২০০২ বিশ্বকাপে রোনালদো নাজারিওর জাদুতে জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপ জয়—ব্রাজিলের বিশ্বকাপ সাফল্যের গল্পটা সেখানেই থেমে আছে। এরপর প্রতিবারই ফেবারিট হিসেবে বিশ্বকাপে এসে ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হয়েছে ব্রাজিলকে। ২০০৬ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ধারাটা এমনই।
এরপর বিশ্বকাপ জিততে যে খেলোয়াড়ের ওপর ব্রাজিল সবচেয়ে বেশি নির্ভর করেছে, তিনি নেইমার। ব্যক্তিগত রেকর্ডের ঝুলি ভরিয়ে চললেও ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়ার স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেছে তাঁর। এবার কি পারবেন নেইমার?
সময়ই সে উত্তর দেবে। সেটি পারলে অন্য এক উচ্চতায় পৌঁছাবেন পিএসজির এ ফরোয়ার্ড। তবে নেইমার অবশ্য বলছেন, ফুটবল ইতিহাসে তাঁর নামটা এরই মধ্যে খোদাই করা হয়ে গেছে।
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যক্তিগত জীবন, ফুটবল এবং স্বপ্নের ঝাঁপি খুলে বসেছিলেন নেইমার। ব্রাজিলের হয়ে খেলা নিয়ে নেইমার বলেছেন, ‘ব্রাজিলের হয়ে খেলাটা আমার স্বপ্ন ছিল। শুধু জাতীয় দলে খেলাটাই একটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। এটা এমন একটা স্বপ্ন, যা আমি কেবল নিজের জন্য দেখিনি, এটা আমার সেসব বন্ধুর জন্যও, যাঁরা পেশাদার ফুটবল খেলতে পারেননি। আর আমার বাবা, দাদা এবং পরিবারের জন্য তো বটেই।’
ফুটবলশৈলী নিয়ে প্রশংসিত হওয়ার পাশাপাশি নেইমারকে নিয়ে সমালোচনাও হয় অনেক। সমালোচনা নিয়ে এই ফুটবল তারকা বলেছেন, ‘এটা দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করছে। যেভাবে আপনি দেখছেন, তার ওপর। আমি আজ ব্রাজিল দলে খেলি বলে আমাকে ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই শুনতে হয়েছে। আর এমন অনেক কিছুও শুনতে হয়, যার দিকে ফিরে তাকালে মনে হয়, এসব অর্থহীন। নিজের যত্ন না নিলে আমি কখনো ক্যারিয়ারে যে পর্যায়ে আছি বা যে পরিসংখ্যান আমার পক্ষে আছে, তা অর্জন করতে পারতাম না। অনুশীলন ছাড়া কিংবা জেতার জন্য লড়াই ছাড়া এটা অর্জন সম্ভব হতো না। এ কারণে অন্যায় সমালোচনা আমাকে কষ্ট দেয়।’
কীভাবে পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে ঠিক রাখেন, তা জানাতে গিয়ে নেইমারের ব্যাখ্যা, ‘কারণ আমি কিসের ভেতর দিয়ে যাই, তা কেউ জানে না। কেউ জানে না, আমার দিনগুলো কেমন কাটে। সেখানে আমার জন্য কেউ থাকে না। যাঁরা আমার কাছের মানুষ, যাঁরা আমাকে চেনেন, তাঁরা জানেন, ভালো করতে আমি কী করি। শতভাগ দেওয়ার জন্য এবং আঘাত না পাওয়ার জন্য চেষ্টা করে যেতে হয়। চোট আসে; এটা খেলোয়াড়দের জীবনের অংশ। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সেই চোট এমন সময় আসে, যখন আপনি চান না। এটা খেলারই অংশ।’
নিজেকে ফিট রাখার মধ্য দিয়েই খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন জানিয়ে নেইমার বলেছেন, ‘আমার হাতে কিছু নেই। আমি প্রতিদিন নিজের যত্ন নিই, প্রতিদিন নিজেকে প্রস্তুত করি। ফুটবল খেলার জন্য যা দরকার, তা আমাকে করতে হয়। যেদিন থেকে আমি নিজের যত্ন নিতে পারব না, সেদিন থেকে আর ফুটবল খেলব না। মানুষকে বুঝতে হবে, তাঁরা যেমন কল্পনা করেন, আমার জীবন তেমন নয়।’
জীবন যত চাপ বা ঝড় আসুক, সব সময় আনন্দে থাকতে পছন্দ করেন জানিয়ে নেইমার যোগ করেন, ‘আমি আনন্দে থাকা মানুষ। আমি নিজেকে নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করি না। আমি নিজেকে সেরা বলতে পছন্দ করি না। আমি ফুটবল খেলতে পছন্দ করি, জিততে পছন্দ করি। প্রতিদিন আরেকটু ভালো হতে চাই। আমি সতীর্থদের সাহায্য করতে চাই। এটাই আসল। আমি আশা করি, আমার নামটা ফুটবল ইতিহাসে খোদাই করা আছে। যদি ফুটবলে না–ও হয়, কারও জীবনে নিশ্চয়ই আছে।’