গোল মিসের মহড়ায় মালদ্বীপের বিপক্ষে হার বাংলাদেশের
বাংলাদেশ ০:১ মালদ্বীপ
রক্ষণের ভুল আর গোল মিসের মহড়া—মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশকে ডুবিয়েছে এ দুটিই। ১৮ মিনিটে হামজা মোহাম্মদের ফ্রি কিক থেকে আলী ফাসির বক্সে অরক্ষিত দাঁড়িয়ে থেকে হেডে যে গোলটি করেছেন, দুই দলের পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে সেটিই। এক বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলের বাইরে ছিল মালদ্বীপ। নানা সমস্যার কারণে লিগও হয়নি এই সময়ে। সেই মালদ্বীপই আজ কিংস অ্যারেনায় বাংলাদেশকে হারিয়েছে ১-০ গোলে।
অথচ কিংস অ্যারেনায় একচ্ছত্র প্রাধান্য ছিল বাংলাদেশেরই। বারবার আক্রমণে উঠেছে দল, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, শেখ মোরছালিন, রাকিব হোসেন, শাহরিয়ার ইমনরা একের পর এক গোলের সুযোগ তৈরি করেছেন। কিন্তু ফিনিশিংয়ের দুর্বলতায় শেষ পর্যন্ত হারই সঙ্গী হাভিয়ের কাবরেরার দলের।
তবে শুরু থেকেই বাংলাদেশের রক্ষণভাগকে নড়বড়ে মনে হচ্ছিল। মালদ্বীপের দ্রুতগতির ফরোয়ার্ডদের ঠেকাতে তপু বর্মণ, শাকিল আহাদদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা গেছে। ম্যাচের ১৮ মিনিটে সেই রক্ষণের সমন্বয়হীনতার কারণেই গোল হজম করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বক্সের ঠিক বাইরে মোহাম্মদ হৃদয়ের যে ফাউলের কারণে মালদ্বীপ ফ্রি কিক পায়, সেটিও ছিল অপ্রয়োজনীয়। হামজা মোহাম্মদের ফ্রি কিকে মালদ্বীপের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় আলী ফাসিরকে একেবারে অরক্ষিত রেখেছিলেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। অনেকটা বিনা বাধাতেই গোলপোস্টের দিকে আসা ফ্রি কিকে মাথা ছোঁয়ান ফাসির।
গোল হজম করলেও প্রথমার্ধে বাংলাদেশই গোলের সুযোগ বেশি পেয়েছে। ফয়সাল আহমেদ ফাহিম বেশ কয়েকবারই মালদ্বীপের রক্ষণকে ফাঁকি দিয়েছেন। বারবার বল নিয়ে তিনি বক্সে ঢুকেছেন। কিন্তু সেখানেও রাকিব হোসেন আর শেখ মোরছালিনের সঙ্গে তাঁর সমন্বয়হীনতা ছিল স্পষ্ট। আট মিনিটেই মালদ্বীপের রক্ষণের ভুলে বল ধরে ফাহিম গোলমুখে যে ক্রসটি করেন, তা ছিল উদ্দেশ্যহীন। ক্রসটি ধরার জন্য কেউই ছিলেন না সেখানে। ১৫ মিনিটে ফাহিমের ক্রস থেকে রাকিবের হেড গোল হওয়ার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী ছিল না।
১৮ মিনিটে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ার পরের মিনিটেও ফাহিমের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। ৩৪ মিনিটে রাকিবের প্রচেষ্টাও তা-ই। ৩৭ মিনিটে মোরছালিনের ফ্রি কিক থেকে তপু বর্মণের হেড বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৪৪ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সোহেল রানার শট দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাইড পোস্টে লেগে ফিরে আসে।
দ্বিতীয়ার্ধে তিন পরিবর্তনের পর মালদ্বীপের ওপর পূর্ণ আধিপত্যই প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশ। সোহেল রানার জায়গায় চন্দন রায়, মজিবর রহমান জনি নামেন শাহ কাজেম কিরমানির জায়গায়। ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের বদলে শাহরিয়ার ইমনকে মাঠে নামান কোচ। এরপরই একের পর এক আক্রমণে মালদ্বীপের রক্ষণকে চাপের মুখে ফেলে বাংলাদেশ। তবে চাপে থাকলেও মালদ্বীপ দিশাহারা হয়নি। বিশেষ করে মালদ্বীপের গোলকিপার হুসেইন শরিফ ছিলেন দুর্দান্ত। বাংলাদেশের ফরোয়ার্ডদের প্রচেষ্টাগুলো বারবার ফিরিয়েছেন তিনি।
৭০ মিনিটে শাহরিয়ার ইমনের হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এর পরের ১০ মিনিটে বাংলাদেশ কমপক্ষে পাঁচটি নিশ্চিত গোলের সুযোগ তৈরি করে। ৭৫ মিনিটে মজিবর রহমান জনির শট ঠেকিয়ে দেন হুসেইন শরিফ। ৭৮ মিনিটে মোরছালিনের শটও প্রতিহত করেন তিনি। ৭৮ ও ৮৪ মিনিটে মোরছালিনের আরও দুটি শট ফেরান মালদ্বীপের গোলকিপার। ৮৬ মিনিটে রাকিবের কাট ব্যাক থেকে মোরছালিন আবারও সুযোগ নষ্ট করেন। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে তপু বর্মণ একটি কর্নার থেকে ঠিকমতো বলে মাথা ছোঁয়াতে না পারায় আরও একটি সুযোগ নষ্ট হয়।
গোল করতে না পারা, বাংলাদেশের ফুটবলের চিরায়ত দুর্বলতা। গতকাল ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনও উঠেছিল এই প্রসঙ্গ। কিন্তু আজ মাঠের খেলায় পুরোনো চিত্রই দেখা গেল। আক্রমণাত্মক খেলে, প্রচুর সুযোগ তৈরি করেও গোলটাই করতে পারল না বাংলাদেশ। ফুটবলে গোল করতে না পারলে জেতা যায় না—রূঢ় সত্যটা আবারও চোখের সামনে দেখতে পেল বাংলাদেশের ফুটবল।