মেসি–রোনালদোর কেউ গোলের যে রেকর্ডে শীর্ষে নেই

লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো

এই শতাব্দীতে ফুটবলের বেশির ভাগ রেকর্ড ও পরিসংখ্যানে অবধারিতভাবে আছে দুটি নাম—লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গোলের প্রসঙ্গ এলে তো কথাই নেই। এ ধরনের পরিসংখ্যানেও মেসি–রোনালদোই এগিয়ে আছেন।

যদি প্রশ্ন করা হয়, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ ঘরোয়া লিগে (ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ, স্প্যানিশ লা লিগা, ইতালিয়ান সিরি ‘আ’, জার্মান বুন্দেসলিগা ও ফরাসি লিগ আঁ) খেলা ফুটবলারদের মধ্যে গত এক দশকে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি গোল কে করেছেন, তাহলে নিশ্চয়ই অনেকে বিষয়টি নিয়ে ভাববেন। কিছুক্ষণ ভাবার পর কেউ কেউ হয়তো মেসি কিংবা রোনালদোর নামই বলবেন। তবে পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা।

একবিংশ শতাব্দীর সেরা দুই ফুটবলার মেসি বা রোনালদো নন, গত ১০ বছরে শীর্ষ পাঁচ লিগের ফুটবলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোল করেছেন রবার্ট লেভানডফস্কি। ফুটবলের পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট এ তথ্য জানিয়েছে।

ট্রান্সফারমার্কেটের হিসাব অনুযায়ী, গত এক দশকে লেভানডফস্কি ৪৭৮ ম্যাচ খেলে সবচেয়ে বেশি ৪০৭টি গোল করেছেন। বার্সেলোনার ৩৫ বছর বয়সী স্ট্রাইকার লেভা এ সময়ে দুটি জার্মান ক্লাব বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও বায়ার্ন মিউনিখের হয়েও খেলেছেন। এর মধ্যে ২০২০–২১ মৌসুমে বুন্দেসলিগায় ৪১ গোল করেন, যা এই লিগে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। সেই মৌসুমে বায়ার্নের হয়ে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতেন লেভা, হয়ে ওঠেন ব্যালন ডি’অরের সবচেয়ে বড় দাবিদার। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সেবার ব্যালন ডি’অর দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন

৩৭৭ গোল করে তালিকার দুইয়ে আছেন মেসি, ৩৫০ গোল করা রোনালদো আছেন তিনে। মেসি–রোনালদো দুজনই গত বছর ইউরোপের পাট চুকিয়েছেন। রোনালদো গেছেন সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে। মেসি গেছেন মার্কিন মুলুকে; নাম লিখিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) ক্লাব ইন্টার মায়ামিতে। ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে চলে আসা দুই মহাতারকার ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ ঘরোয়া লিগের ক্লাবে ফেরার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। তাই এ তালিকার চারে থাকা হ্যারি কেইনের সামনে মেসি–রোনালদোকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। টটেনহামের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিন্ন করে এ মৌসুমেই বায়ার্ন মিউনিখে যোগ দেওয়া কেইন ৪৫৩ ম্যাচ খেলে করেছেন ৩০৯ গোল। মজার ব্যাপার হলো, এই শীর্ষ চার গোলদাতার প্রত্যেকের বয়স ৩০ বছর পেরিয়েছে।  

বায়ার্ন ছেড়ে এসে বার্সেলোনায়ও গোল করে চলেছেন রবার্ট লেভানডফস্কি
এএফপি

মেসি–রোনালদোর পরেই যাঁর নাম বেশি উচ্চারিত হয়, সেই নেইমার এ তালিকার শীর্ষ দশে নেই। নেইমারের বয়সও ৩০ পেরিয়েছে; বার্সেলোনা ও পিএসজি মিলিয়ে ঠিক ১০ বছরই খেলেছেন। মেসি–রোনালদোর মতো তিনিও ইউরোপ ছেড়েছেন, নাম লিখিয়েছেন সৌদি ক্লাব আল হিলালে। কিন্তু চোটপ্রবণ ব্রাজিলিয়ান তারকা প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। গত এক দশকে বার্সা ও পিএসজি মিলিয়ে ৩৫৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ২২৩ গোল। অর্থাৎ, ম্যাচপ্রতি নেইমারের গোল ০.৬২টি।

আরও পড়ুন

এ তালিকার শীর্ষ পাঁচের শেষ নামটি কিলিয়ান এমবাপ্পে। সময়ের অন্যতম আলোচিত এই ফুটবলার শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে খেলছেন সাড়ে আট বছর ধরে। তাতেই সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এএস মোনাকো ও পিএসজির হয়ে ৩৫২ ম্যাচে করে ফেলেছেন ২৭১ গোল। আরও দেড় বছর পর শীর্ষ ফুটবলে খেলার এক দশক পূর্ণ হবে এমাবাপ্পের। ছন্দ ধরে রাখতে পারলে গোলসংখ্যায় মেসি–রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন ফ্রান্সের এই বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার।

গ্রাফিক্‌স : মাহাফুজার রহমান

শীর্ষ দশের শেষ পাঁচজন যথাক্রমে করিম বেনজেমা (২৫৭ গোল), পিয়েরে–এমেরিক অবামেয়াং (২৫৬ গোল), মোহাম্মদ সালাহ (২৫০ গোল), লুইস সুয়ারেজ (২৪১ গোল) ও চিরো ইম্মোবিলে (২৩৯ গোল)। এই পাঁচজনের মধ্যে বেনজেমা ও সুয়ারেজ ইউরোপ ছেড়েছেন। শোনা যাচ্ছে, মৌসুম শেষে সালাহও ইউরোপ ছাড়তে পারেন।

তবে এই দশজনের মধ্যে একটা জায়গায় রোনালদোই কিন্তু এগিয়ে। সেটা গোলের অনুপাতে। রোনালদো গত এক দশকে রিয়াল মাদ্রিদ, জুভেন্টাস ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ম্যাচপ্রতি ০.৮৬টি গোল করেছেন। গোলসংখ্যায় শীর্ষে থাকা লেভানডফস্কি এ সময়ে ডর্টমুন্ড, বায়ার্ন ও বার্সার হয়ে ম্যাচপ্রতি গোল করেছেন ০.৮৫টি।

আরও পড়ুন