২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

‘আমার বাবার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে’—কাঁদতে কাঁদতে বললেন নিউজিল্যান্ডের পেসার

ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে ব্লেয়ার টিকনারের এলাকাছবি : সংগৃহীত

টি-টোয়েন্টির রমরমা অবস্থার মধ্যেও একজন ক্রিকেটারের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন নিশ্চয়ই দেশের হয়ে টেস্ট খেলা। ব্লেয়ার টিকনারের সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট দিয়ে ক্রিকেটের বনেদি সংস্করণে অভিষেক হয়েছে নিউজিল্যান্ডের এই দীর্ঘদেহী পেসারের।

দল হারলেও দুই ইনিংস মিলিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন টিকনার। টেলএন্ডার হয়েও ব্যাটিংয়ে রেখেছেন বিশেষ অবদান। নিজেদের প্রথম ইনিংসে টম ব্লান্ডেলের সঙ্গে দশম উইকেট জুটিতে টিকে ছিলেন প্রায় এক ঘণ্টা। শেষ সঙ্গী টিকনার থিতু হয়েছিলেন বলেই সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন ব্লান্ডেল।

সব মিলিয়ে টিকনারের অভিষেক টেস্ট স্মরণীয় হয়ে থাকলেও তাঁর পরিবার বিশেষ মুহূর্তগুলো উদ্‌যাপন করতে পারেনি। টিকনার যখন মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট নিয়ে ব্যস্ত, তাঁর পরিবার তখন হক’স বেতে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলের তাণ্ডব থেকে জীবন বাঁচাতে লড়ছিল। শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচলেও টিকনারের বাবার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

বাবার সঙ্গে ব্লেয়ার টিকনার
ফাইল ছবি

ঘটনার পর টিকনারকে পরিবারের কাছে যাওয়ার অনুমতি দেয় নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট (এনজেডসি)। নিজ এলাকার ঘূর্ণিঝড়–কবলিত মানুষকে দুই দিন সাধ্যমতো সহযোগিতা শেষে ওয়েলিংটনে আজ দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী এই পেসার। শুক্রবার ওয়েলিংটনেই শুরু হবে নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট।

ম্যাচ সামনে রেখে আজ সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন টিকনার। তবে খেলা নয়, নিজ পরিবারের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন এই পেসার। বলেন, ‘আমার বাবার বাড়ি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিবারকে সাহায্য করতে আমাকে ফিরে যেতে হয়েছিল। শুধু পরিবার নয়, আমার এলাকাবাসী কঠিন সময় পার করছে। যেভাবে পেরেছি, প্রতিবেশীদের সহযোগিতা করেছি। আমরা যথেষ্ট ভাগ্যবান ছিলাম। কারণ, সেন্ট্রাল স্ট্যাগস (তাঁর ঘরোয়া দল) এগিয়ে এসেছিল। ক্রিকেট আমার জীবনের অংশ। তবে এই পরিস্থিতির চেয়ে বড় নয়।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন ব্লেয়ার টিকনার
ছবি : ব্ল্যাকক্যাপস

নিউজিল্যান্ডে ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েলের তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত ১১ জন মানুষ মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপের শহর অকল্যান্ড, হক’স বে, নর্থল্যান্ড, কোরোমান্ডেল ও গিসবোর্ন। ভারী বর্ষণে ভূমিধসের কারণে দেখা দিয়েছে বন্যা। পানিবন্দী ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এসব এলাকার হাজারো মানুষ। ২০১১ সালে ক্রাইস্টচার্চে ভূমিকম্পের পর ঘূর্ণিঝড় গ্যাব্রিয়েল নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ। দেশটির সরকার এখনো জরুরি অবস্থা জারি রেখেছে।

আরও পড়ুন

বাড়ি লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে অভিষেক টেস্ট না খেলেই ফিরতে চেয়েছিলেন টিকনার। তবে বাবা জন টিকনার তাঁকে খেলা চালিয়ে যেতে বলেন, ‘প্রথম টেস্ট শুরুর আগেই আমার এলাকার অধিকাংশ মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বহু মানুষের খোঁজ মিলছিল না। অনেক চেষ্টার পর অবশেষে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি। তিনি চেয়েছিলেন আমি যেন আমার পরিবারকে ও হক’স বেকে (নিউজিল্যান্ডের হয়ে) প্রতিনিধিত্ব করি। আমি তাঁকে ‘‘না’’ বলতে পারিনি। জানতাম, খেলা শেষে বাড়িতে ফিরতে পারব। অন্ধকার ঘরে আমি তাঁদের উজ্জ্বল আলো হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম।’

আরও পড়ুন

অভিষেক টেস্ট মাঠে বসে দেখতে না পারলেও বাবা বেঁচে যাওয়াতেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছেন টিকনার, ‘অবশ্যই অভিষেক টেস্ট একজন ক্রিকেটারের চিরকালের স্বপ্ন। আপনি আশা করবেন, পরিবার ও বন্ধুরা খেলা দেখতে আসবে। কিন্তু ম্যাচ শুরুর দুই দিন আগে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানায় আমার ক্ষেত্রে সেটা হয়নি। তবে আমার বাবা সৌভাগ্যবান যে অক্ষত আছেন।’

টিকনার আরও জানিয়েছেন, এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর এনে তাঁর খেলা দেখেছে পরিবার, ‘হক’স বের মানুষকে সহযোগিতা করতে বাবা ৭ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে জেনারেটর নিয়ে আসেন। মাঝে ৩০ মিনিট টিভিতে আমার বোলিং দেখেন। ওই সময় আমি প্রথম টেস্ট উইকেট পাই। বাড়ি ফিরেই এলাকাবাসীকে সহযোগিতার কাজে লেগে পড়েন। আমার স্ত্রীও সেখানে ছিল।’

অভিষেক টেস্টে ৪ উইকেট পেয়েছেন ব্লেয়ার টিকনার
ছবি : এএফপি

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ শেষে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে নিউজিল্যান্ড। আগামী ২৫ মার্চ অকল্যান্ডে হবে দুই দলের প্রথম ম্যাচ। সেই ম্যাচ থেকে পাওয়া সব অর্থ নিউজিল্যান্ডের রেড ক্রস দুর্যোগ তহবিলে দিয়ে দেবে কিউই বোর্ড। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক এএনজেড এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন