প্রো লিগকে নক্ষত্রপুঞ্জ বানাতে সৌদি আরব যেভাবে টাকা ঢালছে, তাতে একসময় ইউরোপকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। সর্বশেষ গ্রীষ্মকালীন দলবদলে এর একটা নমুনাও দেখিয়েছে সৌদি ক্লাবগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে আল হিলাল।
নেইমারকে ৯ কোটি ইউরোয় দলে ভেড়ানোর মধ্য দিয়ে অ–ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর মধ্যে স্কোয়াড সাজানোর খরচে শীর্ষে উঠে এসেছে আল হিলাল। সৌদি ক্লাবটির অবস্থান ১৮ নম্বরে। ইউরোপের বাইরে শীর্ষ বিশে থাকা একমাত্র ক্লাবও তারা। আল হিলালের বর্তমান স্কোয়াড়ের মূল্য ৩৮ কোটি ২০ লাখ ইউরো (৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা)।
ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্পোর্টস স্টাডিজ (সিআইইএস) তাদের সাপ্তাহিক সংকলনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সাপ্তাহিক সংকলনের ৪৩০তম সংস্করণে গবেষণাপ্রতিষ্ঠানটি বর্তমান স্কোয়াড পর্যালোচনার পর দলবদলের খরচে (বোনাস, ভাতা ও ক্লাবের লক্ষ্য পূরণ সাপেক্ষে অন্যান্য আর্থিক পুরস্কারসহ) বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি ক্লাবের তালিকা প্রকাশ করেছে।
সেই তালিকায় দেখা যাচ্ছে বার্সেলোনা, এসি মিলান, ইন্টার মিলান, আয়াক্স, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মতো ইউরোপীয় পরাশক্তিদের চেয়েও আল হিলালের স্কোয়াডের দাম বেশি। লিওনেল মেসির পর সের্হিও বুসকেতস, জর্দি আলবার মতো তারকাদের কিনলেও শীর্ষ ১০০ ক্লাবের মধ্যে নেই ইন্টার মায়ামি।
অ-ইউরোপীয় ক্লাবগুলোর মধ্যে আল হিলাল ছাড়াও প্রথমবার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে সৌদির আরও তিনটি ক্লাব—ফিরমিনো-মাহরেজদের আল আহলি, রোনালদো-মানেদের আল নাসর ও বেনজেমা-কান্তেদের আল ইত্তিহাদ। এ ছাড়া মেক্সিকোর লিগা এমএক্সের তিনটি ও ব্রাজিলের সিরি ‘আ’-এর দুটি ক্লাব শীর্ষ ১০০–তে আছে।
তবে সর্বশেষ গ্রীষ্মকালীন দলবদলে খরচের খেল দেখিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ইংলিশ ক্লাবটির বর্তমান স্কোয়াডের দাম ১১৫ কোটি ইউরো (১৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা)। স্কোয়াড গড়তে শতকোটি ইউরো ব্যয় করেছে আরও তিনটি ক্লাব—চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটি ও পিএসজি।
শীর্ষ ১০ ক্লাবের ৮টিই ইংল্যান্ডের। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, ম্যানচেস্টার সিটির পর আছে আর্সেনাল, টটেনহাম হটস্পার, লিভারপুল, নিউক্যাসল ইউনাইটেড এবং ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের নাম।
এদের মধ্যে নিউক্যাসলকে বড় চমকই বলা যায়। ২০২১ সালের অক্টোবরে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মালিকানায় আসার পর ক্লাবটি দেদার টাকা ঢালতে শুরু করেছে। তাদের বর্তমান স্কোয়াডের মূল্য ৬৬ কোটি ১০ লাখ ইউরো (৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা)। ইংল্যান্ডের বাইরে শীর্ষ দশে থাকা দুটি ক্লাব হলো ফ্রান্সের পিএসজি ও স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদ।
মহামারি করোনার সময় থেকে আর্থিক সংকটে পড়া বার্সেলোনা আছে ১৯ নম্বরে। কাতালান ক্লাবটির বর্তমান স্কোয়াডের দাম ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ইউরো (৪ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা)। শীর্ষে থাকা ইউনাইটেড শুধু ডিফেন্ডার কিনতেই বার্সার পুরো স্কোয়াডের চেয়ে বেশি খরচ করেছে।
খেলোয়াড়দের পজিশন বিবেচনায় নিলে গোলকিপার কেনার খরচে এগিয়ে আছে লিভারপুল (৭ কোটি ৩০ লাখ ইউরো), ডিফেন্ডার কেনায় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (৩৮ কোটি ৩০ লাখ ইউরো), মিডফিল্ডারে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে রিয়াল মাদ্রিদ (৪৪ কোটি ৭০ লাখ ইউরো) আর ফরোয়ার্ডে পিএসজি (৫৫ কোটি ৭০ লাখ ইউরো)।
বিশ্বের ১৯টি দেশের ক্লাব সিআইইএসের শীর্ষ ১০০–তে জায়গা করে নিয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ১৯টি ক্লাব ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের। তালিকায় জায়গা হয়নি শুধু নবাগত লুটন টাউনের।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের পর আছে ইতালিয়ান সিরি ‘আ’ (১৫টি ক্লাব) ও স্প্যানিশ লা লিগা (১২টি ক্লাব)। ফ্রেঞ্চ লিগ আঁ ও জার্মান বুন্দেসলিগা আছে যৌথভাবে চারে। দুই লিগেরই ১১টি করে ক্লাব সিআইইএসের শীর্ষ ১০০–তে জায়গা পেয়েছে।