মেসি-রোনালদোকে নিয়ে টুইট-যুদ্ধ
সময়ের সেরা কে—লিওনেল মেসি নাকি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো?
ফুটবল বিশ্বের বহুল চর্চিত এ বিতর্কে প্রায়ই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যান গ্যারি লিনেকার ও পিয়ার্স মরগান। মেসির বড় সমর্থক লিনেকার আর রোনালদোকে ভালোবাসেন মরগান। নিজেদের প্রিয় খেলোয়াড়কে নিয়ে তাঁরা প্রায়ই তর্কে জড়ান। কেউ একজন ভালো করলে বা বড় কোনো মাইলফলক স্পর্শ করলে খোঁচা দেন ‘প্রতিপক্ষ’–সমর্থককে। লিনেকার-মরগানের এ তর্ক এবার রীতিমতো টুইট-যুদ্ধে রূপ নিয়েছে।
শনিবার রাতে ফ্রেঞ্চ লিগ ‘আ’তে ত্রয়ার বিপক্ষে ৪-৩ ব্যবধানে জয় পেয়েছে পিএসজি। ম্যাচে দূরপাল্লার শটে দারুণ এক গোল করেছেন মেসি। এ ছাড়া সহায়তা করেছেন নেইমারের গোলেও।
পার্ক দে প্রিন্সেসে মেসির দারুণ এই পারফরম্যান্সকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় লিনেকার-মরগানের টুইট-যুদ্ধ। নেইমারের গোলে মেসির সহায়তার ভিডিও পোস্ট করে লিনেকার টুইট করেন, ‘এ ধরনের মন্ত্রমুগ্ধ করা একদৃষ্টি এবং এই পাসের মূল্য তার বিপুলসংখ্যক গোলের চেয়ে বেশি, যা মেসিকে অন্য সবার থেকে আলাদা করে। এর সঙ্গে আছে তাঁর অবিশ্বাস্য ড্রিবলিংয়ের ক্ষমতা।’
মেসির প্রশংসা করা লিনেকারের টুইটটা ঠিক হজম করে উঠতে পারেননি মরগান। টকটিভির উপস্থাপক রিটুইট করে লেখেন, ‘আজ মেসিকে নিয়ে আপনার নিজের ড্রিবলিং আরও মন্ত্রমুগ্ধকর। পিএসজি কিংবদন্তি ফুটবল টাইটানস ত্রয়ার বিপক্ষে ৪-৩ ব্যবধানে জিতেছে...যদি আপনার গোট (জিওএটি, মানে সর্বকালের সেরা) আবার কোনো অর্থপূর্ণ লিগে খেলে, তাহলে আমাকে বলবেন।’
লিনেকারও কি আর চুপ থাকতে পারেন? মরগানের পছন্দের রোনালদো চলতি মৌসুমে বাজে সময় কাটাচ্ছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে নিয়মিত সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রিমিয়ার লিগ ও ইউরোপা লিগ মিলিয়ে মোটে ১৩ ম্যাচ খেলতে পেরেছেন, যেখানে গোল মাত্র ৩টি।
রোনালদোর বাজে সময়ের দিকে ইঙ্গিত করে লিনেকার মরগানকে পাল্টা টুইটে লেখেন, ‘আপনি আপনার গোটের মতোই তার (মেসির) শ্রেষ্ঠত্বের কাছে মার খাচ্ছেন। শুধু সেগুলো উপভোগ করুন। আপনার সব প্রতিযোগিতামূলক হওয়ার দরকার নেই।’
এদিকে ‘আপনার গোট’ শব্দে আবার ভীষণ আপত্তি মরগানের। লিনেকারকে জবাব দিয়ে লেখেন, ‘একজন গোট আছে। আমি তাকেই এগিয়ে রাখি, যে চারটি লিগে এবং দেশের হয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’
ইউনাইটেডের হয়ে প্রিমিয়ার লিগের পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে লা লিগা এবং জুভেন্টাসের হয়ে সিরি ‘আ’ জিতেছেন রোনালদো। পর্তুগালের স্পোর্তিংয়ে খেলার সময় পর্তুগিজ সুপার কাপও জিতেছেন, তবে লিগ জিততে পারেননি।
আন্তর্জাতিক সাফল্যে অবশ্য রোনালদোর চেয়ে বেশ এগিয়ে মেসি। আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকার পাশাপাশি ফিনালিসিমা, ২০০৮ অলিম্পিক এবং অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। এ ছাড়া তিনবার কোপা আমেরিকা ফাইনাল এবং একবার বিশ্বকাপ ফাইনালেও খেলেছেন। বিপরীতে রোনালদোর আন্তর্জাতিক শিরোপা দুটি—২০১৬ ইউরো ও ২০১৮ উয়েফা নেশনস লিগ।
আন্তর্জাতিক গোলে মেসির (৯০) তুলনায় বেশ এগিয়ে রোনালদো (১১৭)। রোনালদোর শিরোপা সাফল্যকে সামনে টেনে আনায় মরগানের পুরোনো এক মন্তব্যকে সামনে টেনে আনেন লিনেকার। ১৪ বছর আগে যুক্তরাজ্যের একটি পত্রিকায় রোনালদোকে নিয়ে লেখা মরগানের কলামের শিরোনাম ছিল, ‘রোনালদো একটা নষ্ট হয়ে যাওয়া ছোকরা। কেন তার জন্য উল্লাস করবেন?’
পত্রিকার পুরোনো কলামের সেই ছবি পোস্ট করে লিনেকার মরগানকে খোঁচা দিয়ে লেখেন, ‘কে আপনাকে সাক্ষাৎকার দেয়, তার ওপর নির্ভর করে আপনি আপনার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। ক্রিস্টিয়ানো কি এটা দেখেছে?’
পাল্টা জবাবে মরগান টেনে আনেন লিনেকারের মন্তব্য নিয়ে করা একটি শিরোনাম, যেখানে লেখা ছিল—‘মেসি ম্যারাডোনা নয়: লিনেকার’। মরগান ক্যাপশনে লেখেন, ‘পরিবর্তনশীলতার কথা বলছেন লিনেকার? আপনি কি মেসিকে এটি দেখিয়েছেন?’
লিনেকার জবাব দেন, ‘জবাব দেওয়ার মতো এর চেয়ে ভালো কিছু খুঁজে পাননি।’
মরগানের পাল্টা, ‘তার মানে মেসির সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর আপনার মনোভাব বদলেছে, তাই তো?’ লিনেকারের জবাব, ‘না, এটা সত্য নয়। মেসির একমাত্র সাক্ষাৎকারটা আমি মাত্র দুই বছর আগে নিয়েছি। সত্য হচ্ছে, মেসি-রোনালদোর মধ্যে বাছাই করার সুযোগ কমই আছে। ব্যবধান সামান্যই। আমার দেখা সেরা দুই খেলোয়াড় মেসি-ম্যারাডোনা।’
বিরতিহীনভাবে চলতে থাকা লিনেকার-মরগানের টুইট-যুদ্ধে মরগানের শেষ জবাব, ‘রোনালদোই সর্বকালের সেরা। যাদের ফুটবলের ঠিকঠাক মাথা আছে, তারা জানে। কেউ তার ধারেকাছেও নেই।’