কেইন কি পারবেন রুনি-শিয়ারারদের ছাড়িয়ে যেতে
তাঁর বেড়ে ওঠা টটেনহামের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে। মূল দলের সঙ্গে যুক্ত হন ২০১০ সালের দিকে। ২০১২ সালে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক। লিগে টটেনহামের হয়ে প্রথম গোলটা পান ২০১৪ সালে। তার পর থেকে এই আট বছরে ধীরে ধীরে তিনি হয়ে উঠেছেন টটেনহামের প্রতীক, সম্ভবত ক্লাবটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ও। গড়েছেন ক্লাবের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডও। গল্পটা হ্যারি কেইনের।
গত শনিবার উলভসের বিপক্ষে ম্যাচে গোল করে হ্যারি কেইন ছাড়িয়ে গেছেন সের্হিও আগুয়েরোকে। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আগুয়েরোর গোল ১৮৪টি। তাঁকে ছাড়িয়ে এখন প্রিমিয়ার লিগে এক ক্লাবের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৮৫ গোলের মালিক কেইন।
আগুয়েরোকে ছাড়িয়েছেন, তবে কেইনের সামনে এখনো যে অ্যালান শিয়ারার রয়ে গেছেন। প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটা তো এখনো কিংবদন্তি ইংলিশ স্ট্রাইকারের। প্রথম বিভাগ থেকে নাম বদলে প্রিমিয়ার লিগ হওয়ার পর শিয়ারার ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স ও নিউক্যাসলের হয়ে ৪৪১ ম্যাচ খেলে করেছেন ২৬০ গোল। ৭৫ গোল পেছনে থাকা কেইন কি পারবেন শিয়ারারকে ছাড়িয়ে যেতে?
সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় শিয়ারার ও কেইনের মাঝে আরও দুজনের নাম আছে—ওয়েইন রুনি (৪৯১ ম্যাচে ২০৮ গোল) ও অ্যান্ডি কোল (৪১৪ ম্যাচে ১৮৭ গোল)। তবে এই দুজনেই যেহেতু অবসর নিয়েছেন বেশ আগে, সত্যিকার অর্থে শিয়ারারকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ এখন শুধু কেইনেরই বলা যায়। এখনো খেলছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে লেস্টার সিটির ইংলিশ স্ট্রাইকার জেমি ভার্ডির ২৭২ ম্যাচে ১৩৩ গোল লিগে। তবে তাঁর বয়স হয়ে গেছে ৩৫। তাঁর জন্য তাই এই রেকর্ডের পেছনে ছোটা কিছুটা অবাস্তবই।
কেইনের জন্য কতটা বাস্তব, সেটা একটু দেখা যাক। প্রিমিয়ার লিগে ১৮৫ গোল করতে কেইনের খেলতে হয়েছে ২৮৫ ম্যাচ। প্রতি ১ গোলের জন্য খেলতে হয়েছে ১.৫৪ টি ম্যাচ। এই হারে এগিয়ে চললে শিয়ারারকে ছুঁতে কেইনের লাগার কথা আরও ১১৫ ম্যাচ। টটেনহাম স্ট্রাইকারের বয়স এখন ২৯। ২০১৩-১৪ মৌসুম থেকে গড়ে কেইন প্রতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে খেলেছেন ৩৩.৫টি ম্যাচ। তার মানে ১১৫ ম্যাচ খেলার জন্য তাঁকে খেলতে হবে অন্তত আরও চার মৌসুমের মতো। এই মৌসুম যেহেতু মাত্রা শুরু হয়েছে, আশা করা যায় ২০২৫-২৬ মৌসুমেই শিয়ারের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলবেন কেইন। তখন তাঁর বয়স থাকবে ৩৩।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই বয়স পর্যন্ত কেইন ম্যাচ খেলা, গোল করার এই হার ধরে রাখতে পারেন কি না! তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, তত দিন পর্যন্ত কেইন প্রিমিয়ার লিগে থাকেন কি না! তবে যদি থাকেনও, তত দিন পর্যন্ত কেইনের এই ছন্দ ধরে রাখা কঠিন হবে বলেই মনে করেন ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক ইংলিশ ডিফেন্ডার জুলিয়ন লেসকট, ‘আমার মনে হয় শিয়ারারের রেকর্ড নিরাপদেই আছে। তাঁকে ছোঁয়া কেইনের জন্য এখনো অনেক দূরের পথ। আমি বলছি না সে পারবে না, তবে শিয়ারকে কেইন ছুঁলে আমি অবাকই হব।’
আবার উল্টো মতও আছে। চেলসির সাবেক ইংলিশ মিডফিল্ডার জো কোল যেমন কেইনকে নিয়ে খুব আশাবাদী, ‘সে সব ধরনের গোল করতে পারে। অসাধারণ একজন ফুটবলার সে। এ দেশে তাঁর মতো ফুটবলার পেয়ে আমরা ভাগ্যবান। আমার সত্যিই মনে হয়, সে শিয়ারারের রেকর্ড ভেঙে দেব।’
শুধু এই রেকর্ড নয়, আরও কতগুলো রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে কেইনকে। জাতীয় দল ইংল্যান্ডের হয়ে কেইনের গোল ৫০টি। তাঁর সাবেক ইংল্যান্ড সতীর্থ ওয়েন রুনির গোল ৫৩টি। কেইন যে ফর্মে আছেন, তাতে আসছে কাতার বিশ্বকাপেই ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটা তাঁর হয়ে যাওয়ার কথা। ইংল্যান্ডের হয়ে বড় টুর্নামেন্টে (বিশ্বকাপ ও ইউরো) যৌথভাবে সর্বোচ্চ ১০ গোল গ্যারি লিনেকার ও কেইনের। কাতার বিশ্বকাপেই হয়তো এ রেকর্ডটাও শুধুই নিজের করে নেবেন কেইন।