কাসেমিরোকে ক্রুস–মদরিচের আবেগময় বিদায়ী চিঠি
কাসেমিরো, লুকা মদরিচ ও টনি ক্রুস—রিয়াল মাদ্রিদের ‘ত্রিফলা’ মিডফিল্ড। মাঠে রিয়ালের এই ‘ছবি’টা আর দেখা যাবে না। কারণটা তো আপনার জানাই, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যাওয়া নিশ্চিত হয়ে গেছে কাসেমিরোর।
ব্রাজিলিয়ান এই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডারের বিদায়বেলায় তাঁকে অর্ঘ্য দিয়েছেন ক্লাবটির সতীর্থরা। ক্রুসের উক্তিসহ একটি ছবি প্রকাশ করেছে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’। চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা হাতে দাঁড়িয়ে আছেন কাসেমিরো, তাঁর দুই পাশে মদরিচ ও ক্রুস। দুজনের আঙুলই তাঁক করা কাসেমিরোর প্রতি। আর ক্রুসের উক্তি, ‘এই তিনজন একসঙ্গে কখনো ফাইনাল হারেনি। আমরা তোমাকে মিস করব।’
কথাটা সত্যি। রিয়াল মাদ্রিদের একাদশে একসঙ্গে নেমে এই ত্রিফলা মিডফিল্ড কখনো ফাইনাল হারেনি—১০টি ফাইনাল খেলেছে জিতেছে ১০টিতেই। মাঝমাঠে তাঁদের ‘বারমুডা ট্রায়াঙ্গল’ তো আর এমনিতেই বলা হতো না!
কিন্তু সবকিছুরই যেমন শেষ আছে, তেমনি রিয়ালের এই ত্রিফলা মিডফিল্ডও এখন অতীত। এতদিনের (সাত মৌসুম) সতীর্থ বিদায় নিচ্ছেন, ক্রুস–মদরিচের মন তো একটু খারাপ হবেই। সেটিরই কাব্যিক প্রকাশ ঘটেছে কাসেমিরোকে বিদায় জানিয়ে ক্রুস ও মদরিচের চিঠিতে। যা প্রকাশিত হয়েছে স্প্যানিশ সংবাদপত্র ’মার্কা’য়।
জার্মান মিডফিল্ডার ক্রুসের সেই চিঠি—
প্রিয় কাসে, কোনো পরিস্থিতিতেই তোমার সঙ্গে শান্তিতে থাকা বলতে থাকা অসম্ভব। এমনকি টার্কিশ বাথ নেওয়ার সময়ও না। সেখানেও তুমি থাকা মানে আরেক যন্ত্রণা ; দেখা যায় তুমি কাউকে যেতে বলেছ, গিয়ে সে দেখল বাইক আর ভারোত্তোলনের সরঞ্জাম প্রস্তুত—তোমার নতুন সতীর্থদের সতর্ক করে দেওয়া ভালো। কারণ তোমার সঙ্গে টার্কিশ বাথও জিম হয়ে যায়...শুধু ওঠা–বসা করার সময়ই তুমি কাউকে একটু আরাম করার সুযোগ দাও।’
আমি তোমাকে মিস করব। তুমি উদাহরণ দেওয়ার মতো একজন পেশাদার, শীর্ষ সারির খেলোয়াড়, একজন যোদ্ধা, যে আমাকে অনেক সময়ই অনেক কিছু থেকে বাঁচিয়েছে...তবে এসব ছাপিয়ে তুমি একজন ভালো মানুষ।
আমরা ইতিহাস গড়েছি। আহা! কী দারুণ সময় ছিল!
এখন আমাদের খেলার পথটা আলাদা হয়ে গেলেও বন্ধুত্ব অটুট থাকবে, এটা আমি তোমাকে নিশ্চিত করতে পারি।’
তোমার সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি। শিগগিরই দেখা হবে।
সৌভাগ্য কামনায়
তোমারই টনি।
ক্রোয়াট মিডফিল্ডার মদরিচের চিঠি—
আমাদের ক্লাবে তোমার অভিষেক ম্যাচটা এখনো মনে আছে আমার...তুমি কী নার্ভাসই না ছিলে! তোমাকে শান্ত থাকতে বলেছিলাম এবং এখন ভাবি, সবকিছু বদলে দিয়ে তোমার কী দারুণ সব অর্জন! সেটা আমারও প্রথম মৌসুম এবং আমরা কেউ–ই জানতাম না, ফুটবল আমাদের জন্য সামনের দিনগুলিতে কী নিয়ে অপেক্ষা করছে।
তুমি একজন সত্যিকারের নেতা হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছ। তুমি সবসময়ই সতীর্থ ও রিয়ালের জন্য তা–ই ছিলে। আমরা তোমাকে সব সময় মনে রাখব।’
আমরা একসঙ্গে অনেক কিছু জিতেছি, কিন্তু আমি মনে রাখব সেসব মুহূর্ত যা কেউ খেয়াল করেনি। ভ্যালদেবেবাজে (রিয়ালের অনুশীলনকেন্দ্র) আমাদের প্রতিদিনের অনুশীলন, হাসি–ঠাট্টা এসব। তুমি সব সময়ই ফুরফুরে মেজাজে থাকতে, এমনকি সেটা দুশ্চিন্তার সময়ে, ব্যর্থতার সময়ও।
তোমার সঙ্গে ওই হাসি আনন্দের সময়গুলো আমার মনে প্রশান্তি এনে দিত। পেছনে তাকিয়ে যখন সেই দিনগুলো এবং তোমাকে নিয়ে ভাবি, তখন এটা বুঝি অনেক “নিয়েগা–নিয়েগা” (বান্টু আদিবাসিদের ভাষা, বাংলা অর্থ ভালো–ভালো) হতে যাচ্ছে। তুমি এই বিশ্বের সেরা দেহরক্ষী।
আমি তোমাকে মিস করব। কিন্তু তোমার সেরা সাফল্য কামনা করি। একজন পেশাদার এবং মানুষ হিসেবে তুমি এর যোগ্য।
সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ এবং তোমার সৌভাগ্য কামনা করি, বন্ধু!