‘পুলিশের অবিচারের’ প্রতিবাদে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা তিউনিসিয়ার ফুটবলারের
‘পুলিশের অবিচারের’ প্রতিবাদে গায়ে আগুন দিয়েছিলেন তিউনিসিয়ার পেশাদার ফুটবলার নিজার ইসাউয়ি। শরীর তৃতীয় মাত্রায় পুড়ে যাওয়ার পর ৩৫ বছর বয়সী এ ফুটবলারকে আর বাঁচানো যায়নি। মারা গেছেন তিউনিসিয়ার শীর্ষ স্তর থেকে নিচু স্তরে ক্লাবে খেলা নিজার ইসাউয়ি।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, তিউনিসিয়ার শীর্ষ লিগের দল ইউএস মনতাসিরে খেলেছেন ইসাউয়ি। মৃত্যুর আগে ফ্রি এজেন্ট হয়ে পড়েছিলেন। খেলতেন অপেশাদার লিগে। চার সন্তানের জনক ইসাউয়ির আত্মহত্যায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে দেশটির হাফৌজ অঞ্চলে তরুণেরা প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। পুলিশের প্রতি পাথর ছুড়ে মারেন তাঁরা। উত্তেজিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করেছে পুলিশ।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে সংবাদ সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, তিউনিসিয়ার মধ্যাঞ্চলের প্রদেশ কাইরাউনের হাফৌজ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে গায়ে আগুন দেন ইসাউয়ি। প্রতি কেজি কলা ১০ দিনারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৫০ টাকা) কমে কিনতে পারেননি ইসাউয়ি। সেই অঞ্চলের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ জানানোর পর পুলিশই উল্টো তাঁকে ‘সন্ত্রাসী’ কার্যক্রমের জন্য অভিযুক্ত করে। এএফপি জানিয়েছে, কলার দাম দ্বিগুণ করেছে তিউনিসিয়া সরকার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইসাউয়ির একটি ভিডিও সেলফি ছড়িয়ে পড়েছে। ইসাউয়ি সেখানে চিৎকার করে বলেছেন, ‘১০ দিনারে কলা বিক্রি করছে, এমন কারও সঙ্গে বাদানুবাদের পর পুলিশ স্টেশন আমাকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অভিযুক্ত করেছে। হ্যাঁ, কলা নিয়ে অভিযোগের জন্য এটা বলা হয়েছে।’
সংবাদ সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন জানানো হয়েছে, মৃত্যুর আগে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন ইসাউয়ি। সেখানে তিনি বলেছেন, নিজের জন্য ‘আগুনে পুড়ে মৃত্যুর’ রায় চূড়ান্ত করেছেন, ‘আমার আর শক্তি নেই। এই পুলিশি রাষ্ট্রকে জানতে দিন রায়টা আজই কার্যকর করা হবে।’
এএফপি জানিয়েছে, গত সপ্তাহের শুরুতে গায়ে আগুন দেন ইসাউয়ি। স্থানীয় কাইরাউন অঞ্চলের হাসপাতাল থেকে তাঁকে তিউনিসিয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচাতে পারেননি বলে এএফপিকে জানিয়েছেন ইসাউয়ির ভাই রিয়াদ, ‘সে গতকাল (বৃহস্পতিবার) মারা গেছে। আজ (শুক্রবার) সমাহিত করা হবে।’
এ ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে ভিড় জমিয়ে প্রতিবাদ জানায় উত্তেজিত জনতা। তবে তিউনিসিয়ার প্রশাসনের তরফ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা জানিয়েছে, ইসাউয়ির পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘পুলিশের অবিচার’–এর প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
কাল হাজারো মানুষ ইসাউয়ির বাড়িতে ভিড় জমান। সেখানে তাঁর শেষকৃত্যে স্লোগান ধরেছে উত্তেজিত জনতা, ‘নিজার, তোমার জন্য আমরা নিজেদের রক্ত ও জীবন দিয়ে আত্মত্যাগ করব।’ স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসাউয়ির শেষকৃত্যেও পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ হয়।
ইসাউয়ির এই প্রতিবাদ মনে করিয়ে দেয় মোহাম্মদ বাওয়াজিজিকে। ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর পুলিশের দুর্নীতির প্রতিবাদে তিউনিসিয়ার সিদি বাওজিদ এলাকার ফুটপাতের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ বাওয়াজিজি নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দেন। সেই ঘটনা থেকে জন্ম আরব বসন্তের।
২৬ বছর বয়সী বাওয়াজিজির আত্মাহুতির খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তিউনিসিয়ায়। শুরু হয় আন্দোলন। তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন দেশটির প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদিন বেন আলী। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা বেন আলীর শাসনামলের ইতি ঘটে। তিউনিসিয়ার বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকা শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে বাহরাইন, মিসর, লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনে।
তিউনিসিয়ার বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে ‘দ্য অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো–অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের’ (ওইসিডি) একটি তথ্য জানিয়েছে আল–জাজিরা। দেশটি অর্থনৈতিকভাবে স্মরণকালের মধ্যে বাজে সময় পার করছে। খাদ্য অপ্রতুল হয়ে পড়েছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে ১১ শতাংশ। এদিকে আইএমএফ থেকে ১৯০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছে তিউনিসিয়ার সরকার।