জাপানের যে বিতর্কিত গোলে জার্মানি বাদ পড়ল
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি ছড়িয়ে পড়েছে। ইএসপিএনের টুইটে তো সোজাসাপটাই বলা হয়েছে, ‘এই বলটা বাতিল (দাগের ওপাশে) হলে জার্মানি শেষ ষোলোয় উঠে যেত।’
কিন্তু তা হয়নি। ৫১ মিনিটে আও তানাকার গোলে (২-১) তুলে নেওয়া জয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোয় উঠেছে জাপান। স্পেন হেরেও গ্রুপের রানার্সআপ দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠেছে আর টানা দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েছে জার্মানি। বিশ্বকাপে জার্মানি এর আগে কখনোই টানা দুবার গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়েনি।
গোলটা নিয়ে তাই জার্মানিতেই কথা হচ্ছে বেশি। দেশটির সংবাদমাধ্যম ‘বিল্ড’ তো তানাকার গোলটি ১৯৬৬ বিশ্বকাপে জিওফ হার্স্টের বিতর্কিত সেই গোলের সঙ্গে তুলনা করছে।
ম্যাচে তখন ১-১ গোলে সমতায় স্পেন ও জাপান। ডান প্রান্ত থেকে আসা ক্রস স্পেনের গোলপোস্টের পাশে দিয়ে বাইলাইন পেরিয়ে যাচ্ছিল। উইঙ্গার কাওরু মিতোমা দুরন্ত গতিতে ছুটে এসে বলটা ক্রস করেন এবং তানাকা বলে স্রেফ শরীর ছুঁইয়ে গোলের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। মাঠের রেফারি তাৎক্ষণিকভাবে গোলটি বাতিল করে দিয়েছিলেন।
মিতোমা ক্রস করার আগেই বল বাইলাইন পেরিয়ে গেছে, এমনটাই মনে করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান রেফারি ভিক্টর গোমেজ। ভিডিও রিপ্লে দেখেও তেমনটাই মনে হয়েছে। কিন্তু তখনই রেফারির ডাক পড়ে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) প্রযুক্তির কাছে। বেশির ভাগ দর্শক ভেবেছিলেন, মাঠের রেফারির সিদ্ধান্তই বহাল থাকবে। ভুল। ভিএআর সেটিকে গোল হিসেবে রায় দিয়ে দেয়! কেন? বলের পুরো অংশ বাইলাইন (গোলপোস্টের পাশের দাগ) অতিক্রম করেনি।
শেষ পর্যন্ত এই গোলেই তুলে নেওয়া জয়ে ৩ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছে জাপান। স্পেনের বিপক্ষে জাপান ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র করলে এশিয়ার দলটির সংগ্রহ দাঁড়াত ৪ পয়েন্ট। তখন জাপানের গোল ব্যবধান হতো ০। আর কোস্টারিকার বিপক্ষে ৪-২ গোলের জয় তুলে নেওয়া জার্মানির ‘ই’ গ্রুপে বর্তমান অবস্থান তৃতীয়। ৩ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট ও +১ গোল ব্যবধান দলটির।
অর্থাৎ জাপান ও স্পেনের মধ্যকার ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হলে তখন জার্মানি ও জাপানের পয়েন্ট হতো সমান ৪। কিন্তু গোল ব্যবধানে এগিয়ে (+১) থাকায় গ্রুপের দ্বিতীয় সেরা দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠত জার্মানিই। জাপানের ওই গোল বৈধ হওয়ায় দলটি যেমন জিতেছে, তেমনটি গোল ব্যবধানও হয়েছে +১।
ইএসপিএন জানিয়েছে, এই ম্যাচে ভিএআর রেফারির দায়িত্বে ছিলেন মেক্সিকোর ফার্নান্দো গুয়েরো। জাপানের দ্বিতীয় গোলটি বৈধ হিসেবে রায় দিতে গুয়েরোকে শতভাগ নিশ্চিত হতে হতো যে বলের অন্তত কিছু অংশ বাইলাইন দাগের ওপর আছে। বল যেহেতু গোলাকার, মিতোমা ক্রস করার সময় মাটিতে যেখানে বলটি ছিল, তখন বক্রতার কারণে বলের বেরিয়ে আসা অংশ বাইলাইনের ওপর ছিল কি না, সেটা দেখা হয়।
সিদ্ধান্তটি নিতে গোললাইন ক্যামেরা ব্যবহার করা হয়। ইএসপিএন জানিয়েছে, গোললাইনের ক্যামেরা ব্যবহার করে একটি ছবিতে বোঝা গেছে বলের কিছু অংশ বাইলাইনের দাগের ওপর ছিল। মাঠের রেফারির সিদ্ধান্ত পাল্টে তাই সেটিকে গোল হিসেবে রায় দেন ভিএআর রেফারি ফার্নান্দো গুয়েরো।
তবে এ বিষয়ে ফিফার সমালোচনা করেছে ইএসপিএন। যেহেতু টিভিতে কিংবা ক্যামেরায় তোলা ছবিতে এমনিতে দেখে মনে হচ্ছে, বল বাইলাইন পেরিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু এ বিষয়ে ভিএআর কীভাবে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে এবং কী কী বিষয় দেখা হয়, তা ফুটবলপ্রেমীদের জানাতে ফিফা ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করে ইএসপিএন। নইলে এত বিতর্ক হতো না।
জার্মানির সংবাদমাধ্যম ‘বিল্ড’ যেমন লিখেছে, ‘তিন মিনিট ধরে গোলটা হয়েছে কি না, তা দেখা হয়েছে। টিভিতে দেখে মনে হয়েছে বল দাগের ওপাশে। হয়তো কয়েক মিলিমিটার পেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গোলটির সঙ্গে ১৯৬৬ বিশ্বকাপে (ফাইনালে) ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডের সেই গোলটির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। সেটা ছিল ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম বড় বিতর্ক। ওই গোলটা স্কোরবোর্ডে তোলা উচিত হয়নি, যেমনটা জাপান ও স্পেনের ক্ষেত্রেও করা উচিত।’
১৯৬৬ বিশ্বকাপ ফাইনালে অতিরিক্ত সময়ের খেলা চলছিল। ১০০ মিনিট পর্যন্তও ইংল্যান্ড ও জার্মানি ১-১ গোলে সমতায় ছিল। পরের মিনিটেই জিওফ হার্স্টের শট ক্রসবারে লেগে গোললাইনে পড়ে এবং ওয়েবার তা ক্লিয়ার করেন। সুইস রেফারি প্রথমে তা কর্নার দিলেও পরে সহকারী রেফারির সঙ্গে কথা বলে সেটিকে গোল হিসেবে রায় দেন। ম্যাচটি ৪-২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইংল্যান্ড। জার্মানির গোলকিপার হ্যান্স তিলকোস্কি বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর আগপর্যন্ত আমি মনে করব, বল গোললাইন অতিক্রম করেনি।’