‘দেজা ভ্যু’ বোধ হয় একেই বলে। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। দুই বছর পর সেই একই ঘটনা যেন ফিরে এল নতুন করে। এবার কোপা আমেরিকার শেষ আটেও টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিতে হলো ব্রাজিলকে।
উরুগুয়ের বিপক্ষে আজ নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য সমতা থাকার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। বিশ্বকাপের মতো এবারও পেনাল্টি শুটআউটে ব্রাজিল হারল ৪–২ গোলে। কিন্তু শিরোপা জিততে এসে কেন ব্রাজিলের এমন ভরাডুবি? ব্রাজিলের হারের কারণগুলো তুলে ধরা হলো এখানে—
ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের অনুপস্থিতি
কোপায় চোটের কারণে নেইমার না থাকায় ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই ছিলেন ব্রাজিলের অন্যতম ভরসা। কিন্তু সেই ভিনিসিয়ুসই গ্রুপ পর্বের শেষ দুই ম্যাচে কার্ড দেখে কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য নিষেধাজ্ঞায় পড়েন। তাঁর না থাকা ব্রাজিলকে আজ বেশ ভুগিয়েছে। বিশেষ করে বাঁ প্রান্তে আজ ভিনিসিয়ুসকে ব্রাজিলের প্রয়োজন ছিল। চাপের মুখে দারুণ কিছু করে ম্যাচ বের করে আনার সমার্থ্য আছে তাঁর।
বিশেষ করে সেরা ছন্দের ভিনিসিয়ুস বিশ্বের যেকোনো প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারেন। গ্রুপ পর্বে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে সেরা ছন্দে থাকা ভিনিসিয়ুস একাই ম্যাচ বের করে এনেছিলেন। কিন্তু দর্শকদের সারিতে বসে আজ দলকে প্রায় পুরোটা সময় ভুগতে দেখেছেন ভিনি। হয়তো ভাবছিলেন, কলম্বিয়ার বিপক্ষে অপ্রয়োজনীয় সেই হলুদ কার্ডটি না দেখলে আজকের ফলটা অন্য রকম হলেও হতে পারত।
একক নৈপুণ্যের অভাব
আজ ব্রাজিলের বিপক্ষে শুরু থেকে শরীরনির্ভর ফুটবল খেলেছে উরুগুয়ে। নিজেদের খেলাটা খেলার চেয়ে যেন ব্রাজিলের খেলা নষ্ট করাতেই বেশি মনোযোগী ছিল তারা। এমন পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের জন্য স্বাভাবিক ফুটবল খেলাটা রীতিমতো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবে যেকোনো কঠিন অবস্থা থেকে ম্যাচ বের করে আনাই তো বড় দলগুলোর কাজ।
তেমন কিছু করতে আজ ব্রাজিলের প্রয়োজন ছিল একক নৈপুণ্যের প্রদর্শনী। সে জন্য যেকোনো একজন খেলোয়াড়ের এগিয়ে এসে দারুণ কিছু করতে হতো। দারুণ কিছু আক্রমণ, অসধারণ ক্রস কিংবা ফ্রি–কিকে পাওয়া সুযোগগুলো কাজে লাগালে এই ম্যাচের চিত্র বদলে যেতে পারত। কিন্তু রদ্রিগো, রাফিনিয়া কিংবা এনদ্রিকরা তেমন কিছু করতে পারেননি। মাঠে পুরোটা সময় নিজেদের ছায়া হয়ে ছিলেন তারা।
স্নায়ুচাপ সামলাতে না পারা
বিশ্বকাপে পেনাল্টি শুটআউটে ব্যর্থ হয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু গত দুই বছরেও পেনাল্টি শটে বিশেষ কোনো উন্নতি করতে পারেনি দলটি। এবারও পেনাল্টি নিতে গিয়ে স্নায়ুচাপ সামলাতে ব্যর্থ এদের মিলিতাও এবং দগলাস লুইস। মিলিতাওয়ের নেওয়া প্রথম শটটি ঠেকিয়ে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক রোচেত আর দগলাস লুইস মেরেছেন পোস্টে। পেনাল্টি শুটআউট ভাগ্যের পরীক্ষা হলেও শেষ পর্যন্ত এটি আসলে স্নায়ুচাপ সামলানোর পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে ব্রাজিল। আজও টাইব্রেকারেই ডুবেছে ব্রাজিলের তরি।
সমন্বয়হীনতা
কোপায় গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দলের বিপক্ষে ভালো সমন্বয় দেখিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু কলম্বিয়া ও উরুগুয়ের প্রেসিং ফুটবলের সামনে সমন্বয় ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। কলম্বিয়া ম্যাচের মতো আজও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঠিকঠাক পাস দিতে পারেননি ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা। একই সঙ্গে বারবার বলের দখলও হারিয়েছে তারা। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিল যেখানে ৪০৭ পাসের ৮৬ শতাংশই ঠিকঠাক দিয়েছিল, আজ সেটি নেমে এসেছে ৮০ শতাংশে।
এমনকি সামগ্রিকভাবেও সেদিনের চেয়ে আজ প্রায় এক শ পাস কম দিয়েছে তারা। যা ম্যাচে ভুগিয়েছে ব্রাজিলকে। এ ছাড়া সুযোগ তৈরি করতেও ব্যর্থ হয়েছে ব্রাজিল। পুরো ম্যাচে মাত্র দুটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে তারা—বলা বাহুল্য, দুটিই মিস করেছে। ধারাবাহিকভাবে সুযোগ তৈরি করতে না পারার কারণে অ্যাটাকিং থার্ডে কোনো হুমকিও সৃষ্টি করতে পারেনি দরিভাল জুনিয়রের দল। যা সব মিলিয়ে আজ ব্রাজিলের হারের কারণ হয়েছে।