এই ম্যাগুয়ারকে দিয়ে কী করবে ইংল্যান্ড
কোচ গ্যারেথ সাউথগেট কেন তাঁকে একাদশে রাখেন, তা নিয়েই আপত্তি আছে ইংল্যান্ডের সমর্থকদের। ওয়েম্বলিতে কাল রাতে তাই ইংল্যান্ডের একাদশে হ্যারি ম্যাগুয়ারের নাম উচ্চারিত হতেই দুয়োধ্বনি ভেসে আসে গ্যালারি থেকে। সমর্থকেরা যেন আগেভাগেই টের পেয়েছিলেন, একাদশে ম্যাগুয়ার আছে মানে বিপদ আছে!
ঘটলও ঠিক তা–ই। উয়েফা নেশনস লিগে জার্মানির বিপক্ষে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে ইংল্যান্ড। ম্যাচে ৭০ মিনিট পর্যন্ত ২-০ গোলে পিছিয়ে ছিল সাউথগেটের দল। এই ২ গোলে ম্যাগুয়ারের অবদান যথেষ্ট! ৫২ মিনিটে পেনাল্টি থেকে ইকাই গুন্দোগানের গোলে এগিয়ে যায় জার্মানি। ম্যাগুয়ারের বোকামির কারণে এই পেনাল্টি হজম করে ইংল্যান্ড।
জার্মান ফরোয়ার্ড জামাল মুসিয়েলাকে বক্সের ভেতর আটকাতে পারেননি ম্যাগুয়ার। তা, থামাতে না–ই পারেন, কিন্তু পেনাল্টিটি যেভাবে হজম করলেন, তাতে ম্যাগুয়ারের রক্ষণজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তোলাই যায়। ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতিতে মুসায়ালার পায়ে মেরে বসেন এই ইংলিশ ডিফেন্ডার। মুসায়ালা বল বের করে ফেলার মুহূর্তে তাঁর পায়ে মারেন ম্যাগুয়ার। ভিএআর রায় দেয় পেনাল্টি!
প্রথমার্ধে ম্যাগুয়ার কিন্তু খারাপ খেলেননি। বেশ কয়েকবার বল কেড়েছেন, আক্রমণও ঠেকিয়েছেন। কিন্তু খেই হারিয়েছেন বিরতির পর। জার্মানি এগিয়ে যাওয়ার ১৫ মিনিট পর আবারও ভুল করেন ম্যাগুয়ার। এবার জার্মানির বক্সে ড্রিবলিং করার খেসারত দিতে হয় তাঁকে। ম্যাচের তখন ৬৭ মিনিট। ড্রিবলিং করতে গিয়ে জার্মানির বক্সে বল হারান ম্যাগুয়ার। কাই হাভার্টজের করা গোলের শুরুটা কিন্তু এই বল হারানো থেকে। ম্যাগুয়ারের কাছ থেকে বল কেড়ে আক্রমণে ওঠে জার্মানি। এরপর দূরপাল্লার শটে হাভার্টজের গোল।
ম্যাচে ইংল্যান্ড গোলকিপার নিক পোপও ভুল করেছেন। কিন্তু ম্যাগুয়ারের ভুলই চোখে বিঁধেছে বেশি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জার্সিতেও রক্ষণে নিয়মিত ভুল করে বসেন ম্যাগুয়ার। অধিনায়ক হয়েও একাদশে অনিয়মিত। কাল রাতের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রব উঠেছে, ইউনাইটেড তাঁর অধিনায়কত্বও কেড়ে নিতে পারে। তবে মজার বিষয় হলো, সাউথগেট কিন্তু তাঁর ওপর এখনো আস্থা রেখেছেন। নইলে ম্যাচে পুরো ৯০ মিনিট খেলাতেন না। ইংল্যান্ড কোচ এর আগেই বলেছেন, প্রয়োজনে নিজের সুনামকে ঝুঁকিতে ফেলে হলেও ম্যাগুয়ারকে তিনি খেলাবেন।
সাউথগেট ম্যাচের পর তবু আগলে রাখলেন ম্যাগুয়ারকে, ‘আমি জানি সবার লক্ষ্যবস্তু হ্যারি। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে এ দুই ম্যাচে হ্যারি কিন্তু দরকারের মুহূর্তে ভালো খেলেছে।’ পেনাল্টি নিয়ে সাউথগেটের বক্তব্য, ‘ডাগআউট থেকে বলা কঠিন। তবে বল হারানোটাই মূল সমস্যা। এ ছাড়া দল হিসেবে কিন্তু আমরা ভালোই খেলেছি।’
কিন্তু ইংল্যান্ডের সমর্থকেরা সম্ভবত সাউথগেটের এমন যুক্তি মেনে নেবেন না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা হচ্ছে ম্যাগুয়ারের। এক সমর্থক কোনো রাখঢাক না করেই লিখেছেন, ‘সে কীভাবে ইংল্যান্ড ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলে, এটাই মাথায় ঢোকে না।’ আরেক সমর্থক লিখেছেন, ‘এই তো আবারও ম্যাগুয়ারের ভুল...এটাই সে সবচেয়ে ভালো করে।’
অথচ জার্মানির মুখোমুখি হওয়ার আগে সমালোচকদের ধুয়ে দিয়েছিলেন ম্যাগুয়ার, ‘লোকে কী বলছে, তা নিয়ে আগ্রহ নেই। যেহেতু আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের অধিনায়ক, লোকে তাই ভেবে থাকে, আমাকে নিয়ে কিছু লেখা হলেই সেটা বড় কিছু। এ কারণেই তারা এটা করে এবং সবাই “ক্লিক” পছন্দ করে। অথচ আমি আট সপ্তাহের চোট কাটিয়ে ইউরোয় টুর্নামেন্টের সেরা দলে জায়গা পেয়েছি।’
ম্যাগুয়ার যত যুক্তিই দিন, কাল রাতে যে দুই ভুল করেছেন, তা প্রিমিয়ার লিগে সাধারণ মানের ডিফেন্ডারদের কাছ থেকেও আশা করা যায় না। যদিও তাঁর এমন ভুল নতুন কিছু নয়; এর আগে গত মৌসুমে ম্যাগুয়ারের রক্ষণ-ভুল নিয়ে তৈরি করা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছিল।