ হাসান কানন, মিসবাহ আহমেদ বিন সামাদ, রশিদ সামিউল ইসলাম ও সত্যজিৎ দাস রুপু।
সদস্যপদে মনোনয়নপত্র বিক্রি হওয়া ৪৩টির মধ্যে ৪০টি জমা পড়েছে।